তামিমকে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নিয়ে গেলেন মাশরাফি

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

শতভাগ ফিট না হয়েও তামিম ইকবাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। গতকাল বুধবার বৃষ্টিবিঘিœত সে ম্যাচে হেরে যায় টাইগাররা। পরের দিন বৃহস্পতিবার টিম হোটেলে গণমাধ্যমকে ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। ৩০ ঘন্টার ব্যবধানে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পরই অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন দেশসেরা এই ওপেনার। তবে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন তামিমের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করানোটা মোটেও সহজ ছিল না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে দৃশ্যপটে হাজির হন দেশের ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার মাধ্যমেই তামিমকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অভিমান ভেঙে নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন ৩৪ বছর বয়সি বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজে না খেললেও দেড় মাস বিরতি দিয়ে আবার মাঠে ফেরার কথা জানিয়েছেন লাল-সবুজ জার্সিতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এই ব্যাটার। তামিমকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল মাশরাফির। তার অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর আবেগাপ্লুত হয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। সেখানে তিনি তামিমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কোনো চাপের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না। এসব প্রেক্ষাপট নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছিলেন। তামিম তো সবকিছু থেকে দূরে ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাই আমাকে বলেছেন ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমি তাকে বলেছি যে, তামিমকে আমি নিয়ে আসছি আপনার কাছে। এরপর তামিমকে আমি বলেছি যে, তুই গিয়ে মনের কথা বল। প্রধানমন্ত্রীর যে কথা আছে, সেটা তিনি বলবেন। তারপর যে সিদ্ধান্ত হওয়ার, হবে। আমার দায়িত্ব ছিল ওকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া।’ গত শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়ে তামিম গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন মাশরাফি। এর কিছুক্ষণ পরই গণভবনে যান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন। এরপর আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে জাতীয় দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। তামিমের সিদ্ধান্ত বদলের প্রসঙ্গে ম্যাশ বলেন, ‘এর চেয়ে ভালো সমাধান আমি আশা করিনি। তামিম বিরতি চেয়েছে, সেটা নিক। পুরো ফিট হয়ে, মানসিকভাবে তরতাজা হয়ে ফিরুক। কিন্তু এভাবে অবসরের মানে নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুই হয়। কোচের সঙ্গে ঝামেলা হতে পারে, বোর্ডের সঙ্গে হতে পারে। আমার ২০ বছরের ক্যারিয়ার আর অধিনায়কত্বের ৫ থেকে ৬ বছরে তো কম হয়নি এসব। সব দলেই কমবেশি এসব হয়। এসব সামলেই চলতে হয়।’ তামিমের জাতীয় দলে ফেরা তো হলো। এখন পরের কাজটা তামিমকেই করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশকে ৫০টি ওয়ানডে জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফি। তার ভাষায়, ‘আমার কথা হলো, সে যেন ট্রেনিং করে পুরো ফিট হয়ে আসে। দায়িত্ব এখন পুরোপুরি ওর।’ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ওকে বলেছি, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান করছিস, তোর ক্যারেক্টারে সেই দাপট থাকা উচিত। এত আমতা আমতা করে, এত সংশয় নিয়ে ক্রিকেট খেলা যাবে না। ক্রিকেটে অভিমানের কোনো মূল্য নেই। এভাবে অবসর নিলে তিন মাস পর তোকে কেউ মনে রাখবে না। মনে রাখার মতো কিছু করতে হবে।’