জামাল ভূঁইয়া কী বাংলাদেশের সেরা পারফরমার ?

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

জামাল ভূঁইয়ার জন্ম ডেনমার্কের আধুনিক অগ্রসর সমাজে। বেড়ে ওঠা কোপেনহেগেনের অলিগলিতে। সেখানে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এসে ফুটবল ক্যারিয়ারকে শুরু করেন। লাল-সবুজ জার্সিতে সবচেয়ে বেশি ৭৬ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলারের। ৭৬ ম্যাচে তার গোল একটি। ২০১৮ সাল থেকে মাঠে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন জাতীয় দলকে। অনেকের মতে, জামাল ভূঁইয়ার পারফরম্যান্স ভাটার দিকে। ৯০ মিনিট মাঠে খেলার শারীরিক সামর্থ্য এখন তার আর নেই। জাতীয় দলের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচ এবং শেষ হওয়া ঘরোয়া মৌসুমে জামাল ভূঁইয়ার পারফরম্যান্সের গ্রাফই বলে দিচ্ছে কোথায় দাঁড়িয়ে তিনি। ঘরোয়া ফুটবল হোক কিংবা জাতীয় দল- জামাল ভূঁইয়া এখন সর্বোচ্চ ৭০ মিনিটের খেলোয়াড়। গত ফুটবল মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে ৩১টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে লিগের ২০টি। বাকি ১১ ম্যাচ স্বাধীনতা ও ফেডারেশন কাপে। জামাল ভূঁইয়া লিগের একটি ম্যাচে দলে ছিলেন না কার্ড সমস্যায়। অন্য ম্যাচগুলোতে তিনি স্কোয়াডে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা সময় গিয়ে তাকে বসিয়ে দিয়েছেন কোচ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ২০ ম্যাচের একটিতে সাসপেন্ড ছিলেন। বাকি ১৯ ম্যাচের একটিতে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে জামালকে একাদশের বাইরে রেখেছিলেন রাসেলের কোচ। ৬৮ মিনিটে মো. সোহেল রানার বদলি হিসেবে অধিনায়ককে মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। প্রিমিয়ার লিগের ১৬ ম্যাচেই জামাল ভূঁইয়াকে পরিবর্তন করেছেন কোচ। তিনি শেখ রাসেলের জার্সিতে লিগে খেলেছেন গড়ে ৭২ মিনিট করে। কোনো গোল নেই। ঘরোয়া ফুটবলে জামালকে নিয়ে তাই আগ্রহ নেই কোনো ক্লাবের। সমর্থকপুষ্ঠ মোহামেডান-আবাহনীর মতো ক্লাব কখনো তাকে পাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। এবারতো কোন ক্লাবই চায়নি তাকে নিতে। শেষ পর্যন্ত শেখ রাসেলে ৩০ ভাগ পারিশ্রমিক কমিয়ে খেলার অঙ্গীকার করেছিলেন জামাল। পরে তিনি যোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের ক্লাব সোল দ্য মায়োতে। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ খেলেছে ৪ ম্যাচ। এর মধ্যে গ্রুপপর্বে ভুটানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জামালকে ৯০ মিনিট খেলিয়েছিলেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। গ্রুপের অন্য দুই ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে ৫৭ মিনিটে তাকে বসিয়ে মো. হৃদয়কে ও মালদ্বীপের বিপক্ষে ৬৩ মিনিটে তাকে বসিয়ে মোরসালিনকে নামিয়েছিলেন কোচ। সেমিফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও জামালকে পূর্ণ সময় মাঠে রাখতে পারেননি ক্যাবরেরা। ৬৯ মিনিটে জামালকে বসিয়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে মাঠে নামান তিনি। সাফে চার ম্যাচে তিনি খেলেছেন ২৭৯ মিনিট। যার গড় ৭০ মিনিট। সবশেষ ৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ৬০ মিনিটে জামালকে বসিয়ে দেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। প্রায় প্রতি ম্যাচে অধিনায়ক বদল। মাঠে দাঁড়িয়ে আর্মব্যান্ড পরিবর্তন- বাংলাদেশ দলে এমন দৃশ্য এখন নিয়মিত। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলের শেষ ম্যাচগুলোতে পরিষ্কার জামালের ৯০ মিনিট খেলার শারীরিক সামর্থ্য নেই। বল রিকভারির সক্ষমতা নেই বললেই চলে। এসব পরিসংখ্যান আর আগামীতে সময়মতো তাকে না পাওয়ার অনিশ্চিয়তা মিলে টিম ম্যানেজমেন্ট অধিনায়ক হিসেবে জামাল ভূঁইয়ার বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। যে কোনো কোচই চান দলের সিনিয়র ও সেরা পারফরমারকে অধিনায়ক হিসেবে দেখতে। জামাল ভূঁইয়া এখন বাংলাদেশ দলের সেরা পারফরমার নন। তাছাড়া নিয়মিত অধিনায়ক বদলকে ভালো চোখে দেখছেন না জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক শেখ মোহাম্মদ আসলাম। তিনি এটাকে লজ্জা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন, ‘এটা লজ্জার। প্রতি ম্যাচে অধিনায়ককে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে মানেই তিনি পুরো ফিট নন। ৯০ মিনিট খেলার সামর্থ্য নেই তার। অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া উচিত দলের সেরা খেলোয়াড়ের। যাকে পুরো সময় খেলানো সম্ভব না তাকে অধিনায়ক রাখাও ঠিক না। প্রতি ম্যাচে আর্মব্যান্ড বদল, এটা দৃষ্টিকটু।’ আরেক সাবেক অধিনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু অবশ্য এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা হতেই পারে। এটা তেমন কোনো ইস্যু নয়। এটা কোচের কৌশলও হতে পারে। কোচ হয়তো দেখছেন জামাল ৬০ মিনিট পারফরম্যান্স করেন, তাই তাকে ততক্ষণই খেলান। কখন কাকে বসিয়ে কাকে নামালে ম্যাচে সুবিধা হবে কোচ সেভাবেই পরিবর্তনগুলো করেন। আর অধিনায়ক হলেই যে তাকে পুরো সময় খেলতে হবে তারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।