একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে নাস্তানাবুদ করলেও তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হোঁচট খেয়েছে টাইগাররা। দুর্যোগপুর্ণ আবহাওয়ায় বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা। এরমধ্যে মরার উপর খরার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে অধিনায়ক তামিম ইকবালের আকষ্মিক অবসরের সিদ্ধান্ত। দলপতির এমন সিদ্ধান্তে মর্মাহত হয়েছে অনেক সতীর্থ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন বার্তায় তারা সেটি প্রকাশ করেছেন। তবে ভক্তদের জন্য খুশির খবর হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আবারও জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরেছেন তামিম। শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানান দেশসেরা এ ওপেনার। তবে আপাতত তিনি দেড় মাসের বিশ্রামে থাকবেন বলে জানা গেছে। তিনি অধিনায়ক হয়েই ফিরবেন এশিয়া কাপ দিয়ে। তাই তামিমকে ছাড়াই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আজ আফগানদের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ দল। সিরিজে সমতা ফেরাতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই লাল সবুজ দলের সামনে। এ ম্যাচে হারলে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ চলে যাবে নবি-রশীদদের পকেটে। তাই এই ম্যাচটি ‘মরা বাঁচার লড়াই’ ম্যাচে পরিণত হয়েছে। যদিও ঘরের মাঠে দ্বিপাক্ষীক সিরিজে দুর্দান্ত রেকর্ড রয়েছে স্বাগতিকদের দখলে। ২০১৫ সাল থেকে ঘরের মাঠে মাত্র দু’টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। দু’বারই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারে টাইগাররা। কিন্তু রেকর্ডটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে অধিনায়ক তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসর শুধুমাত্র ক্রিকেট জগতকে অবাক করেনি, খেলোয়াড়দেরও অনেক বেশি আবেগপ্রবণ করেছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মতে, সিরিজের মাঝে অধিনায়কের হঠাৎ অবসর সবসময়ই মানসিক চাপ। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কিভাবে এই চাপকে কাটিয়ে উঠতে পারে। মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে প্রথম ম্যাচ হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কারনে দৈর্ঘ্য কমে আসা ম্যাচে ৪৩ ওভারের ৯ উইকেটে ১৬৯ রান করে বাংলাদেশ। তামিমসহ বেশিরভাগ ব্যাটাররা খারাপ শট খেলে নিজেদের বিপদ ডেকে আনেন। মাত্র ১৩ রান করেন তামিম। বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে রেকর্ড ৫৪৬ রানে হারা আফগানিস্তান বৃষ্টি ইস্যুকে মাথায় রেখে পরিকল্পনামাফিক ক্রিকেটখেলেছে। উইকেট না হারানোর দিকে মনোযোগী ছিলো আফগানরা। বৃষ্টিতে ম্যাচটি ভেস্তে যাবার আগে ২১ দশমিক ৪ ওভারে ২ উইকেটে ৮৩ রান করে তারা। বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে এগিয়ে ছিলো আফগানরা। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয় এবং তামিমের অবসরের ইস্যুর পর বাংলাদেশ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারে কি-না এটাই এখন দেখার বিষয়। নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের অবর্তমানে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন লিটন দাস। শুক্রবার বিসিবির আনুষ্ঠানিক এ ঘোষণার পর ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন লিটন। তামিমের না থাকা নিয়ে লিটন জানালেন, দলের পরিবেশে প্রভাব পড়বে না। আগের মতোই থাকবে। লিটন বলছিলেন, ‘উনি আগের ম্যাচে ছিলেন, এই ম্যাচে নেই। সামহাউ যদি ইনজুরি হতো আমরা কিন্তু উনাকে ছাড়াই খেলতাম। আমার কাছে মনে হয় না এরকম কিছু পরিবর্তন (পরিবেশে) আসবে। আগের মতোই থাকবে সব কিছু।’ ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানের কাছে নিয়মিতই বড় ইনিংসের প্রত্যাশার কথা জানান লিটন। ‘কোনো ক্রিকেটার যখন এভাবে (হৃদয়ের মতো) পারফর্ম করে, এটা তো দলের জন্য ভালো। আমি চাইব, ও যেন নিজের পারফরম্যান্সটা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে পারে। এর থেকে বড় আর কী!’ তিনি বলেন, ‘এখন আমার হাতে এই দল। আগামী ম্যাচে যদি ও একশ মারে, অধিনায়ক হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া তো আর থাকবে না। আমি চাইব, হৃদয় যেন ওই জায়গাটায় ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে থাকে এবং বড় বড় রান করতে থাকে।’ এখন পর্যন্ত সবগুলো ইনিংসই পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন হৃদয়। তাকে এই পজিশন ছেড়ে দিতে ছয়ে নেমে গেছেন মুশফিকুর রহিম। ভবিষ্যতে কখনও হৃদয়কে আরও ওপওে দেখার সম্ভাবনারও উড়িয়ে দেননি লিটন। ‘(হৃদয়কে আরও ওপওে খেলানো) ম্যাচের ওপর নির্ভর করবে, বোলারের ওপর নির্ভর করবে। যদি আমাদের মনে হয়, অবশ্যই।’ এদিকে, দলের স্পিনারদের পারফরমেন্সে খুশি আফগানিস্তান কোচ জোনাথন ট্রট। এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জিততে পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা দল অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছেন তিনি। ট্রট বলেন, ‘আমি মনে করি সম্প্রতি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অনেক ভালো করার পর আমাদের এখানে আসাটা ভালো হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা সবসময়ই কঠিন। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেয়ার পর আমাদেও পেসাররা নতুন বলে ভালো করতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের স্পিনাররা দারুন করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্পিনারদের দক্ষতা ফুটে উঠেছে। এমন একটি উইকেটে যেখানে আমরা ভেবেছিলাম, স্পিনের চেয়ে পেস বোলিং ভালো হবে।’ প্রথম ওয়ানডেতে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাপেসার ফজলহক ফারুকি দ্বিতীয় ম্যাচের আগে ফিট হয়ে উঠবেন বলে জানান ট্রট। পেশীর ইনজুরির কারনে আগের ম্যাচে বোলিংয়ে নিজের শেষ দুই ডেলিভারি করতে পারেননি তিনি।