ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অধিনায়কত্ব ছাড়ার আসল কারণ জানালেন তামিম

অধিনায়কত্ব ছাড়ার আসল কারণ জানালেন তামিম

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার তামিম ইকবাল। গত দুই বছরের অধিক সময় ধরে এই ড্যাশিং ওপেনারের নেতৃত্বে ওয়ানডেতে খেলেছে টাইগাররা। তার অধিনায়কত্বে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো পারফর্ম করেছে দল। শীর্ষ চারে থাকার লক্ষ্য নিয়ে এই লিগ শুরু করেছিল, শেষ করেছে শীর্ষ তিনে থেকে। ফলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তোবা তার নেতৃত্বে বিশ্বকাপে খেলতো বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘোষণা করে তামিম। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবসর ভেঙে ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। ক্রিকেটে ফিরলেও হাথুরুসিংহের সঙ্গে তামিমের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই কারণে বিশ্বকাপ আর এশিয়া কাপের মতো বড় দুই টুর্নামেন্ট শুরুর আগ মুহূর্তে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তবে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে তামিমের সম্পর্ক যদি স্বাভাবিক থাকত তাহলে ভারতের মাটিতে তার নেতৃত্বেই খেলতো বাংলাদেশ। সম্প্রতি ক্রিকেটবিষক একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকতো, সবকিছু ঠিক থাকতো তাহলে হয়তোবা আমি (অধিনায়কত্ব) চালিয়ে যেতাম। তবে আমি এখনও পর্যন্ত নিজের ওপরই দায় নিচ্ছি এটার জন্য। ভেতরে কি আলোচনা হয়েছে সেটা আমি মনে করি, আমাদের ভেতরেই থাকা উচিত। যদিও দুর্ভাগ্যবশত অনেক কিছুই নিউজে চলে আসে।’ বাংলাদেশ দল এখন শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করছে। ৩১ আগস্ট শুরু হবে টাইগারদের এশিয়া কাপ মিশন। তবে তামিম প্রস্তুতি নিচ্ছেন আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপ নিয়ে। সাক্ষাৎকারে তামিম জানান, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব কার কথায় আগ্রহী হয়ে নিয়েছেন। কেনই বা নেতৃত্ব ছেড়েছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশ সেরা এই ব্যাটার বলে আসেছেন, তিনি কখনোই অধিনায়ক হতে চাইতেন না। কখনোই অধিনায়কের দায়িত্ব নিতে চাইতেন না। তবে কার কারণে সে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে? বাংলাদেশ দলকে তামিম প্রায় আড়াই বছরের মতো নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক হন তামিম। তবে তার আগে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির চোটের কারণে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়েছিল তামিমকে। সেবার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারা তামিম পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে। ড্যাশিং এই ওপেনার বলেন, যখন বোর্ড থেকে অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব পাই। যার মাধ্যমে আমার কাছে প্রস্তাবটি আসে। আমি তাকে জানিয়ে দেই আমি অধিনায়ক হতে চাই না। তামিম জানান বোর্ডের পক্ষ থেকে টাইগারদের সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোই তাকে অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেন। তামিম ডোমিঙ্গোকেও না বলেন। তবে ডোমিঙ্গোর একটা কথায় পরিবর্তন আসে তার সিদ্ধান্তে। তখনই তামিম বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন। তামিম বলেন, ‘ডোমিঙ্গো বলে ‘আমি জানি তুমি অধিনায়ক হত চাও না। এই কথা আমাকে অনেকবার বলেছ। ধরো তুমি অবসরে গেলে, তখন একদিন তুমি ভাবলে যে তোমার কাছে অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ এসেছিল কিন্তু তুমি সেটা গ্রহণ করনি। এমনও তো হতে পারে যে, তুমি দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হবে। হয়তো বা, হবে না। কিন্তু তুমি তো বিষয়টি কখনো চেষ্টাই কর নাই। তাই আমি তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছি একবার অন্তত চেষ্টা করো। তখন যদি তুমি মনে করো তোমার করতে ভালো লাগছে না। তখন দায়িত্ব ছেড়ে দিবে।’ তার এই কথায়ই আমি সিদ্ধান্ত নেই।’ নিজের চোট প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখন অনেকটাই ভালো। অসহ্য কোনো ব্যথা নেই। নতুন রিহ্যাব ম্যানেজার এসেছে, বায়োজিদ আছে তারা সবাই মিলেই একটা পরিকল্পনা নিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা সঠিক পথেই আছি এবং ভালোভাবেই এগোচ্ছি।’ ব্যাটিং অনুশীলনে ফিরলেও এখন কেবল হালকা অনুশীলন করছেন তামিম। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই স্টিক ব্যবহার করে ছোড়া বলের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে পারবেন। আর পুরোদমে ব্যাটিং অনুশীলনে ফিরতে তার এখনও সপ্তাহ খানেকের আরো বেশি সময় লাগবে। তামিম বলেন, ‘৭ তারিখ থেকে পুরোপুরি ব্যাটিং করতে পারবো। যেখানে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। যে, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। প্রথম দুই দিন আমি শুধু থ্রু ডাউন করেছি। পরবর্তী সেশন থেকে আমার মনে হয়, স্টিক ব্যবহার করতে পারব।’ তামিম বাংলাদেশ দলকে ৩৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেখানে ২১টি জয় পেয়েছেন তিনি। জয়ের হার ৫৬.৭৫। বাংলাদেশ ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে এখন পর্যন্ত বেশি সফল বলা হয় মাশরাফিকে। সেই মাশরাফির চেয়ে তামিমের জয়ের শতাংশ মাত্র দশমিক শূন্য ৬ কম। ৮৮ ম্যাচে ৫০ জয়ে অধিনায়ক মাশরাফির সাফল্যের হার ৫৬.৮১।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত