ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যে কারণে ফুটবল মাঠে জার্সি খোলা নিষেধ

যে কারণে ফুটবল মাঠে জার্সি খোলা নিষেধ

ফুটবল এমন একটি খেলা যেখানে মিশে থাকে প্রচণ্ড আবেগ ও উত্তেজনা। একটি ফুটবল খেলার অন্যতম উত্তেজনাদায়ক মুহূর্ত হলো যখন একজন খেলোয়াড় গোল করেন। এখন গোলের পর আবেগের বশে সেই খেলোয়াড় উৎযাপনের জন্য অনেক কিছুই করে ফেলেন। এরমধ্যে একটি খুব সাধারণ একটি ঘটনা হচ্ছে তার গায়ের জার্সি খুলে ফেলা। কিন্তু এই সাধারণ ঘটনার পরিণতি হচ্ছে একটি হলুদ কার্ড। নিত্যনতুন নিয়মের পৃষ্ঠে জর্জরিত ফুটবলারদের রোবট বানানোর যে প্রক্রিয়া চলছে তারই এক অন্যতম সংযোজন বলা যায় এটিকে। ২০০৪ সালের পূর্বে ফুটবলে জার্সি খুলে ফেলা নিয়ে কোন বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। খেলোয়াড়রা তাদের গোলের পর উদযাপনের জন্য অহরহ খুলে ফেলতেন জার্সি। বলতে গেলে যে কোনো আইকনিক গোলের জন্য এটি ছিল একটি ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন। তবে এরপরই জার্সির উপর নতুন করে কিছু নিয়ম আরোপ করেন কর্তৃপক্ষ। তখন জার্সি খোলাকে মাঠে একটি নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এর জন্য একটি হলুদ কার্ড দেখানোর নিয়ম আসে। তবে হলুদ কার্ড দেখালেই বা কী, খেলোয়াড়েরা কি আদৌ এই নিয়ম মেনে চলেন? না, তারা এই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই জার্সি খুলে উদযাপন করেন। তবে আগের তুলনায় জার্সি খোলার হার অনেক কমেছে। এখন খেলার একদম শেষের দিকে, মনে রাখার মতো কোনো গোল কিংবা জয়সূচক গোলের পর তারা জার্সি খোলেন। আবার এটিও খেয়াল রাখতে হয় যে খেলায় আগে কোনো হলুদ কার্ড খেয়েছেন কি না। তখন যদি জার্সি খুলেন তবে দুই হলুদ কার্ডের জন্য তাকে দেখতে হবে লাল কার্ড। মোটকথা যে তারা এই নিয়মবহির্ভূত কাজটি একটি ঝুঁকি মাথায় নিয়েই করে থাকেন। খেলোয়াড়দের কাছে যেমন এই নিয়মটি অপছন্দের, তেমনি সমর্থকদের কাছেও। তাদের মতে এটি একটি তুচ্ছ নিয়ম যা উদযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সবসময়। একদম বেরসিক মানুষই পারে এমন আনন্দের মুহূর্তে এমন একটি নিয়ম দিয়ে রাখতে। কিন্তু এই ২০০৪ এর আগেও তো এই জার্সি খোলা নিয়ে কোনো আইন ছিল না। খেলোয়াড়েরা বলতে গেলে একদম যাচ্ছেতাইভাবেই মাঠে নিজেদের গোল উদযাপন করত। সেখানে জার্সি খোলাটা ছিল একদম সাধারণ মানের একটি উদযাপন। কিন্তু এরপর কী এমন হলো যে এই জার্সি খুলতেই নিষেধ করা হলো? ফুটবলে খেলা সম্পর্কিত সকল আইন পরিচালনার কাজ করে থাকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা ফিফা। ফিফা তাদের রুলবুকের ১২ নম্বর উপধারায় খেলোয়ড়রা গোল করার পর কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না, এই নিয়ে বলা আছে। এর মধ্যে যা যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাঠের চারপাশের উঁচু বেড়ার নিরাপত্তা বেষ্টনি বেয়ে ওঠা কিংবা সেই নিরাপত্তা বেষ্টনি ডিঙিয়ে সমর্থকদের ভেতরে এমন ভঙ্গিতে চলে যাওয়া যা কোনো সিকিউরিটি ইস্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, দর্শকদের দিকে উস্কানিমূলক কিংবা ব্যঙ্গাত্মক কোনো অঙ্গভঙ্গি করা, মুখোশ বা একই রকম কোনো বস্তু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, জার্সি খুলে ফেলা এবং জার্সি খুলে তা মাথায় বেঁধে রাখা। যতই খেলোয়াড়দের এই নিয়মগুলোর ভেতর বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন, তারা থোড়াই কেয়ার করেন তার। অনেক খেলোয়াড় তো আছেন যে একই সাথে একাধিক নিয়মও ভেঙে থাকেন। একদম শুরুতে বলা হয়েছিল স্পন্সরদের বিনিয়োগকৃত অর্থ বিফলে যেতে না দেয়া। স্পন্সররা টাকা দিয়ে খেলোয়াড়দের জার্সিতে তাদের নাম ও লোগো লাগায় তাদের প্রচারণার জন্য। তারা চাইবেই যে খেলার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় যাতে তাদের নাম স্পষ্ট দেখা যায়। একটি খেলার গোলের ছবিই সবচেয়ে বেশি প্রচার মাধ্যমে ছয়ায়। গোলের পর আইকনিক সেলিব্রেশনগুলো জমা থাকে ফটোগ্রাফারদের জন্য। ওই ছবিগুলোই ফলাওভাবে প্রচারিত হয় পুরো বিশ্বে। এমন মুহূর্তে যদি জার্সি গায়ে না থাকে, তবে স্পন্সররা প্রচারের একটি বড় সুযোগ হারাবে। এই দিক বিবেচনা করলে জার্সি খোলাকে নিষিদ্ধ করা যৌক্তিক। এরপর এই জার্সি খুলে সেলিব্রেশন করাকে মাত্রাতিরিক্ত সেলিব্রেশন হিসেবেও ধরা হয়। এছাড়া এই নিয়মের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা জার্সির নিচে আলাদা শার্টে একটি বার্তা লিখে তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার যে চেষ্টা করে, তা-ও প্রতিহত করা হয়। বার্তাগুলো অনেকসময় হয় উষ্কানিমূলক, কিংবা রাজনৈতিক, কিংবা ধর্মীয় ব্যাপার। ২০১০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করে জার্সি খুলে ফেলেছিলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। ইনিয়েস্তার জার্সির নিচে থাকা গেঞ্জিতে ইনিয়েস্তা নিজের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের প্রয়াত সতীর্থ দানি হারকে কে উদ্দেশ্য করে একটি বার্তা দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের ঠিক আগের বছর হারকে এই দুনিয়ার মায়া ছেড়েছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত