ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউএস ওপেনের নতুন রানি কোকো গফ

ইউএস ওপেনের নতুন রানি কোকো গফ

শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা আরিনা সাবালেঙ্কা প্রথম সেটেই রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন কোকো গফকে। কিন্তু লড়াকু গফ ভড়কে না গিয়ে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পরের দুই সেটে ফিরলেন দুর্দান্ত দাপটে। তাতে বেলারুশিয়ান প্রতিপক্ষ সাবালেঙ্কাকে ২-১ সেটে হারিয়ে জিতে নিয়েছেন নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। হলেন ইউএস ওপেনের নতুন রানি। ২০১৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকেই গ্র্যান্ড স্ল্যামে নিয়মিত মুখ গফ। সর্বোচ্চ অর্জন ছিল গত বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে খেলা। সেবার ফাইনাল থেকে হতাশা নিয়ে ফিরলেও এবার আর নিরাশ হতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই জিতে নিয়েছেন নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে সাবালেঙ্কার বিপক্ষে গফের জয় ২-৬, ৬-৩ ও ৬-৩ গেমে। সেই সঙ্গে ছুঁয়ে ফেললেন সেরেনা উইলিয়ামসকে। ১৯৯৯ সালে শেষবার কিশোরী সেরেনা জিতেছিলেন ইউএস ওপেন। এই শতাব্দীতে প্রথম কিশোরী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে সেই কীর্তি ছুঁলেন গফ। জিতলেন নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। একই সঙ্গে র‍্যাংকিংয়ে ৬ নম্বর থেকে উঠে এলেন তিন নম্বরে। চলতি বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন সাবালেঙ্কা। ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডনে সেমিফাইনালে বিদায় নিতে হয়েছিল। গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতে বছরের শেষটা করার সুযোগ ছিল তার। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নারী টেনিস খেলোয়াড় ইগা শিয়াটেক আগেই বিদায় নেয়ায় বিশ্বের এক নম্বর হয়েই ফাইনালে নেমেছিলেন সাবালেঙ্কা। কিন্তু ফাইনালে হেরে গেলেন তিনি। সাবালেঙ্কাকে হারিয়ে দিল এক কিশোরী খেলোয়াড়ের জেদ ও আত্মবিশ্বাস। নিজের শক্তির ওপর ভরসা রাখলেন কোকো গফ। সাবালেঙ্কার শক্তির পাল্টা জবাব দিলেন। আর তাতেই বাজিমাত করলেন তিনি। প্রথম সেটের প্রথম গেমেই নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান সাবালেঙ্কা। ফাইনালের চাপে নিজের প্রথম সার্ভিস ধরে রাখতে পারেননি গফ। প্রথম গেমে গফের সার্ভিস ভেঙে এগিয়ে যান সাবালেঙ্কা। দ্বিতীয় গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন বেলারুশের এই প্রতিযোগী। তার খেলা দেখে মনে হচ্ছিল গফ প্রথম সেটে পয়েন্টই পাবেন না। কিন্তু সাবালেঙ্কার ভুলেই খেলায় ফেরেন গফ। তৃতীয় গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন গফ। চতুর্থ গেমে ভুল করতে শুরু করেন সাবালেঙ্কা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়তি গফকে। গ্যালারিতে তখন বসে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, মারিয়া শারাপোভা, নিকোল কিডম্যানরা। তাদের সামনে ম্যাচে ফেরার প্রত্যয় দেখান গফ। গোটা আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়াম পাশে ছিল ১৯ বছরের গফের। তিনি একটি করে পয়েন্ট জিতলে হাততালিতে কান পাতা যাচ্ছিল না। তবে প্রথম সেট শেষ পর্যন্ত সাবালেঙ্কা জিতলেন ৬-২ ব্যবধানে। দ্বিতীয় সেটের শুরুতেও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন গফ। আবার ব্রেক পয়েন্ট পেয়ে গিয়েছিলেন সাবালেঙ্কা। কিন্তু এবার হাল ছাড়েননি গফ। পরপর তিনটি পয়েন্ট জিতে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে সাবালেঙ্কার আত্মবিশ্বাস চরমে। তাই আর্থার অ্যাশ কোর্টের সমর্থনও কাজে আসছিল না গফের। নিজের সার্ভিস ধরে রেখে ১-১ করেন সাবালেঙ্কা। তৃতীয় সেটের প্রথম গেমেই সাবালেঙ্কার সার্ভিস ভেঙে এগিয়ে যান গফ। যত সময় গড়াচ্ছিল তত ডানা মেলছিলেন তিনি। প্রতিটি শট থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে গফের পাশাপাশি নিজের বিরুদ্ধেও খেলতে হচ্ছিল সাবালেঙ্কাকে। বারবার মেজাজ হারাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত হারলেন ৬-২ ব্যবধানে। নিউইয়র্কের ফাইনালে আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করা গফ যেন নিজের এ জয়কে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি এ মুহূর্তে স্তব্ধ। আমার মনে হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা আমাকে কষ্টের ভেতর দিয়ে এটি দিয়েছেন। হয়তো অর্জনটাকে আরো মধুর করার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ। এই অনুভূতি ব্যক্ত করার কোনো ভাষা নেই।’

জয়ের পর দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিয়ে গফ গ্যালারিতে গিয়ে উদ্যাপন করেছেন তার মা-বাবার সঙ্গে। পরিবারের সঙ্গে উদ্যাপনের অনুভূতি নিয়ে গফ বলেছেন, ‘আমি যখন আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তার মুখ দেখিনি। কারণ, তিনি আমাকে জড়িয়ে ছিলেন। তবে আমি তাঁর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েছি। আমি কখনো মানুষটিকে কাঁদতে দেখিনি। আর আমার মা, আমি জানতাম আমি হারি কিংবা জিতি তিনি কাঁদবেনই। আমি সারাক্ষণই নিজেকে বলছিলাম, হে সৃষ্টিকর্তা এটা কি আসলেই সত্যি?’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত