সাক্ষাৎকার

এশিয়ান গেমসে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত শিতুলরা

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত চীনের হ্যাংজু শহরে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এশিয়ান গেমস বা এশিয়াড। ১৯তম এই আসরে অন্য অনেক ইভেন্টের মতো হকিতেও অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। সবশেষ ২০১৮ ইন্দোনেশিয়া এশিয়ান গেমসে হকিতে ষষ্ঠস্থান অর্জন করেছিল, যা দেশের হকির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সেরা অর্জন। ওই আসরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের অভিজ্ঞ এবং পরীক্ষিত ডিফেন্ডার ফরহাদ আহমেদ শিতুল। হ্যাংজু এশিয়ান গেমস সামনে রেখে ইতোমধ্যে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। যথারীতি দলে রয়েছেন রাজশাহীর ছেলে শিতুল। টানা তৃতীয়বারের মতো (২০১৪ ইনচনেও ছিলেন) এশিয়াডে খেলতে যাচ্ছেন তিনি। এশিয়ান গেমস সামনে রেখে কোরিয়ান হাইপ্রোফাইল কোচ ইয়ং কিউ কিমের অধীনে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অনুশীলন ক্যাম্প করছেন শিতুলরা। সব মিলে বেশ ভালো প্রস্তুতি বলা যায়। আসন্ন এশিয়ান গেমসে নিজেদের সবশেষ প্রস্তুতি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ছাড়া ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন শিতুল। সেসবই প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলোা...

প্রশ্ন : এশিয়ান গেমস সামনে রেখে দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে ট্রেনিং হচ্ছে। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই হ্যাংজুর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। সব মিলে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন হলো?

শিতুল : ফিটনেস টেস্ট দিয়ে ক্যাম্পের শুরু হয়। কারণ দীর্ঘদিন আমাদের খেলা ছিল না। তাই ফিটনেসে শুরুতে কিছুটা ঘাটতি ছিল। টানা অনুশীলন ক্যাম্প করার ফলে দলের সবার ফিটনেস এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দলে কোনো ইনজুরি সমস্যা নেই। প্রস্তুতির কথা যদি বলি বিদেশী কোনো টিমের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি; তবে ফেডারেশন আমাদের জন্য খুব ভালো একটা ব্যবস্থা করেছে যে তিন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বেশ কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করেছে। ম্যাচগুলোতে সবাই ভালো করছে। এর বাইরে ফেডারেশন আমাদের জন্য একজন ভিডিও কোচ নিয়োগ দিয়েছে। এটাও একটা ভালো দিক। সর্বোপরি আমাদের উন্নতি দিন দিন বাড়ছে। কোচ এখন টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে কাজ করছেন। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেনাল্টি কর্নার নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা ঠিকঠাক রপ্ত হয়ে গেলেই প্রস্তুতিতে শতভাগ পরিপূর্ণতা চলে আসবে।

প্রশ্ন : এশিয়ান গেমসের জন্য কোরিয়ান হাইপ্রোফাইল কোচ ইয়ং কিউ কিমকে নিয়োগ দিয়েছে ফেডারেশন। আপনি এক দশক ধরে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলছেন। অনেক কোচের অধীনে খেলার সুযোগ হয়েছে। কিমের কাছ থেকে নতুন কি কি রপ্ত করলেন?

শিতুল : হকিতে সব কোচের টেকনিক-ট্যাকটিস প্রায় একই রকম। কিমের অধীনে খুব বেশি কিছু পরিবর্তন আমার চোখে পড়েনি। তবে কিছু দিক তো থাকেই যেমন অ্যাটাকিং দিকটা কিমের খুবই ভালো। ফরোয়ার্ডদের ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন কিম। এটা ব্যক্তিগতভাবে ফরোয়ার্ডদের উন্নতির জন্য্য ভালো। ইমপ্যাক্ট ডিফেন্স যেটা বলা হয় বিশেষ করে বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচে সেখানেও জোর দিচ্ছেন কিম। আমাদের গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান, জাপানের মতো শক্তিশালী দল রয়েছে। এমন দলগুলোর বিপক্ষে রক্ষণে যেভাবে খেলার দরকার সেগুলোও কিমের অধীনে আমরা রপ্ত করছি। বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচে আমরা যেন ছন্নছাড়া না হয়ে পড়ি; টিম ইউনিটি যেন ঠিক থাকে সেসব নিয়ে কাজ হয়েছে।

প্রশ্ন : কিম শুরুতে আপনাদের ফিটনেস নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন। এখন আপনাদের ফিটনেস নিয়ে কোচের অভিমত কী?

