বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে চাই একটি জয়

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এম জাফিউল ইসলাম

দুর্দান্ত দাপটে একমাত্র টেস্ট জিতে ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফেভারিটই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ম্যাচে হারের পর বদলে যায় পুরো আবহ। পরদিন আচমকা সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। ৩০ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিদ্ধান্ত বদলালেও সিরিজে আর ফেরেননি দেশসেরা এ ওপেনার। তবে তামিম ইস্যুতে দলের ভেতর যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয় তা মাঠের পারফরম্যান্সে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা আর পারফরম্যান্সই তার বড় প্রমাণ। ফল ১৪২ রানের বড় হার। টানা দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খুইয়ে স্বাগতিকরা এখন হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায়। বাংলাদেশ দলের এখন সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন তা হলো একটি জয়। তাহলেই বদলে যাবে দলের পরিবেশ আর ফিরে পাবে আত্মবিশ্বাস। সে লক্ষ্য নিয়েই আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে আফগানদের মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা। শেষ ওয়ানডের আগে অনুশীলনের সুযোগই মেলেনি স্বাগতিক দলের। গত রোববার বিশ্রামে কাটিয়ে দেওয়ার পর গতকাল সোমবার সকাল থেকে ছিল দলের অনুশীলন। তবে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সে পরিকল্পনা ভুন্ডল হয়েছে। দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ নিক পোথাস। এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ জানান, হারলেও দলের আবহে হেরফের হচ্ছে না, শেষ ম্যাচ জিততে সব প্রস্তুতিই আছে তাদের, ‘আমরা পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা বলছি। এ ছেলেরা খুবই পেশাদার তাদের কাজ নিয়ে। আমাদের খুব বেশি তাতিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। তারা সব সময়ই প্রস্তুত। এরা দুর্দান্ত এক দল খেলোয়াড়।’ মুলত আফগানিস্তানের স্পিনারদের কাছে দুই ম্যাচেই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন লিটন-শান্তরা। বিশেষ করে মুজিব-উর-রহমান এবং রশিদ খানের বলে যেন কিছুই করার ছিল না কারোরই। এই দুই স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। আরেক স্পিনার মোহাম্মদ নবীও দুই ম্যাচে পেয়েছেন দুই উইকেট। পোথাস বলেন, ‘সত্যি বলতে বর্তমানে দুনিয়ার সেরা স্পিন অ্যাটাক আফগানিস্তানের। তাদের ৩ স্পিনার সাদা বলের ক্রিকেটে প্রচুর ম্যাচ খেলে। এখন সারা বিশ্বেই খেলে বেড়াচ্ছে। তাদের মতো খেলোয়াড় থাকা একজন অধিনায়কের স্বপ্ন।

তবে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা আমাদের জন্য এডভান্টেজ। কারণ এটা আমাদের আরো ভালো করে তুলবে। এ লেভেলের স্পিন মোকাবিলা করার পর আপনি যে কাউকে মোকাবিলা করতে পারবেন।’ শুধু এবার নয়, চট্টগ্রামে গত বছরের সিরিজেও ফারুকির পাশাপাশি আফগানিস্তানের স্পিনাররা পরীক্ষায় ফেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। আফিফ ও মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য জুটিতে সেবার প্রথম ম্যাচ জিতে পরে সিরিজ জেতে স্বাগতিকরা। এবার আর হয়নি রক্ষা। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শেষ সিরিজ জয়ের আশা। বাংলাদেশের সহকারী কোচের মতে, সমস্যাটা শুধু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরই নয়। ‘আমার মতে, প্রশ্নটা এমন নয় যে, এই স্পিনারদের পড়তে আমরা ভুগছি। প্রশ্নটা হলো, পুরো বিশ্ব কতটা ভুগছে। র‌্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থানেই বোঝা যায়, বিশ্বের সবাই তাদের বল পড়তে ভুগছে।’ ঘরের মাঠে আফগানদের কাছে এমন হারে প্রশ্ন উঠছে ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে। বিষয়টা নিক পোথাসের মনে ধরেনি। তাইতো অকপটে বুঝিয়ে দিলেন, মাত্র দুই ম্যাচ দিয়ে বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের বিবেচনা করা উচিত না।

‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে গিয়েছি যে আমরা ইংল্যান্ড, ভারত এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। আমরা দুটি খেলার মাধ্যমে বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের বিচার করছি। লম্বা সময়ের খেলা বিবেচনায় এনে আমাদের বিচার করা উচিত। মাত্র দুটি খেলা দিয়ে নয়।’ যেখানে বাংলাদেশ আসন্ন বিশ্বকাপে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে, সেখানে আফগানদের কাছে ঘরের মাঠে এমন নাস্তানাবুদ হওয়ায় প্রশ্নের সুযোগ করে দিয়েছে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হার। আর দ্বিতীয়টি ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে হারে লাল সবুজ দল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেখান আফগান ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে ছুটেছে রানের ফোয়ারা সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। দ্বিতীয় ম্যাচে আফগান দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির বিপরীতে বাংলাদেশের একটি ফিফটি (মুশফিকুর রহিম, ৬৭)। সবমিলিয়ে অলআউট ১৮৯ রানে। আর প্রথম ম্যাচে একমাত্র ফিফটি তাওহীদ হৃদয়ের। ওপেনিং থেকে শুরু করে লেজের ব্যাটসম্যান, দুই ম্যাচেই ছিল ব্যর্থতার মিছিল। এখন বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো রশিদদের সামলানোর উপায় খুঁজে বের করা। যা হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ মনে করেন, শুধুমাত্র হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর জন্যই নয়, আসন্ন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপেও ভালো পারফরম্যান্স করতে দলের ঘাটতিগুলো যত দ্রুত সম্ভব কাটিয়ে উঠা উচিত। মিরাজ বলেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচে আমাদের যা ঘাটতি ছিল এবং আমরা যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলো কাটাতে আমরা আরো বেশি সতর্ক হয়ে যাব। কারণ আমাদের সামনে বড় সিরিজ আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে তাদের বিপক্ষে আমাদের খেলা আছে এবং আমি আশা করি আমরা ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।’

এদিকে হাঁটুর ইনজুরির কারণে তৃতীয় ওয়ানডে থেকে ছিটকে পড়েছেন পেসার এবাদত হোসেন। এজন্য একাদশে একটি পরিবর্তন নিশ্চিত হলেও শেষ ম্যাচে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করতে পারে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কোচ জোনাথন ট্রট জানান, আগামী এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ পর্যন্ত জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আবেগে ভেসে যাবে না তারা। তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমাদের নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। পরের ম্যাচেও আমাদের ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি আবেগপ্রবণ বা উচ্ছ্বসিত হওয়া যাবে না। যদি আমরা এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একটি দল হিসাবে উন্নতি করতে চাই, তবে এই সাফল্য নিয়ে আমাদের আত্মতুষ্টি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আপনি যখন প্রতিযোগিতা এবং ট্রফির লড়াইয়ে যাবেন, তখন আপনাকে জয়ের ধারায় থাকতে হবে।’ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ২টায়। ৯৯