তামিমের অবসরে মর্মাহত আশরাফুল

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হতাশাজনক হারের পর আচমকা ব্যক্তিগত সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। সেখানেই অশ্রুসিক্ত নয়নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম। তার এমন সিদ্ধান্তে মর্মাহত হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। একইসঙ্গে তামিমের সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অসাধারণ’ উল্লেখ করে তার ‘ফিরে আসার’ আশা প্রকাশও করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সেখানে কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। তামিমের এমন সিদ্ধান্ত একইসঙ্গে হতবাক এবং শকড হয়েছেন আশরাফুল। তিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন। তামিমের হঠাৎ বিদায়ের পর সেখান থেকেই লাইভে আসেন আশরাফুল। ওয়ানডে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অ্যাশ বলছেন, ‘গত এক বছর ধরেই শুনছিলাম, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের আশা নিয়ে ভারতে যাচ্ছে- এমন ঘোষণা দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠেই দেখলাম সে অবসর নিয়ে ফেলেছে। যদিও এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস তার পুরোনো। তবুও অবাক হয়েছি, তা সত্ত্বেও বলব সে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আর ২-১টা ম্যাচ হারলে তাকে বাজেভাবে অধিনায়কত্ব ছাড়তে হতো। তার সাম্প্রতিক ফর্ম থেকে সাধারণ মানুষ সেই ২০০৭ সালের তামিমকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি শকড। আর হয়তো ৬ থেকে ৭টা ম্যাচ পরেই বিশ্বকাপ। তার আগেই এমন সিদ্ধান্ত। জীবনটাই এরকম, তাকেও হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের সব ফরম্যাটে তিনি টপ স্কোরার ছিলেন এবং ২৫টা সেঞ্চুরি অবশ্যই বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। আমার মনে হয়না সে ফিরে আসবে, যেহেতু বিশ্বকাপের আগেও আর তেমন সময় নেই।’ আশরাফুল বলছেন, আমার জুনিয়র হলেও তুমি আমার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছ। যেটা সিনিয়র হয়েও আমি এবং মাশরাফি এখনও পারিনি। তামিমের বিগ হার্ট, ওর মতো বিগহার্ট মানসিকতা কারও নেই। তার এমন দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব আসলেই অসাধারণ। এর আগে অনেকটা শোকার্ত মুখেই লাইভে আসেন আশরাফুল। শুরুতে তামিমের ছোটবেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ছোটোবেলা থেকে আমি তামিমকে চিনি। সে সময় তার ভাই নাফিস ইকবালের সঙ্গে খেলছিলাম, যখন সে হাফপ্যান্ট পরে আসত। পরে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে জাতীয় দলে আসে। এর আগে ডিওএইচএসের হয়ে এক ম্যাচে ১৮৮ রান করেছিল, আমার মনে আছে। তখন থেকেই আমরা জানতাম একজন ড্যাশিং ওপেনার আসছে বাংলাদেশে। প্রথমে অফসাইডে খেলত বেশি, পরবর্তী সময়ে জেমি সিডন্স এবং সালাউদ্দিনের মাধ্যমে সে লেগসাইডে খেলতেও অভ্যস্ত হয়।’ তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের সামনের পথটা কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করেন আশরাফুল। তবে তার ফিরে আসার স্বপ্নও দেখছেন তিনি, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য পথটা কঠিন হয়ে গেল। যখন আমরা তৃতীয় ওপেনার খুঁজছিলাম, তার ভেতরই অভিজ্ঞ একজনকে হারালাম। তবে আমি আশা করব তামিম ইজিলি আরও ৩ থেকে ৪ বছর ঘরোয়া লিগে খেলবে এবং আন্তর্জাতিকেও ফিরতে পারেন। তার বয়স তো এত বেশি হয়নি আসলে, অন্তত অবসর নেওয়ার মতো নয়। কিছুদিন রেস্ট নিয়ে তিনি ফিরতেও পারেন। যাইহোক, অল দ্য বেস্ট তামিম।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ড্যাশিং ওপেনারের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশরাফুল, ‘তামিম তোমাকে ধন্যবাদ, গত ১৯টা বছর তুমি আমাদের অনেক ইন্টারটেইন করেছ। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমে ভারতের দেওয়া ১৯১ রানের জবাবে ডমিন্যান্ট করার মানসিকতা দেখিয়েছ। এরপর বাংলাদেশের হয়ে অনেক অর্জন তোমার, আমার জুনিয়র হলেও তুমি আমার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছ। যেটা সিনিয়র হয়েও আমি এবং মাশরাফি এখনও পারিনি। তামিমের বিগ হার্ট, ওর মতো বিগহার্ট মানসিকতা কারও নেই। তার এমন দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব আসলেই অসাধারণ।’