শিতুল : গেল দুই মাসে আমরা সকাল-বিকেল দুইবেলা টানা অনুশীলন করছি। ফিটনেস সেশন চলছে নিয়মিতই। ফিটনেসে আমার মনে হয় না কারোর ঘাটতি আছে। আমি আগেই বলেছি, অনেকদিন আমাদের মাঠে খেলা ছিল না বিধায় শুরুতে ফিটনেসে কিছুটা সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। আমরা টেকটিক্যাল বিষয়গুলোতে এখন মনোনিবেশ করছি। কোচ যেভাবে টেকটিক্যাল বিষয়গুলো আমাদের দেখাচ্ছেন সেগুলো আমরা যদি মাঠে শতভাগ প্রয়োগ করতে পারি আশাকরি দল এশিয়ান গেমসে ভালো রেজাল্ট করবে।

প্রশ্ন : ভালো রেজাল্ট বলতে কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে কি! যেহেতু সবশেষ এশিয়ান গেমসে আপনারা ষষ্ঠস্থানে ছিলেন। যা এশিয়াডে হকির সেরা রেজাল্ট ছিল।

শিতুল : গ্রুপটা এবার যেভাবে করা হয়েছে গতবার স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ছিল বেশি। এবার এশিয়ান হকি ফেডারেশন সেটা কমিয়েছে। এবার যেমন পুল এ-তে থাকা তিন নম্বর দল পুল বি-এর তিন নম্বরের সঙ্গে খেলবে। অর্থাৎ পাঁচ এবং ছয় নম্বর পজিশনের জন্য লড়বে। একইভাবে গ্রুপে যে দল চার নম্বরে থাকবে তারা সাত-আট পজিশনের জন্য পরস্পরের মুখোমুখি হবে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের গ্রুপে থাকা বড় একটা দলের বিপক্ষে ভালো রেজাল্ট বের করে আনতে পারি, তাহলে আমাদের আর সাত-আটের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা পাঁচণ্ডছয় পজিশনের জন্য খেলব। আমাদের সেই টার্গেট অবশ্যই আছে বড় দলের বিপক্ষে ভালো খেলার।

প্রশ্ন : গ্রুপ তো চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আপনাদের গ্রুপে কারা পড়েছে?

শিতুল : ভারত, পাকিস্তান, জাপান, সিঙ্গাপুর, উজবেকিস্তান এবং বাংলাদেশ। আমরা পুল এ-তে আছি।

প্রশ্ন : আপনারা এবার শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছেন। প্রতিপক্ষ নিয়ে কি কি কাজ করছেন?

শিতুল : আমাদের অনুশীলন কার্যক্রমে প্রতিদিন একবেলা ভিডিও সেশন থাকছে। সখানে আমরা আমাদের গ্রুপে থাকা প্রতিপক্ষের শক্তিশালী এবং দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কাজ করছি। তাছাড়া কিছুদিন আগে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হলো। সেখানে কিন্তু এই দলগুলোই খেলেছে। সেসব ম্যাচের ভিডিও আমরা দেখছি। সেখান থেকেও অনেক কিছু বের করার চেষ্টা করছি। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কীভাবে খেলবে, সেসব বিষয়েও টুকটাক ধারণা নিচ্ছি।

প্রশ্ন : সবশেষ এশিয়ান গেমস অর্থাৎ ২০১৮ ইন্দোনেশিয়াতে অনুষ্ঠিত এশিয়াডে আপনি অধিনায়ক ছিলেন। আপনার নেতৃত্বে দল ষষ্ঠস্থান অর্জন করেছিল, যা হকির ইতিহাসে এশিয়াডে সর্বোচ্চ রেজাল্ট। এর আগে ২০১৪ সালে ইনচন এশিয়ান গেমসেও আপনি খেলেছেন। হ্যাংজুতে এবার ব্যক্তিগত লক্ষ্যটা কি থাকবে?

শিতুল : তৃতীয়বারের মতো এশিয়ান গেমসে খেলতে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত দিক থেকে এটা অবশ্যই অনেক বড় প্রাপ্তি। আল্লাহ পাক সুস্থ রেখেছেন বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। এর বাইরে আমরা চেষ্টা, পরিশ্রম, হকির প্রতি আন্তরিকতা, ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল। এজন্য ফেডারেশন, কোচদেরও আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আমার ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে বলেই আমি স্কোয়াডে আছি এবং আবারো এশিয়াডে খেলতে যাচ্ছি। হকি দলগত খেলা। এখানে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে দেখানোর সুযোগ কম। তবে আমি যেহেতু একজন ডিফেন্ডার অবশ্যই আমি আমার জায়গায় সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব; যা আমি জাতীয় দলে দীর্ঘদিন দিচ্ছি। যদিও আধুনিক হকিতে এখন নির্দিষ্ট পজিশন বলে কিছু নেই। আপনাকে ওপরে গিয়েও খেলতে হবে; আবার নিচে নেমে প্রতিপক্ষের আক্রমণও রুখতে হবে।