বৃষ্টির শঙ্কা উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি উৎসবে মেতেছে সিলেটবাসী

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

দুপুর গড়িয়ে বিকাল। আকাশে সারি সারি মেঘের ভেলা। এর ফাঁকেই ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যের আলো। এমন রোদের মাঝেই ঝরছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। যে কোনো সময় নামতে পারে আষাঢ়ে ঢল। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই দর্শকদের। কারণ, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তাদের দৃষ্টি সেদিকেই। অথচ গত মার্চেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল দর্শক খরা। আয়ারল্যান্ড সিরিজে স্টেডিয়ামের অধিকাংশ গ্যালারিই ছিল খালি। টিকিট নিয়ে ছিল না কোনো কাড়াকাড়ি। কিন্তু চার মাস পর পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানদের ম্যাচ দেখতে মাঠে ফিরেছেন দর্শকরা। তাতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি। অথচ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ম্যাচ চলাকালীন সময়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। তার উপর আগের রাতেও হয়েছে বৃষ্টি। সকাল থেকে আকাশ মেঘে ঢাকা। ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কা তো ছিলই। কিন্তু এসব শঙ্কাতেও আটকে থাকেননি দর্শকরা। সময় গড়ানোর সঙ্গেসঙ্গে স্টেডিয়াম প্রান্তে ভিড় জমাতে শুরু করেন সমর্থকরা। ম্যাচ শুরুর আগেই ভরে ওঠে গ্যালারি। এদিন স্টেডিয়ামের গ্যালারি যে পূর্ণ থাকবে তার ইঙ্গিত মিলেছিল আগের দিনই। টিকিট কাউন্টারে ছিল উপচেপড়া ভিড়। একটি টিকিটের জন্য হাহাকারও শোনা গিয়েছে সমর্থকদের। দুইশ’ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা সব ধরনের টিকিটেরই ছিল আকাশচুম্বী চাহিদা। এদিনও টিকিট কাউন্টারে একটি টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা চালান দর্শকরা। তাদের অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে। চারিদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। জার্সি ও পতাকা বিক্রেতাদের চাহিদাও ছিল অনেক। অনেকে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে জার্সি কিনে পরছেন। কেউবা গায়ে আঁকছেন দেশের পতাকা। মূলত শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ ছিল স্থানীয় সমর্থকদের। তার উপর এবার আর ভর দুপুরে খেলা নেই, যেমনটা ছিল আয়ারল্যান্ড সিরিজে। ম্যাচ শুরু সন্ধ্যা ৬টায়। আর প্রতিপক্ষও অনেকটাই চেনা। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবিরা বিপিএলের সুবাদে এই মাঠে খেলেছেন অনেকবারই। সবমিলিয়ে এবার দর্শকদের আগ্রহ যেন একটু বেশি। স্থানীয় ছেলে সুমন সিলেটে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সব সিরিজেই কোনো না কোনো ম্যাচ দেখেছেন। সমর্থকদের তুমুল আগ্রহ নিয়ে বললেন, ‘আয়ারল্যান্ড যখন এসেছিল তখন রোজা ছিল। তাই তেমন দর্শক হয়নি। এবার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বলে সবার একটু বেশি আগ্রহ। এছাড়া খেলাটাও শেষ বিকালে।’ টি-টোয়েন্টিতে শক্তিশালী হলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশই জিতবে বলে আশা করছেন তিনি, আফগানরা ভয়ানক দল। তবে বাংলাদেশ দল কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতেও ভালো খেলছে। হয়তো ভালো লড়াই হবে। আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত জিতবে বাংলাদেশই। ম্যাচ দেখতে সিলেটের বাইরে থেকেও এসেছেন অনেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাসেল শেখ এসেছেন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে, ‘আগে ঢাকাতে খেলা দেখেছি অনেক। সিলেটে খুব বেশি আসা হয়নি খেলা দেখতে। এবার টি-টোয়েন্টি বলে চলে এলাম ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে।’ মৌলভীবাজার জুড়ি এলাকার শাহীন আলী বলেন, অনেক কষ্টে টিকিট ম্যানেজ করেছি ভাই। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হারাতে খুব কষ্ট পেয়েছি। শুধুমাত্র বাংলাদেশের জয় দেখব বলে প্রায় ১০০ কিলোমিটার জার্নি করে সিলেট এসেছি। খেলা শুরুর আগে সিলেটে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টিতে সবার মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল ম্যাচে বৃষ্টি বাগড়া দেবে কি না। কিন্তু খেলা শুরুর আগ মুহূর্তে আকাশের রৌদ্রোজ্জ্বল চেহারায় অনেকেই স্বস্তি ফিরে পান। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সিয়াম বেশ উপভোগ করছেন বাংলাদেশের ম্যাচ। তিনি জানান, বিকাল ৪টার সময়ে মাঠে প্রবেশ করার সময়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। তখন আকাশের অবস্থাও এতো ভালো ছিল না। যাইহোক শেষ মুহূর্তে সবকিছু ঠিকঠাক এজন্য খেলা দেখে আনন্দ লাগছে। বাংলাদেশও খুব ভালো খেলছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় আফগানিস্তানের ৭ উইকেটে ১৫৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ১৯ রান করেছে বাংলাদেশ। লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট করছিলেন। ৪ রান করে আউট হয়েছেন রনি তালুকদার।