বিশ্বকাপে তামিমকে আমাদের ভীষণ প্রয়োজন

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

কোমরের চোটের চিকিৎসা করাতে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তামিম ইকবাল। সেই সাথে এশিয়া কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত নেন দেশ সেরা এই ওপেনার। তবে লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরমার্শ অনুযায়ী এক সপ্তাহ বিশ্রামের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেন তামিম। কোমরে দড়ি বেঁধে ওয়েটপ্লেট নিয়ে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে হাঁটাহাঁটি করেন তিনি। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বস্তি অনুভব করলে ব্যাটিং শুরু করার কথা তামিমের। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলে ফিরতে চান এই বাঁহাতি ব্যাটার। নির্বাচক হাবিবুল বাশার তামিমের উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমে হাবিবুল বাশার জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টে তামিমের অভিজ্ঞতা ভীষণ প্রয়োজন। বিশ্বকাপের মঞ্চে অভিজ্ঞ ওপেনারের উপস্থিতি জরুরি বলে মনে করেন তিনি। বিসিবির এই নির্বাচক বলেন, ‘তামিম কঠোর পরিশ্রম করছে। অনেক চেষ্টা করছে মাঠে ফিরে আসার জন্য। আমার মনে হয়, সময়ের আগেই ফিরে আসবে। নিউজিল্যান্ড সিরিজেই তাকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’ হাবিবুল বাশার বলেন, ‘বিশ্বকাপের জন্য তামিমকে আমাদের ভীষণ দরকার। তামিমের অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স বিশ্বকাপে আমাদের ভালো করার জন্য অনেক দরকার। তামিম যেভাবে পরিশ্রম করছে, নিজেকে সময় দিচ্ছেন, আমার মনে হয় তিনি সময়ের আগেই ফিরে আসতে পারবেন।’ তামিমের দ্রুত ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও কোনো তাড়াহুড়ো করতে চান না ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া হাবিবুল বাশার। ‘তামিম ব্যাটিং শুরু করুক। হাতে এখনও সময় আছে। বিশ্বকাপ তো অক্টোবরে। তার আগে তামিম অনেক সময় পাচ্ছেন। আমি আশাবাদী, নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকবে। তামিম সেটা জানে। সেই ব্যাপারে নিজেই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সুস্থ তামিমকে আমাদের ভীষণ দরকার। তার পারফরম্যান্স খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বিশ্বকাপে আমাদের ভালো করার জন্য।’ সাম্প্রতিক সময়ে সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন লিটন দাস। মোহাম্মদ নাঈম শেখ এখনও পায়ের নিচে জমিন শক্ত করার চেষ্টা করছেন। তানজিদ হাসান তো সবে সুযোগ পেলেন দলে। সব মিলিয়ে এশিয়া কাপের ওপেনিং দুর্ভাবনার জায়গা আছে যথেষ্টই। তবে বাস্তবতা যেমনই হোক, শঙ্কার কোনো ছবি দেখছেন না হাবিবুল বাশার। এমনিতে অন্য দুই সংস্করণের তুলনায় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি কিছুটা স্থিতিশীল। গত কয়েক বছর ধরে ইনিংস সূচনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন তামিম ও লিটন। দুজন এই মধ্যেই গড়েছেন ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে শতরানের জুটির রেকর্ড। রানের হিসেবেও অন্যদের ছাড়িয়ে যাওয়ার দুয়ারে তারা। তবে তামিমের পুরোনো চোট বারবার ফিরে আসায় চলতি বছর অনিয়মিত হয়ে পড়েছে এই জুটি। এশিয়া কাপেও দেখা যাবে না তামিমের অভিজ্ঞতা ও লিটনের ছন্দময় ব্যাটিংয়ের যুগলবন্দি। তামিমের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেতে পারেন নাঈম ও তানজিদের যে কোনো একজন। ফলে একরকম অপরীক্ষিত জুটি নিয়েই এশিয়া কাপের মতো মঞ্চে লড়তে হবে বাংলাদেশকে। তবে তেমন চিন্তার কিছু দেখেন না জাতীয় দলের এই নির্বাচক। ‘আমার মনে হয় না, (ওপেনিং নিয়ে) চিন্তিত হওয়ার কিছু আছে। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পরিষ্কার। আমরা যে ক্রিকেটটা খেলার চেষ্টা করছি... আমাদের খেলার ধরনটা কিন্তু বদলেছে। আমরা যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথাটা বলছিলাম, সেটা কিন্তু আমরা গত ২-৩ সিরিজ ধরে খেলছি। আমাদের পারফরম্যান্সে দেখতে পারবেন।’ হাবিবুল বাসার বলেন, ‘এমন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে গেলে কিন্তু ক্রিকেটারদের সমর্থন দিতেই হবে। কারণ এই ধরনের ক্রিকেটের মূল মন্ত্র, আপনি আপনার ইতিবাচক ক্রিকেটটা খেলবেন। এতে করে যদি ১-২ ম্যাচ রান নাও করেন, আপনাকে আপনার দল সমর্থন করবে। সেই আত্মবিশ্বাস দেয়াটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ তামিম না থাকায় ওপেনিংয়ের বড় দায়িত্ব লিটনের কাঁধে। কিন্তু সম্প্রতি কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি ও শ্রীলঙ্কার লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে হাসছে না স্টাইলিশ ওপেনারের ব্যাট। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে ৭ ইনিংস খেলে ২১.৭১ গড়ে তার সংগ্রহ ১৫২ রান। স্ট্রাইক রেট কেবল ১০০.৬৬। এলপিএলে এখনও পর্যন্ত দুই ম্যাচে তিনি ফিরেছেন ১ ও ৮ রান করে। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছর টি-টোয়েন্টিতে তার পারফরম্যান্স বেশ ভালো, তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই সাম্প্রতিক ফর্মে দুশ্চিন্তার খোরাক কিছু আছে বটে। চলতি বছর ওয়ানডেতেও তেমন ছন্দে নেই লিটন। ১২ ম্যাচে ৩০.১০ গড়ে করেছেন ৩০১ রান। সিলেটে গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে পরপর দুই ম্যাচে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের সৌজন্যে কিছুটা ভদ্রস্থ হয়েছে পরিসংখ্যান। তবে সম্প্রতি কিছুটা ধুঁকলেও গত বছর দারুণ ছন্দে থাকা এই ওপেনারকে নিয়ে আশাবাদী হাবিবুল। জাতীয় দলে ফিরেই লিটন ঘুরে দাঁড়াবেন বলে মনে করেন এই নির্বাচক। ‘লিটন দাস ক্লাস ক্রিকেটার। বড় মাপের ক্রিকেটার। এই অফ ফর্মটা, আমি নিশ্চিত ও সময়মতো কাটিয়ে উঠবে। অনেক সময় হয় না, অনেক ভালো ফর্মে থাকতে থাকতে... ক্রিকেটারদের তো খারাপ সময় আসে। আমি মনে করি, ওর এখন খারাপ সময় চলছে। সামনে ঠিক হয়ে যাবে।’ বাকি দুই ওপেনারের মধ্যে নাঈম খেলেছেন স্রফে ৪টি ওয়ানডে। সবশেষ আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে প্রায় দুই বছর ওয়ানডেতে ফিরে দুই ম্যাচে তিনি করেন ৯ ও ০ রান। আর এখনও অভিষেক হয়নি তানজিদের। এই দুজনের মধ্য থেকেই যে কোনো একজন হবেন এশিয়া কাপে লিটনের উদ্বোধনী সঙ্গী। তাদের ওপর আস্থা রাখছেন হাবিবুল। ‘নাঈম শেখ পুরোনো ক্রিকেটার। আগেও খেলেছে। হয়তো ফিরে এসেছে অনেক দিন পরে। যখন একজন ক্রিকেটার অনেক দিন পর ফিরে আসে, তাকে একটু সময় দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্কিল নিয়ে সন্দেহ নেই। সবাই স্কিলসমৃদ্ধ ক্রিকেটার। আমি বিশ্বাস করি, বড় মঞ্চে তাদের ভালো খেলার সম্ভাবনা বেশি।’