‘রিয়াদ বাংলাদেশ দলে খেলার যোগ্যতা অবশ্যই রাখে’

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ক্রিকেটের মঞ্চে সর্বকালের সেরা পার্শ্বচরিত্রের নাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যিনি নিজেকে উজাড় করে সবটা বিলিয়েও থেকে গেছেন আঁধারে। টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে যখন যেখানে চেয়েছে, সেখানেই নির্দ্বিধায় খেলেছেন, পারফর্মও করেছেন। দল বিপর্যয়ে পড়লে তিনি দৃঢ় হাতে সামাল দেন, আবার রানরেটে পিছিয়ে পড়লে মারকাটারি ইনিংস খেলতে জানেন। দলের প্রয়োজনে পার্টটাইমার হিসেবে বল হাতে তুলে নিয়ে এনে দিতে পারেন কাঙ্ক্ষিত সব ব্রেকথ্রু।

কিন্তু টিম কম্বিনেশন হোকা অন্য কোনো কারণে হোক আসন্ন এশিয়া কাপের ১৭ জনের দলে জায়গা হয়নি এই অলরাউন্ডারের। অনেকেরই মতো মাহমুদউল্লাহর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ! বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া বহুদূরে, তার জাতীয় দলে ফেরাই কঠিন। তবে মাহমুদউল্লাহর সামনে এখনই সেই আঁধার দেখছেন না খালেদ মাহমুদ। বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়কের ধারণা, এখনই লড়াইয়ে হাল ছাড়বেন না অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। মাহমুদউল্লাহ এখানেই থেমে যাবেন বলে মনে করেন না খালেদ মাহমুদ। একসময় এই দুজন ছিলেন দারুণ ঘনিষ্ঠ। বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে মাহমুদউল্লাহর ‘মেন্টর’ ছিলেন খালেদ মাহমুদ। মঙ্গলবার মিরপুরে জাতীয় শোক দিবসের আয়োজনে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবির এই পরিচালক বলেন, মাহমুদউল্লাহর নতুন অধ্যায় দেখা যেতেও পারে সামনে।

‘আমি এখনই বলব না যে, ওর শেষটা দেখছি। এখনো রিয়াদ দারুণ লড়াকু। দলের সমন্বয় বা যে কারণেই বাদ পড়ুক না কেন, টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচকরা যদি না নেয়, তাতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। এটা সত্যি কথা, রিয়াদের বয়সও হচ্ছে। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি, রিয়াদ যেভাবে লড়াই করে, চেষ্টা করে, তাতে শেষ হয়ে গেছে বলাটা ঠিক হবে না। সুযোগ আবার আসতেও পারে এবং আবার খেলবে।’ তিনি বলেন, ‘রিয়াদ এখনো বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। সুতরাং, আমার মনে হয়, রিয়াদ এখনও সেই খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতাটাই রাখবে। নিজের সাথে লড়াই করবে এবং নিজের সাথে লড়াই করাটাই সবচেয়ে বড় লড়াই হবে। আমি মনে করি, লড়াই করার পর রিয়াদের সেই সুযোগটা থাকবে।’ মাহমুদউল্লাহর জায়গায় গত কয়েক সিরিজে ছয় নম্বরে খেলছেন মুশফিকুর রহিম। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নতুন এই পজিশনে নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান। তাই বাস্তবতা বলছে, মাহমুদউল্লাহর দলে ফেরাটা খুব একটা সহজ হবে না। সেটি জানেন খালেদ মাহমুদও। তবে তার আশা, নিজের যোগ্যতা দিয়ে আবার ফিরবেন মাহমুদউল্লাহ। ‘আমার মনে করি, এখনই রিয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলাটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে। আপনি একবার ক্রিকেটার হলে, সবসময়ই ক্রিকেটার। রিয়াদ যতক্ষণ না পর্যন্ত বলছে ও শেষ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাইপলাইনে সে অবশ্যই থাকবে। রিয়াদ বাংলাদেশে খেলার মতো যোগ্যতা অবশ্যই রাখে।’ সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া চ্যালেঞ্জিং তো অবশ্যই হবে। এটাই সত্যি কথা। কেউ খারাপ খেলুক, রিয়াদ ওখানে জায়গা করে নিক, আমি এটাও বলতে পারি না। আবার এটাও বলতে পারি না কেউ ইনজুরি আক্রান্ত হোক আর রিয়াদ ওখানে খেলুক। রিয়াদের যদি যোগ্যতা থাকে, সে অবশ্যই সুযোগ করে নেবে।’ অবস্থাদৃষ্টে বিশ্বকাপ ভাবনায় মাহমুদউল্লাহর না থাকাটাই এখন সম্ভাব্য বাস্তবতা। তবে বিশ্ব আসরে না থাকলেই সব কিছুর শেষ মানতে চান না খালেদ মাহমুদ। বরং সামনের বছরেও মাহমুদউল্লাহর দলে ফেরার চেষ্টা দেখতে চান বিসিবির এই পরিচালক। ‘বিশ্বকাপটাই রিয়াদের শেষ কেন? বিশ্বকাপ তো অক্টোবরে শেষ।

এরপর তো অনেক খেলা আছে। রিয়াদ যদি ইয়ো ইয়ো টেস্টে ১৭.৬ পায়, যেটা আমি শুনলাম, তাহলে তো ও নিজেকে তৈরি করে আরো এক বছর চেষ্টা করতে পারে।’ জাতীয় দলে জায়গা হারানোর পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে তিনি ১৫ ইনিংসে ৩৬.৪২ গড়ে ৬ ফিফটিসহ করেন ৫১০ রান। বেশিরভাগ ম্যাচে পাঁচ থেকে ছয় নম্বরে নেমে ৮৭.১৭ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেন তিনি। আবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই দলে ফেরার দাবি তুলতে হবে মাহমুদউল্লাহকে। খালেদ মাহমুদের আশা, সেই পথেই হাঁটবেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। ‘আমার মনে হয়, রিয়াদ ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবে। আমার ক্যারিয়ারে ১০ বার বাদ পড়েছি, ১০ বার (দলে) ঢুকেছি। এটা স্বাভাবিক, বড় ইস্যু বানানোর কিছু নাই। রিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। এবার সুযোগ পায়নি। তার জায়গায় যে সুযোগ পেয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করেছে, তাকে এই মুহূর্তে দলে কাজে লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক আছে। আমি এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারি না। হ্যাঁ, রিয়াদের অভিজ্ঞতা, যেটা আমাদের বর্তমান মিডল অর্ডারে কারও কাছে নেই। আবার এটাও ঠিক, চাকরি না করলে তো আপনার অভিজ্ঞতা হবে না। তবে আমি মনে করি, অভিজ্ঞতা সবসময় বিবেচনা করা হয়।’