ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাফুফের কোর্স

বিদেশিরা পাস, দেশের শীর্ষ কোচরা অনুত্তীর্ণ

বিদেশিরা পাস, দেশের শীর্ষ কোচরা অনুত্তীর্ণ

এশিয়ার সর্বোচ্চ কোচিং সনদ এএফসি প্রো লাইসেন্স পেতে কোচরা প্রচুর অর্থ খরচ করেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) দুই বছর আগে দেশে এই কোর্স আয়োজন করেছে। সংস্থাটির টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির তত্ত্বাবধায়নে হওয়া এই কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় কোচসহ অনেক বিদেশি কোচও। সব বিদেশি কোচ কোর্সটিতে উত্তীর্ণ হলেও বাংলাদেশের শীর্ষ কোচদের অনেকেই অনুত্তীর্ণ এবং চারজনের ফলাফল বিলম্বিত করা হয়েছে। ফলে এই কোর্সের কার্যকারিতা নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ১২ জন শীর্ষ কোচ এই কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন। তবে মাঝপথে নাম প্রত্যাহার করে নেন বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি। বাকি ১১ জনের মধ্যে শুধু বসুন্ধরা কিংসের আরেক সহকারী কোচ এসএসম আসিফুর রহমানই একমাত্র উত্তীর্ণ হয়েছেন।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী শিবু, হাসান আল মাসুদ, আবু ফয়সাল আহমেদ, রাহেল, জাতীয় নারী দলের সদ্য সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও সাইফুল বারী টিটুকে অনুত্তীর্ণ এবং মারুফুল হক, জাকারিয়া বাবু, জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু ও মাসুদ পারভেজ কায়সারের ফলাফল বিলম্বিত দেখানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উয়েফা এ লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল হক। দেশের এ শীর্ষ কোচ বাফুফের তত্ত্বাবধায়নে প্রো-লাইসেন্সে ফলাফল বিলম্বের মধ্যে পড়ায় বিস্মিত অনেকেই। প্রো-লাইসেন্স কোর্স পরিচালনা করা বাফুফের ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলি ফলাফল প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘যারা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা অনুত্তীর্ণ। যাদের কাজের সাপেক্ষে আরো ডকুমেন্টস দরকার তাদের ফলাফল বিলম্বিত পর্যায়ে রয়েছে।’ দেশের শীর্ষ কোচদের কেউ ফেল কেউ ফলাফলে অপেক্ষায় সেখানে বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ আসিফ উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে ফলাফল প্রক্রিয়া নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে সমালোচনা হলেও পল স্মলির ব্যাখ্যা, ‘এ কোর্সে প্রত্যেকের কাজ আলাদা আলাদা মূল্যায়ন হয়েছে।

যে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজ জমা দিয়েছেন সেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখানে কে কোন দেশের, কার কেমন অভিজ্ঞতা এগুলো গণ্য হয়নি।’ বাংলাদেশি প্রশিক্ষকরা পাঁচ হাজার ডলার ও বিদেশিরা সাত হাজার ডলার ফি দিয়ে এই কোর্স করেছেন। দুই বছরে পাঁচটি মডিউলে এ কোর্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিদেশি কোচরা কোর্স করতে বাংলাদেশে এসেছেন একাধিকবার। ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অনেক কোচকেই ভিন্ন দেশের ক্লাব পরিদর্শন করতে হয়েছে। অংশগ্রহণ ফি, ভ্রমণ ব্যয়, সময় এত কিছুর পরেও বাংলাদেশের কোচরা অনুত্তীর্ণ ও ফলাফল বিলম্বে পড়ায় যেমন অসন্তোষ রয়েছে এর চেয়েও বেশি ক্ষোভ অনেক বিদেশি কোচ কম যোগ্যতা ও পারফরম্যান্স করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রের খবর, দেশি কোচরা ডেডলাইনের দুই-একদিন আগে কাজ জমা দিলেও কোর্স পরিচালক বিলম্ব হিসেবে চিহ্নিত করলেও বিদেশিদের অনেক কিছুই শিথিলযোগ্য ছিল। এএফসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় দলে কোচিংয়ের জন্য এএফসি প্রো লাইসেন্স লাগবে।

এ সনদ থাকলে সেই কোচ এশিয়াসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে কোচিং করানোর যোগ্যতা অর্জন করবেন। বাংলাদেশের শীর্ষ কোচদের অনুত্তীর্ণ ও ফলাফল বিলম্বিত করানোর পেছনে অনেকের ধারণা জাতীয় দলে যেন বিদেশি কোচিং স্টাফ নির্ভরতাই যেন থাকে। ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন, ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এ কোর্স পরিচালনা হয়েছে। প্রতি মডিউলের পারফরম্যান্স আমি এএফসিতে প্রেরণ করেছি, সেখান থেকেই চূড়ান্ত ফলাফল হয়েছে।’

কোচিং সনদ প্রোগ্রামগুলো বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির অধীনে। টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী প্রো লাইসেন্সের ফলাফল সম্পর্কে অবগত নন বলে জানালেন, ‘টেকনিক্যাল বিভাগ থেকে আমাকে এখনো এই ফলাফল সম্পর্কে কিছু জানায়নি। অন্যান্য কোর্সের ক্ষেত্রে সমাপনী দিনে সনদ প্রদানে শুধু আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।’ বাফুফে থেকে প্রদত্ত কোচিং সনদে বেতনভুক্ত টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর, সাধারণ সম্পাদকের নাম ও স্বাক্ষর থাকলেও টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যানের নাম এবং স্বাক্ষর থাকে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত