ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এশিয়ান গেমসে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বক্সার সেলিম

এশিয়ান গেমসে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বক্সার সেলিম

গত বছর বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের হুসাম উদ্দিন মোহাম্মদের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সেলিম হোসেন। দুয়ারে কড়া নাড়ছে আরো একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনের হ্যাংজু শহরে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান গেমস। এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এ ইভেন্টে দেশকে পদক এনে দিতে চান বাংলাদেশের এই বক্সার। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন জাতীয় বক্সিংয়ে স্বর্ণজয়ী তারকা। বক্সিং ডিসিপ্লিনে ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণীতে (ফেদারওয়েট) লড়াবেন সেলিম। তবে এবারই প্রথম এশিয়ান গেমসে খেলতে যাচ্ছেন রাজশাহীর শিরোইল কলোনির ছেলে সেলিম। কেমন প্রস্তুতি হচ্ছে? এশিয়ান গেমসে লক্ষ্যই কী- এসব প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, ‘মাঝে বেশ কয়েক বছর এশিয়ান গেমসে আমরা বক্সিং ইভেন্টে অংশ নিতে পারিনি। এবার হ্যাংজুতে যাচ্ছি। এশিয়ান গেমসে এবার ১৩টা ওয়েট থাকলেও আমরা সেখানে দুটি ওয়েটে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। ৫১ কেজি ও ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণী। আমি বরাবরের মতো ৫৭ কেজিতে লড়ব।’ প্রস্তুতি এবং লক্ষ্য সম্পর্কে সেলিম জানান, ‘ফেডারেশন আমাদের প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র ঘাটতি রাখছে না। কোচ, খেলোয়াড়দের চাহিদা মোতাবেক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই তারা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন স্যার ক্যাম্পে থাকা আমাদের ৪ জন বক্সারের নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। যা যা দরকার দিচ্ছেন। খাওয়া, থাকা থেকে অনুশীলন সব কিছুই ভালো হচ্ছে। আমাদের কোচ মাসুদ স্যার, কাজী শাহাদাত স্যার আমাদের খুব ভালো ট্রেনিং করাচ্ছেন। পদক জেতাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। দেশকে পদক জেতাতেই আমি এশিয়ান গেমসে যেতে চাই।’ ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ বক্সিং ইভেন্টে একটি ব্রোঞ্জপদক জিতেছিল। মোশারফ হোসেনের হাত ধরে এসেছিল সেই পদক। এরপর কেটে গেছে ৩৯টি বছর। এতগুলো বছর শুধু একের পর এক আসরে আসরে অংশ নেয়া ছাড়া আর কোনো ভূমিকাতে দেখা যায়নি বাংলাদেশকে। এবারো কি সেই অংশগ্রহণই থাকবে নাকি পদকের খরা ঘুচবে- এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘রাজশাহীর তেরো খাদা উপজেলার সন্তান আমাদের মোশারফ হোসেন ভাই। তার হাত ধরে এশিয়ান গেমস থেকে প্রথমবার বাংলাদেশ পদক জিতেছে। আমিও রাজশাহীর ছেলে। মোশারফ ভাইদের গল্প শুনে বেড়ে উঠেছি। আমি চাইব দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে, আমাদের ফেডারেশনের মুখ উজ্জ্বল করতে। তুহিন স্যার আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করছেন। অন্তত তার জন্য হলেও পদক জিততে চাই।’ পুরুষের সাফল্য-উন্নতির পেছনে কোনো কোনো নারীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা নাকি থাকে! এই কথাটি ভীষণভাবে খাটে সেলিমের ক্ষেত্রে। জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসের (বিয়ে) পর থেকেই নাকি বদলে গেছে সেলিমের জীবন। একে একে এসেছে সাফল্য। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন সেলিম। এর ঠিক ৪ মাস পর বাংলাদেশের অলিম্পিক খ্যাত বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ পদক জেতেন। ক্যারিয়ারে জাতীয় পর্যায়ে এটিই তার প্রথম স্বর্ণ জেতার ঘটনা। এরপর ২০২২ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও স্বর্ণ জেতেন। একই বছর প্রথমবারের মতো দুটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টেও অংশ নেন। একটি তার নিজ সংস্থা কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে রাশিয়াতে অংশ নেন ওয়ার্ল্ড মিলিটারি চ্যাম্পিয়নশিপে; অপরটি বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে। রাজশাহীকে বলা হয় বক্সিংয়ের চারণভূমি। শিরোইল করোনির সিটি বক্সিং ক্লাব/মর্ডান বক্সিং ক্লাব হচ্ছে সেই চারণভূমির আঁতুরঘর। সেখান থেকেই উঠে এসে ঢাকার মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে এখন জাতীয় প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন সেলিম; আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিটাও এখান থেকেই পাচ্ছেন। মনতাজ ওস্তাদের হাত ধরে একদিন বক্সিং রিংয়ে পা রেখেছিলেন সেলিম। তবে তার মনে বক্সিং খেলার নেশাটা জাগে এলাকার বড় ভাই ২০১০ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী জনি এবং একই আসরে ব্রোঞ্জজয়ী নাদিম বক্সারকে দেখে। ২০০৬ সালে বক্সিংয়ে সেলিমের শুরু। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে খেলার পর ২০১০ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। তার পর পরই চলে আসেন সিনিয়র দলে। ছিলেন ২০১৬ গোয়াহাটি-শিলং এসএ গেমস এবং ২০১৯ নেপাল এসএ গেমসের ক্যাম্পে। বক্সিংয়ে সেলিমের এখন একটাই স্বপ্ন বড় কোনো আন্তর্জাতিক আসর থেকে বাংলাদেশের জন্য পদক নিয়ে আসা। দেশ এবং দশের মুখ উজ্জ্বল করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত