এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ

সাকিবের কাঁধেই ওয়ানডে দলের নেতৃত্বভার

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

তামিম ইকবাল নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এক ঘোষণায়। সাকিব আল হাসানকে জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করলেন তিনি। আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে টাইগারদের নেতৃত্ব দিবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। গতকাল শুক্রবার দুপুরে গুলশানের নিজ বাসভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিসিবি প্রধান। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সাকিব আল হাসানকে টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব দিয়ে তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের যুগে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশ। অর্ধ যুগ পর সেই সাকিবের হাত ধরেই ফের তিন ফরম্যাটে এক অধিনায়কত্তে ফিরে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। চলতি মাসেই এশিয়া কাপ দিয়ে শুরু হবে সাকিবের নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়। এশিয়া কাপের পর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও লাল সবুজ দলকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব। তাছাড়া সাকিব যদি চান তাহলে লম্বা সময়ের জন্য তাকে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী বিসিবি। তবে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান নাজমুল হাসান পাপন। আগে থেকেই বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ৩৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দল শনিবার ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান বিসিবি সভাপতি। গত ৩ আগস্ট বোর্ড সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তামিম ইকবাল। এরপর সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নামই উচ্চারিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেয়া লিটন দাসকে নিয়েও ছিল আলোচনা। সম্ভাবনা খানিকটা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজেরও। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব আসরের মতো বড় মঞ্চে সাকিবের অভিজ্ঞতায়ই ভরসা রাখল বিসিবি। সাকিবের নেতৃত্বে দেশের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই বছরের অগাস্টে জিম্বাবুয়ে সফরের পর তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পথচলায় টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পেলেও ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্ব আর পাননি। ২০১৫ সালে দুটি ও ২০১৭ সালে একটি ওয়ানডে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বটে, তবে তা ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে। এই ৩৬ বছর বয়সে এসে আবার পেলেন সেই ভার। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৫০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। তাতে জয় ২৩টি, পরাজয় ২৬টি। ফলাফল হয়নি একটিতে। তামিম দায়িত্ব ছাড়ার দুদিন পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি সরাসরিই বলেছিলেন, পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে সাকিবই ‘অবধারিত’ পছন্দ। তবে এই অলরাউন্ডার দীর্ঘমেয়াদে নেতৃত্ব নিতে চান কি না বা তিন সংস্করণে নেতৃত্ব দিতে কতটা প্রস্তুত, এসব নিয়ে জটিলতার কথাও বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি। এরপর গত মঙ্গলবার অধিনায়ক ঠিক করার জন্য জরুরি সভায় বসে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। সেদিনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সভা শেষে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস জানান, বোর্ড পরিচালকদের পক্ষ থেকে বিসিবি সভাপতিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নতুন অধিনায়ক ঠিক করতে। শেষ পর্যন্ত নাজমুল হাসান পাপনের কাছ থেকেই জানা গেল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ‘সামনে এখন এশিয়া কাপ, এরপরই বিশ্বকাপ। এত কম সময়ের মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে, সবচেয়ে সহজ ও অবধারিত পছন্দ সাকিব আল হাসান। আরেকটা অটো চয়েজ আছে। সেটা হলো, ও না খেললে সহ-অধিনায়ক যে আছে, সে হবে। লিটন দাস।’ বোর্ড প্রধান বলেন, ‘আরও দু-একটি নাম এসেছে, যেমন মেহেদী হাসান মিরাজ। দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করলে কে হবে, সেই আলোচনা থেকে। কারণ এখন তো ধরেন মুশফিক করছে না, তামিমও ছেড়ে দিল, সাকিবও যদি কখনো ছেড়ে দেয় তখন কী হবে...। ওরকম দীর্ঘ মেয়াদে যখন চিন্তা করব, তখন আরো নাম আসবে। এরকম নাম আসতেই পারে, সমস্যা নেই।’ তবে সাকিবকে তিন সংস্করণেই অধিনায়ক করা বা দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্বে রাখা নিয়ে এখনও কিছু সংশয়ের কথা জানান বিসিবি সভাপতি। ‘ওর (সাকিব) সঙ্গে সেরকম আলোচনায় হয়নি। ও দেশে এলে, তারপর বলতে পারব। দীর্ঘ মেয়াদে ওপর পরিকল্পনাটাও জানতে হবে। কারণ একসঙ্গে তিনটা ওর ওপর বোঝা হয়ে যাবে। কারণ যে পরিমাণ খেলা আমাদের, কাজেই ওর সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ওর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলাটা এখন কঠিন।’ নাজমুল হাসান বলেন, ‘একে তো ও দেশের বাইরে, তার ওপর একটা দলের হয়ে খেলছে। ওখানে ওরও কিছু কমিটমেন্ট আছে, ব্যস্ততা আছে। সেজন্য ওকে বেশি ডিস্টার্ব করতে চাইনি। আজকেও আবার ওর খেলা। তবে মোটামুটিভাবে যেটা আমরা ঠিক করেছি, বিশ্বকাপ পর্যন্ত যে খেলা আছে, এই সময়টায় অবশ্যই সাকিব আল হাসান অধিনায়ক। ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব যে, এটা কী দীর্ঘ মেয়াদি নাকি তিনটাই থাকবে নাকি দুটি থাকবে নাকি একটি, এগুলো ও দেশে এলে কথা বলে ঠিক করব।’ বর্তমানে সাকিব লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন গল টাইটান্সের হয়ে। সব ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব। তার আগে মাশরাফি নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে।