দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে মায়ামিকে জিতিয়ে অভিষেক রাঙালেন মেসি

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস ডেস্ক

রূপকথার গল্পেও এতটা সাজানো-গোছানো হয় না, যতটা লিওনেল মেসির বর্ণিল ক্যারিয়ারের গল্প এগিয়েছে। মানুষের অর্জন কিংবা উপরে ওঠার শেষ কোথায়? সাফল্য যেন আরো প্রাপ্তিতে। কিন্তু আর্জেন্টাইন মহানায়ক মেসির ফুটবল থেকে আর কী প্রাপ্তি আছে? মহাদেশীয় কিংবা বৈশ্বিক- কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়-ই আর বাকি নেই। ক্লাবের হয়ে দুই হাত ভরে পেয়েছেন। ফুটবল যাকে পরিপূর্ণ করেছে তিনি মেসি, সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। মেসি যেখানে পা রাখবেন সেখানেই সোনা ফলাবেন। বিষয়টি তো এমন হয়েই দাঁড়িয়েছে। নয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এতোটা মুগ্ধতা কী করে ছড়ান বিশ্বকাপজয়ী তারকা। পিএসজি থেকে মেসির নতুন ঠিকানা ইন্টার মায়ামি। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে নেমেছিলেন অভিষেক ম্যাচে। যেখানে ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিকে মেসি গোল করে দলকে জিতিয়েছেন ২-১ ব্যবধানে। ম্যাচের ৯৪তম মিনিট তখন, শেষ বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড মাত্র বাকি। ডি-বক্সের একটু বাইরে ফ্রি কিক পেল ইন্টার মায়ামি। যাকে ফাউল করায় ফ্রি কিক, সেই লিওনেল মেসি এগিয়ে গেলেন শট নিতে। খুব গতিময় নয়, কিন্তু একদম মাপা শট। উড়ন্ত গোলকিপারকে ফাঁকি নিয়ে বল চলে যায় সোজা জালে। ধারাভাষ্যকার তখন গলা ফাটাচ্ছেন ‘মেসিইই’ বলে। ঠাসা গ্যালারির গগণবিদারি চিৎকারে প্রকম্পিত চারপাশ। যুক্তরাষ্ট্রে মেসির অভিষেক দেখতে গ্যালারিতে থাকা এনবিএ তারকা লেব্রন জেমস, টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস, মিডিয়া তারকা কিম কার্দাশিয়ান, নানা আঙিনার আরো অনেক তারকা, সবাই মেতে ওঠেন উল্লাসে। মেসি তো তখন হারিয়ে গেছেন সতীর্থদের আলিঙ্গনে। বহুল আলোচিত অভিষেকে এভাবেই রঙিন আর্জেন্টিনার সর্বজয়ী মহাতারকা। তার শেষ সময়ের গোলেই মেক্সিকোর ক্লাব ক্রুস আসুলকে ২-১ গোলে হারায় ইন্টার মায়ামি। লিগস কাপে দুই দলেরই প্রথম ম্যাচ এটি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার ও মেক্সিকোর শীর্ষ লিগ লিগা এমএক্স-এর ৪৭ ক্লাব নিয়ে আয়োজিত হয় এই লিগস কাপ। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রবার্ট টেইলরের গোলে এগিয়ে যায় ইন্টার। দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরে ক্রুস আসুল। মেসি মাঠে নামেন দ্বিতীয়ার্ধে। নতুন ক্লাবে এখনো পর্যন্ত মোটে তিনটি পুরো ট্রেনিং সেশন পেয়েছেন মেসি। এ কারণেই হয়তো শুরু থেকে তাকে মাঠে নামাননি কোচ জেরার্দো মার্তিনো। দ্বিতীয়ার্ধে যখন তিনি গা গরম করতে শুরু করেন, ‘মেসি মেসি’ রব ওঠে গোটা গ্যালারিতে। ৫৪তম মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তার সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ সের্হিও বুসকেতসও। মাঠের ফুটবলে অবশ্য বেশি দাপট ছিল ক্রুস আসুলের। মেসি নামার পরও তা খুব একটা বদলায়নি। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি সুযোগ তিনি আদায় করেন মাত্র, তা কার্যকর হয়নি। তবে তিনি তো মেসি, জাদুকরি একটি মুহূর্তেই গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য! ক্যারিয়ারজুড়ে অসংখ্যবার যা করেছেন, নতুন ক্লাবের হয়ে অভিষেকেও ঠিক তেমনি তিনিই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক আর দলের নায়ক। ১১ ম্যাচ ও ২ মাসের খরার পর ইন্টার মায়ামি জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারল এই জাদুকরের সৌজন্যেই। ম্যাচ শেষে মেসির কণ্ঠেও শোনা গেলো আত্মতৃপ্তির সুর, ‘এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা ম্যাচ ছিল। আমরা এমন একটা শুরুই চেয়েছিলাম, আমাদের সমর্থকদের একটা জয় উপহার দিব।’ ‘আমরা এখানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। জয় দিয়ে এই প্রতিযোগিতা শুরু করা আমাদের জন্য দরকার ছিল। আর এ ব্যাপারে আমরা বেশ খুশি।’ যোগ করেন মেসি। নিজের অভিষেক ম্যাচেই জয়সূচক গোল নিয়েও উচ্ছ্বসিত এই আর্জেন্টাইন। ‘সবসময়ের মতোই আমি চেষ্টা করেছি। ভাগ্য ভালো, এটা রক্ষণ দেয়াল ভেদ করে জালে জড়িয়েছে। আর গোলরক্ষকও সময়মতো সেখানে যেতে পারেনি। আমাদের সময় যেভাবে যাচ্ছিল, তাতে এটা অনেকদিন পর আমাদের আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে আমাদের জয় পাওয়া শুরু করতে হবে।’