ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খেলা হচ্ছে না এশিয়া কাপেও

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই নেতৃত্ব ছেড়েছেন তামিম

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই নেতৃত্ব ছেড়েছেন তামিম

প্রতিবেশি ভারতের মাটিতে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের নেতৃত্বেই খেলবে বাংলাদেশ দল; এমনটাই হয়তো চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে দেশ সেরা এ ব্যাটারকে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার নির্দেশ দিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু তামিম অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও নেতৃত্বে আর ফিরলেন না। এক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন ড্যাশিং ওপেনার। তাকে বুঝিয়েই দলের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে এশিয়া কাপেও না খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন চোট থেকে সেরে ওঠার লড়াইয়ে থাকা এই বাঁহাতি ওপেনার। ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশানের বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসেন তামিম। আলোচনা শেষে গণমাধ্যমের কাছে অধিনায়কের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তামিম। সেসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পাপন ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম বলেন, ‘আমরা অনেক আলোচনা করেছি। আমার সমস্যা, কী সমস্যা ছিল, কী হবে সামনে, সবকিছু নিয়ে। আমি একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটা উনাদের বলেছি, কারণও জানিয়েছি... আজকে থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।’ পিঠের নিচের অংশের চোটে অনেক দিন ধরে ভুগছেন তামিম। এই বিষয়টি তার অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তে প্রভাব রেখেছে, ‘চোট একটি ইস্যু। এ মুহূর্তে আমি ইনজেকশন দিয়ে এসেছি। এই ইনজেকশনগুলোও কিন্তু হিট অর মিসের মতো (সফলতা আসতে পারে, আবার নাও পারে)... আমি আমার সমস্যাগুলো তাদের বলেছি। আমি সব সময়ই একটা কথা বলি, যেসব কিছুর ঊর্ধ্বে আমি সব সময় দলের কথা চিন্তা করেছি। আমার মনে হয়, দলের কথা চিন্তা করে আমার পদত্যাগ করাটাই হবে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো ব্যাপার।’ প্রধানমন্ত্রীকেও ফোনে নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানিয়েছেন তামিম, ‘আমরা একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তাকে আমার বার্তাটা দিয়েছি। তিনি বুঝেছেন, আর আমাকেও যা বলার তা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছেন। তবে মূলবিষয় হলো এটা যে দলের ভালোর জন্য আমার অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করা উচিত, স্রেফ একজন খেলোয়াড় হিসেবে খেলায় মনোযোগী হওয়া উচিত এবং যখনই সুযোগ আসে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।’ তামিমের চোটের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জালাল বলেছেন, ‘তামিমের (মেরুদণ্ডের) এল ফোর ও এল ফাইভে (কশেরুকা) ইস্যু আছে। অনেক দিন ধরে সে এই চোটে ভুগছে। প্রায় ১ বছরের বেশি হবে সে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছে, অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছে। সম্প্রতি সে লন্ডনে গিয়েও কথা বলেছে। সেখানে তার নির্ণয় করা গেছে।’ চোটের কারণেই এশিয়া কাপে তামিম খেলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন এই বিসিবি কর্মকর্তা, ‘আমাদের দল এশিয়া কাপের জন্য আগামী ২৬ অগাস্ট (শ্রীলঙ্কায়) চলে যাবে। দেখা যাচ্ছে যে তামিমের পক্ষে এশিয়া কাপে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না, চোটের কারণে। এর মধ্যে আমরা তামিমসহ বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী, ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম ও বোর্ড সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও পরামর্শ দিয়েছে যে তামিমকে এশিয়া কাপে ফেরানোটা সম্ভব হবে না।’ তবে সবঠিক থাকলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আবারও মাঠে ফিরবেন তিনি। তামিম বলেন, ‘আমিও পুরোপুরি নিশ্চিত নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরতে পারব। যেন কোনো বাড়তি সমস্যা না হয়, এ কারণেই বাড়তি সময়টা নেওয়া। যেন আমি সেরা অবস্থায় নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরতে পারি। এশিয়া কাপে খেলার ব্যাপারে যদি জোরাজুরি করতাম, তাহলে খেলতে পারতাম। কিন্তু ওইটা কেউই চাচ্ছে না, এ জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।’ তামিমের ২২ গজে ফেরা প্রসঙ্গে আশাবাদী নাজমুল হাসান পাপনও। বিসিবি বস বলেন, ‘এশিয়া কাপ খেলতে গেলে তো ওর ইনজুরি পারমান্যান্ট ড্যামেজ হয়ে যাবে, সেটা আমরা চাই না। আমি পূর্ণ নিশ্চিত, সে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরবে।’ বিসিবি সভাপতির মতে, তামিমের অধিনায়ক হিসেবে না থাকা দলের জন্য বড় ধাক্কা। অবশ্য তামিম ফিট হয়ে ফিরলে তাকে বিশ্বকাপ এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দেখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নাজমুল হাসান পাপন। তামিমের এমন সিদ্ধান্তের পর কে ওয়ানডে অধিনায়ক হবেন, এই প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, তামিম অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার কারণে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানান তিনি। আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ড সভাপতি। প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। সেই ম্যাচটিই হয়ে থাকল তার নেতৃত্বের শেষ ম্যাচ। বাংলাদেশকে ৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি জয়ের দেখা পান ২১টিতে, হারেন ১৪টিতে। বাকি দুটি ম্যাচে কোনো ফল আসেনি। অন্তত পাঁচটি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারদের মধ্যে জয়-পরাজয়ের শতকরা হারে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায় অবসরের ঘোষণার পরদিনই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন তামিম। সেই সঙ্গে দেড় মাসের ছুটি পান তিনি। এরপর পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে চলে যান। সেখান থেকে লন্ডনে গিয়ে পিঠের চোটের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তামিম। তাকে দুই দফায় ইনজেকশন নিতে হয়। এরপর গত সোমবার তিনি দেশে ফিরে আসেন।

চলতি মাসের ৩০ তারিখ পাকিস্তানে শুরু হবে এশিয়া কাপ। আর ৫ অক্টোবর থেকে ভারতে শুরু হচ্ছে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আসন্ন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে মিরপুরে অনুশীলন ক্যাম্প করছে বাংলাদেশ দল। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে বর্তমানে বিশ্রামেই থাকছেন তামিম ইকবাল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত