আবাহনীতে খেলার স্বপ্ন পূরণ এবার লক্ষ্য জাতীয় দল

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের খেলোয়াড় তপুর উৎসাহ আর প্রেরণাতেই ফুটবলের প্রেমে পড়েন মোহাম্মদ এনামুল ইসলাম গাজী। খেলেন ক্ষুদে ফুটবলারদের আসর ন্যাশন্স কাপেরও। ২০১০ সালে আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ছোটদের সেই টুর্নামেন্টে নিজের প্রতিভা দেখান খুলনার ডুমুরিয়ার এ ফুটবলার। তারপর যশোর শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হন তিনি। এরপর তৃতীয় বিভাগ জয় করে খেলেন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। সেখান থেকে ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে টানা চার মৌসুম পুরোনো ঢাকার জনপ্রিয় ক্লাব রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিতে খেলেছেন তরুণ-মেধাবী এই উইঙ্গার/ফরোয়ার্ড। ২০২২-২৩ মৌসুমে এনামুল নাম লিখিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী লিমিটেডে। তবে আকাশী-নীলদের হয়ে এএফসি কাপের প্লে-অফ পর্বে খেলা হচ্ছে না তার। বর্তমানে বিকেএসপিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। আগামী মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইপর্ব। সেখানে ৩০ জনের প্রাথমিক দলে জায়গা করে নিয়েছেন এনামুল। দুয়েক দিনের মধ্যে ঘোষিত হবে চূড়ান্ত দল। মূল দলেও জায়গা করে নেয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। ঘরোয়া ফুটবলের সবশেষ মৌসুমে রহমতগঞ্জের জার্সিতে দুর্দান্ত খেলেছেন এনামুল। ভালো খেলার পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০২১ সালে উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি কাপেরও দলে ছিলেন তিনি। তবে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে জায়গা পেলেও এখনো জাতীয় দলে সুযোগ মেলেনি। তাই এবার জাতীয় দলকে পাখির চোখ করেছেন। থাইল্যান্ড এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-২৩ আসরে ভালো খেলে জায়গা করে নিতে চান মূল জাতীয় দলে। একই সঙ্গে নতুন ক্লাব আবাহনীতেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে চান। এ ব্যাপারে এনামুল বলেন, ‘সামনে থাইল্যান্ডে আমাদের খেলা আছে। সেখানে আগে জায়গা করে নিতে চাই। আমি জানি সেটা করে নিতে পারব। সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং। এএফসি কাপ তো আরো অনেক বড় চ্যালেঞ্জের। আমি সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে চাই। থাইল্যান্ডে ভালো খেলে জাতীয় দলে নিজের জন্য জায়গা করে নিতে চাই।’ বাফুফে ঘোষিত ২০২২-২৩ মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলের দলবদল কার্যক্রম চলছে। রহমতগঞ্জ ছেড়ে এরই মধ্যে এনামুল চলে এসেছেন ধানমন্ডির ক্লাব আবাহনীতে। নতুন ক্লাবে যোগদান প্রসঙ্গে এনামুল বলেন, ‘যখন থেকে আমি ফুটবল খেলি; তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল একদিন আবাহনীতে খেলব, মোহামেডানের মতো বড় টিমে খেলব। আল্লাহপাক আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আগামী মৌসুমে আবাহনীর হয়ে মাঠে নামব। আবাহনী অনেক দিন ধরে ট্রফিশূন্য। আমি আমার প্রথম সফরটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমরা টিমমেটরা মিলে এবার আবাহনীকে একটা হলেও ট্রফি উপহার দিতে চাই। এর জন্য যত কষ্ট, শ্রম, ত্যাগ স্বীকার করতে হয় আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুত।’ বসুন্ধরা কিংস তো এখন দেশের নম্বর ওয়ান ক্লাব। সেখানে খেলতে চান না- এমন প্রশ্নে এনামুল বলেন, ‘আমি যখন ফুটবলে আসি তখন বসুন্ধরা কিংস ক্লাব ছিল না। তাই আবাহনী মোহামেডানকে ঘিরেই স্বপ্নটা ছিল। কিন্তু আমার নজর সব সময় সেরা জিনিসের প্রতি। অবশ্যই আমি বসুন্ধরা কিংসে খেলতে চাই। কারণ বাংলাদেশের বেশিরভাগ তারকা ফুটবলার এখন এই ক্লাবের অংশ। তবে আমি চাইলেই তো খেলতে পারব না। এক লাফে গাছে উঠা যায় না। আমি যেখানে আছি আগে সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। ভালো খেললে একদিন বসুন্ধরার জার্সিতেও আমাকে দেখবেন ইনশাআল্লাহ। তবে আমার কাছে ছোট-বড় ক্লাব বলে কিছু নেই। এখানে পরিশ্রমটাই আসল এবং নিজের কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ। আমি অনেক বড় ফুটবলার নই। কিন্তু আমি পরিশ্রমী ফুটবলার। ফুটবল খেলে যতটুকু অর্জন করেছি তা কেবল পরিশ্রমে জোরে এবং বাবা-মায়ের দোয়া ও মানুষের ভালোবাসাতে।’ যশোর শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন খুলনার এনামুল। তবে এই উঠে আসার পেছনে ২০১০ সালে আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ক্ষুদে ফুটবলারদের আসর ন্যাশন্স কাপেরও অনেক বড় অবদান রয়েছে। সব ছাপিয়ে এনামুলের ফুটবলার হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যিনি রেখেছেন তিনি হলেন তার প্রিয় বন্ধু তপু (নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলার)। তপুর কারণেই মূলত ফুটবল পায়ে এতদূর এসেছেন। তপুর দেয়া বুটজোড়াই পরেই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক আসরে অংশ নিয়েছেন। তপুর উৎসাহ-প্রেরণাতেই ফুটবলের প্রেমে পড়েছেন। এরপর নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে ধাপে ধাপে আজকের অবস্থানে এসেছেন। ২০১৫ সালে তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে দিলকুশার হয়ে খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়েছেন। পরের বছরই চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলেছেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখান থেকে ২০১৭-১৮ মৌসুমে বিপিএলে নাম লেখান ওই বছরের জনপ্রিয় ক্লাব আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে। ফুটবলার এনামুল ব্রাজিলের একজন পাড়ভক্ত। এনামুল আর্জেন্টাইন ফুটবলের রাজপুত্র মেসিকে অনেক বেশি পছন্দ করলেও নেইমারকে তার চেয়েও বেশি অনুসরণ করেন। তবে বাংলাদেশে এনামুলের পছন্দের ফুটবলার পুলিশ এফসির মিডফিল্ডার মোনায়েম খান রাজু। ২০১৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে রাজুর খেলা দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই থেকে রাজুর ভক্ত এনামুল। আবাহনীর জুয়েল রানাকেও দারুণ পছন্দ তার। পরিবারের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ফুটবল খেলে যাচ্ছেন বাবা, মা এবং তিন ভাই (তিনিসহ) ও এক বোনের আদরের ছোট ভাই এনামুল। এলাকার বন্ধু, স্বজন, আত্মীয়দেরও সমর্থন পাচ্ছেন। সব মিলে ফুটবলে দারুণ সময় পার করছেন। এখন শুধু লক্ষ্যটা পূরণ করার পালা। জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে তোলার অপেক্ষা।