ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ নিতে চায় বাংলাদেশ

টানা তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ নিতে চায় বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে পাওয়া জয়ের ধারা সিলেটেও অব্যাহত রেখেছে টাইগাররা। গত শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের শেষ ওভারে নাটকীয় ও শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। আজ দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টানা তৃতীয় সিরিজ জয়ের ট্রফি ঘরে তুলতে বদ্ধপরিকর স্বাগতিকরা। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে শুধুমাত্র একবার টানা তিনটি সিরিজ জিতেছিলো বাংলাদেশ। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে করিম জানাতের হ্যাট্টিকের পরও জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে-এই ফরম্যাটে শক্তিশালী দল হয়ে উঠার দক্ষতা দেখিয়েছে টাইগাররা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য লাল সবুজ দলের প্রয়োজন ছিল ৬ রানের। প্রথম বলেই দারুণ এক শটে বাউন্ডারি এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তখন মনে হয়েছিল সহজ জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু নাটকের তখনও বাকি। টানা তিন বলে তিনটি উইকেট তুলে হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন করিম জানাত। তখন প্রয়োজন দুই বলে দুই। শঙ্কা তখন আরও একটি হারের। কিন্তু পঞ্চম বলে বাউন্ডারি তুলে নেন শরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশ পায় নাটকীয় এক জয়। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান তোলেন আফগানরা। জবাবে এক বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করেন টাইগাররা। দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তরুণ ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৪৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন হারের মুখে পড়ে তখনই ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ দেন হৃদয়। হৃদয়কে সমর্থন দিয়েছেন আরেক তরুণ ব্যাটার শামিম হোসেন পাটোয়ারী। আফগানদের স্পিন আক্রমণকে দারুণভাবে সামলে নিয়ে ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন হৃদয় ও শামিম। তাদের দুর্দান্ত জুটিতেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। শামিমকে ৩৩ রানে শিকার করে জুটি ভাঙেন রশিদ খান। অনপ্রান্তে চাপের মধ্যেও হাল ছাড়েননি হৃদয়। শেষ ওভারে বাংলাদেশের ৬ রানের দরকারে হ্যাট্টিক করে আফগানিস্তানের আশা বাঁচিয়ে রাখেন করিম জানাত। তার চমকের পর বাউন্ডারি দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন আরেক তরুণ শরিফুল ইসলাম। চাপের মধ্যে থেকেও এমন জয় ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিবে বলে জানান হৃদয়। এখন দেখার বিষয়, এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারে কি-না বাংলাদেশ। গেল বছরও একই দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতে হোয়াইটওয়াশের সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ হেরে যায় টাইগাররা। হৃদয় বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড় যারা দলে আছে, সবাইকে সবাই সাপোর্ট করি। আমরা জানি আমাদের সম্ভাবনা কতটুকু আছে। সত্যি বলতে, আমরা অনেক ইতিবাচক পথে এগোচ্ছি। যাদের বিপক্ষেই খেলি, আমরা সবসময় ফোকাস করি আমাদের শক্তির জায়গায়। দল হিসেবে আমাদের বন্ধন অনেক ভালো এবং এটা আমাদের সহায়তা করে। কোচ আমাদের ভালো একটা পরিকল্পনা দেয় এবং আমরা তা বাস্তবায়নের করার চেষ্টা করি।’ রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে গড়া আফগান স্পিন আক্রমণ যে কোনো দলের জন্যই বড় হুমকি। তাদের বিপক্ষে আগেও ভুগেছে বাংলাদেশ, এবার ওয়ানডে সিরিজেও কম ভুগতে হয়নি। টি-টোয়েন্টি সিরিজে এই স্পিন চ্যালেঞ্জ সামলাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেয় বাংলাদেশ। হৃদয় বললেন, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন তারা মাঠে করতে পেরেছেন বলেই ধরা দিয়েছে জয়। ‘আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। বিশ্বের সেরা স্পিন দল ওরা। ওদের সঙ্গে রান করাটা কঠিন। তার পরও আমরা চেষ্টা করেছি, যতটুকু সম্ভব ‘ক্যালকুলেটিভ রিস্ক’ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং থাকে। যেকোনো প্রতিপক্ষের কারও না কারও ভালো দিক থাকেই। আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা বাস্তবায়ন করেছি।’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সেই চ্যালেঞ্জের দ্বিতীয় অধ্যায় দেখা যাবে আজ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে। প্রথম টি টোয়েন্টি জিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়-হারের ব্যবধান কমিয়েছে বাংলাদেশ। পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ১০ ম্যাচ খেলে চতুর্থ জয়ের স্বাদ নিয়েছে টাইগাররা। তবে এখনো ছয় জয় নিয়ে এগিয়ে আছেন আফগানরা। এদিকে ভেজা মাঠের কারনে বল গ্রিপ করতে এবং স্পিন করতে সমস্যা হয়েছিলো আফগানিস্তানের স্পিনারদের। ম্যাচ হারের জন্য এটিকেই প্রধান কারন হিসেবে উল্লেখ করেন রশিদ। কিন্তু যেভাবে লক্ষ্য তাড়া করেছেন হৃদয় এবং শামিম সেটি বাংলাদেশকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। রশিদ বলেন, ‘সত্যি বলতে মাঠ খুব ভেজা ছিল এবং ভেজা বলের কারণে আমরা নিজেদের শক্তির ৫০ শতাংশ হারিয়েছি। তারপরও আমরা ভাল বোলিং করেছি। সবমিলিয়ে নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছে দল। আমাদের বোলিং ইউনিটের সাথে এমন চেষ্টা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে একটি ইনিংস আপনার হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নিতে পারে।’ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয়ের পর শনিবার আরাম করেই সময় পার করছে সাকিব আল হাসানের দল।

ম্যাচের পরই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গতকাল শনিবার কোনো অনুশীলন ছিল না। তাই তো সাকিব-শরিফুলরা সময় পার করছেন। এদিকে, শরিফুলরা কয়েকজন পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন সিলেটের নানা দর্শনীয় জায়গায়। সকালে বেরিয়ে দুপুরের মধ্যে অবশ্য ঘোরাফেরার কাজ শেষ করেফেলেন। এরপর খাওয়া-দাওয়া করে ফেরেন হোটেলে। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ২ উইকেটের দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে আছে লাল-সবুজের দল। তাইতো নির্ভার থেকে ঘুরেফিরে নিজেদের আরো সতেজ করছেন সাকিব-শরিফুলরা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। ঐচ্ছিক অনুশীলনে থাকা আফগানিস্তান দলে এক বা দুটি পরিবর্তন আনতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত