দেশের জার্সিতে সাকিবের ১৭ বছর

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে নিয়মরক্ষার ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত। তাই এদিন স্কোয়াডে কিছু পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার অংশ হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ১৯ বছরের এক তরুণ। নাম তার সাকিব আল হাসান। সেদিন বাংলাদেশ খেলেছিল দাপুটে এক ম্যাচ। জিম্বাবুয়েকে আটকে ফেলে ২০০ রানের নিচে। শাহরিয়ার নাফিস খেলেছিলেন শতরানের ইনিংস। তবে এর মধ্যেও আলাদা করে নজরে ছিলেন ১৯ বছরের সাকিব। ৪০ রান আর ১ উইকেট দিয়ে অভিষেকেই জানান দিয়েছিলেন নিজের উপস্থিতি। সেদিনের সেই সাকিব দিনে দিনে পরিণত হয়েছেন। দেশের সেরা প্রতিভা থেকে হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। যেখানে তার সঙ্গে তুলনা চলে ইমরান খান, ইয়ান বোথাম, জ্যাক ক্যালিস কিংবা স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্সের মতো নামের সাথে। রেকর্ড সাকিবের নিত্যসঙ্গী। গত ১৭ বছরে অজস্র রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন ৭৫ নাম্বার জার্সিধারী সাকিব। অলরাউন্ডার হিসেবে এমন সব কীর্তি তিনি গড়েছেন, যা হয়তো অন্য যে কারোর জন্য নিছকই স্বপ্ন। টেস্ট ক্রিকেট থেকেই শুরু করা যাক। ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত আরাই হাজারের বেশি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। এর মাঝে কেবল চারজন একই ম্যাচে শতক আর ১০ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েছেন। তাদের একজন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। সেইসঙ্গে এক হাজার রান এবং ১০০ উইকেট কিংবা একই ইনিংসে ৫ উইকেট এবং শতরানের রেকর্ডেও আছে তার নাম। ওয়ানডে ফরম্যাটে আরো বেশি রঙিন মাগুরার এই সন্তান। এক টুর্নামেন্টে ২৫০ রান আর ১০ উইকেট শিকারের এলিট ক্লাবে আছেন সাকিব। সেটাও করেছেন বিশ্বকাপের মতো মেগা আসরে। এক মাঠে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড আছে সাকিবের। এমনকি ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাবার তালিকায় শীর্ষ ১৫তেও আছেন বাংলার এই ক্রিকেটার। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি- টোয়েন্টিতে এখনো বড় নাম হতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম সাকিব। টি- টোয়েন্টি যুগে সাকিবের মতো কার্যকরী খেলোয়াড় খুব কমই পেয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড সাকিবেরই। এক ইনিংসে চার বা তারচেয়ে বেশি উইকেটে শিকারের রেকর্ডটাও তার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে একই মাঠে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় সাকিব আছেন দ্বিতীয় স্থানে। আর সবচেয়ে বেশি উইকেট লাভের ক্ষেত্রে সাকিবই সেরা। সবচেয়ে বেশিবার সিরিজ সেরার তালিকায় সাকিব আছেন তৃতীয় স্থানে (১৭ বার)। এত এত রেকর্ডের মাঝে সবচেয়ে অনন্য রেকর্ড ১৪ হাজার রান এবং ৬০০ উইকেট পাওয়ার এলিট ক্লাবে যোগ দেয়া। এমন বিরল রেকর্ড নেই অন্য কোনো ক্রিকেটারের। সবমিলিয়ে ৬৬ টেস্টে সাকিবের রান ৪ হাজার ৪৫৪। উইকেট ২৩৩। ওয়ানডে ফরম্যাটে করেছেন ৭ হাজার ২১১ রান। আর বল হাতে শিকার করেছেন ৩০৫ উইকেট। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২ হাজার ৩৮২ রানের পাশাপাশি আছে ১৪০ উইকেট। কখনো বিতর্কে জড়িয়েছেন, কখনো ইনজুরিতে ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের লাল-সবুজের জার্সিতে সাকিবের বিকল্প আজো আসেনি। দলের অধিনায়কত্ব বুঝে পেয়েছেন বহু আগেই। হয়তো সামনের বিশ্বকাপটাও তার নেতৃত্বেই খেলবে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত অর্জনে সমৃদ্ধ সাকিব দেশের জার্সিতে এখন বড় কোনো শিরোপা জেতার অপেক্ষায়। সামনের এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপে হয়ত সেই আরাধ্য শিরোপাটাই ধরে দেখতে চাইবেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।