উত্তেজনার ম্যাচে আফগানিস্তানের সঙ্গে ফের ড্র বাংলাদেশের

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ম্যাচটি ছিল ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। কিন্তু সেই ম্যাচের প্রীতি ছিলনা মোটেও। একপর্যায়ে মাঠ থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ডাগআউটেও। তাতে ম্যাচের প্রথমার্ধেই লাল কার্ড দেখেন দুই দলের দুই কোচ। লাল কার্ড দেখে রেগে নিজেদের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে উঠিয়ে নিতে চেয়েছিলেন আফগান কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি। অবশ্য এমন উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি কোনো দলই। তাই আরও একবার ড্র মেনেই মাঠ ছাড়তে হলো দুই দলকে। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। ফলে সিরিজও ড্র হয়েছে। র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আফগানিস্তান। সেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দুটি ম্যাচই ড্র করেছে বাংলাদেশ। তবে দুই ম্যাচই বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। বিশেষ করে আজকের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল। কখনো আফগান গোলরক্ষক, কখনো ফিনিশিং দুর্বলতায় বাংলাদেশের ম্যাচটি জেতা হয়নি। তাই আফসোস নিয়েই সিরিজ সমাপ্ত হলো। সিরিজের ড্রয়ে অবশ্য অবদান রয়েছে তরুণ উদীয়মান শেখ মোরসালিনের। ম্যাচের ৫২ মিনিটে কর্নার থেকে জাভার সারজা আফগানদের লিড এনে দেন। পিছিয়ে পড়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশ ম্যাচে সমতা আনে। গত ম্যাচে সহজ সুযোগ মিস করা উদীয়মান তারকা ফুটবলার শেখ মোরসালিন আজ অবশ্য ভুল করেননি। ডান প্রান্ত থেকে বিশ্বনাথ ঘোষের বাড়ানো বলে গোলরক্ষকের সঙ্গে হাত মেলানো দূরত্বে প্লেসিংয়ে গোল করেন মোরসালিন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সংকট গোল স্কোরিং। তরুণ এই ফুটবলারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে ব্যাঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে। সাফের চার ম্যাচে মোরসালিন দুই গোল করেছেন। এই সিরিজের দুই ম্যাচে করলেন আরেকটি গোল। ছয় ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যে তিন গোল করেছেন ফরিদপুর থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার। অধিনায়ক জামাল ভুইয়া গত ম্যাচ ৬০ মিনিট খেলেছিলেন। আজ কোচ তাকে ৯০ মিনিট পর তুলেছেন। দ্বিতীয়ার্ধ। কয়েকটি গোল মিস করেছেন অধিনায়ক। জামাল ভূইয়া ৬০ মিনিটে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ফ্রি কিক পোস্টের উপর দিয়ে মারেন। ৬৮ মিনিটে অধিনায়ক জামাল আরেকটি সুযোগ মিস করেন। বক্সের মধ্যে তার শট ডিফেন্ডাররা ব্লক করেন। সেটি অবশ্য বাংলাদেশ দল পেনাল্টির দাবি জানান। নেপালী রেফারি সেই আবেদন নাকচ করে দেয়। ম্যাচের শেষ বিশ মিনিট বাংলাদেশ আফগানদের দুর্গে হানা দিয়েছে বারবার। আফগানরা কাউন্টার অ্যাটাকে তেমন ভীতিকর কিছু করতে পারেননি। রেফারি প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও লাল কার্ড বের করেছেন। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি সময়ে শায়েস্তাকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। প্রথমার্ধ আলোচনায় দুই দলের দুই কোচের লাল কার্ড ও বৃষ্টি। ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের খেলোয়ড়রা মেজাজ হারাচ্ছিলেন। ম্যাচের ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ অর্ধে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে দুই দলের ডাগআউট। আফগানিস্তানের কুয়েতী কোচ আব্দুল্লাহ আল মুতাইরী নিজ ডাগ আউট ছেড়ে বাংলাদেশের ডাগ আউটের দিকে তেড়ে আসেন। বাংলাদেশের কোচিং স্টাফরাও বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হন। দুই-এক মিনিট ধরে হাল্কা ধস্তাধস্তিও হয় দুই পক্ষের মধ্যে। ম্যাচ পরিচালনায় নিয়োজিত নেপালি রেফারিরা অবশ্য পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ আনেন। বাংলাদেশের সহকারী কোচ হাসান আল মামুনকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান।

বাংলাদেশ ডাগ আউটের সামনে কার্ড প্রদর্শনের পরপরই রেফারি প্রাঞ্জল ছেত্রী দৌড়ে গিয়ে আফগান কোচ আব্দুল্লাহ আল মুতাইরীকে লাল কার্ড দেখান। দুই ডাগ আউটই খানিকটা উত্তপ্ততা তৈরি হয়। দুই লাল কার্ড দেখানোর আগেই রেফারি দুই ঘটনায় বার হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন দুই ফুটবলারকে। দুইজনই বাংলাদেশের ফুটবলার। ম্যাচের ত্রিশ মিনিটের পর থেকে কিংস অ্যারেনার আকাশ কালো হতে থাকে। পয়ত্রিশ মিনিটের পর ঝড়ো বৃষ্টি শুরু হয়। গ্যালারিতে শেড না থাকায় দর্শকদের অনেকে জড়ো হয়ে গেটের নিচে দাড়ান। আবার অনেক দর্শক দেশের খেলার দেখার জন্য বৃষ্টির মধ্যেও ভিজেন। দুই লাল কার্ড ও বৃষ্টির আধিপত্যে শেষ হয় প্রথমার্ধ। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ-আফগানিন্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচে গোল হয়নি কিংস অ্যারেনার। দ্বিতীয় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে দুইটি গোল হয়েছে। কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ পরাজিত হয়নি, এটিও একটি প্রাপ্তি।