ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাক্ষাৎকার : এশিয়ান গেমস হকি

‘প্রস্তুতি ভালো হয়েছে এবার মাঠে প্রমাণের পালা’

‘প্রস্তুতি ভালো হয়েছে এবার মাঠে  প্রমাণের পালা’

দেখতে দেখতে হকিতে এক দশক পার করে দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মধ্যমাঠের পরীক্ষিত চৌকষ খেলোয়াড় রোমান সরকার। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার ইপোতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ দিয়ে লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক তার। এরপর কেটে গেছে অনেকটা বছর। গেল এক দশকে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট-সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে রোমানের। জাতীয় দলের জার্সিতে ১৮টা গোলও নিজের নামের পাশে যোগ করেছেন। চলতি মাসের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আরো একটা আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিতে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন স্কুল হকি টিম থেকে উঠে আসা কুমিল্লার ছেলে রোমান। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর চীনের হ্যাংজু শহরে অনুষ্ঠিত হবে ১৯তম এশিয়ান গেমস। আসন্ন গেমসে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন রোমান। হ্যাংজু এশিয়ান গেমসে নিজ দলের লক্ষ্য, প্রস্তুতি ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রোমান। আলোকিত বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য সেসব তুলে ধরা হলো...

প্রশ্ন : টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ান গেমস খেলতে যাচ্ছেন। এবার অধিনায়কও আপনি। কেমন হলো আপনাদের এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতি?

রোমান সরকার : জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ফিজিক্যাল ফিটনেস দিয়ে আমাদের হকি টিমের ক্যাম্প শুরু হয়। ফিটনেসকে প্রাধান্য দিয়ে ক্যাম্পের শুরু। প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে এখন আমাদের ফিজিক্যাল কন্ডিশন অনেক ভালো। এরপর শুরু হয় স্ট্রিক-বলের অনুশীলন। দুই বেলা টানা চলছে সেই অনুশীলন। এখন কোচের দেয়া পরিকল্পনাগুলো যদি আমরা মাঠে শতভাগ অ্যাপ্লাই করতে পারি; তাহলে ভালো ফল প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

প্রশ্ন : ভালো রেজাল্ট বলতে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য কী নির্ধারণ করেছেন?

রোমান সরকার : আমরা টুর্নামেন্টের শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছি। আমাদের গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান, জাপান, সিঙ্গাপুর ও উজবেকিস্তান রয়েছে। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, জাপান খুবই শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে প্রতিপক্ষ যে বা যারাই হোক, আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে মাঠে লড়াই করব এবং ভালো ফল বের করে আনব।

প্রশ্ন : ক্যাম্পের শুরুর দিকে প্রধান কোচ কোরিয়ান কিম ইয়ং কিউ আপনাদের ফিটনেস নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। কোচের ভাবনায় কি পরিবর্তন এসেছে?

রোমান সরকার : একজন কোচ যখন শুরুতে কোনো টিমের দায়িত্ব নেন, তখন কোচের যেমন অনেক কিছু বুঝতে সময় লাগে খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও তাই। কোচ কখনো রেগে হয় তো এমনটা বলেছিলেন। আমরা যখন মাঠে শতভাগ দিতে পারব না তখন ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে কথা শুনতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোচও আমাদের বুঝতে পেরেছেন।

আমাদের ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। এখন আমরা সবাই সম্পূর্ণরূপে ফিট আছি। বলা হচ্ছে আমরা দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প করেছি। আসলে দুই/আড়াই মাস কিন্তু খুব বেশি সময় না। আপনি যখন নতুন ফর্মেশন শুরু করবেন; তখন কিন্তু এটা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে হবে। দেড়/দুই বছর কাজ করলে সেটার ফল আরো ভালো হতো।

প্রশ্ন : প্রস্তুতি ম্যাচের ঘাটতি বিষয়ে কী বলবেন?

রোমান সরকার : সত্যি বলতে কী প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার বিকল্প ভাবনা নেই। তবে এটা নিয়ে পড়ে থাকলেও হবে না। আমরা হয় তো বাইরের টিমের বিপক্ষে খেলেনি। কিন্তু বাহিনীর দলগুলোর বিপক্ষে আমরা ঘরের মাঠে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলেছি। সেই ম্যাচগুলোতে আমাদের যে ভুলভ্রান্তি ছিল সেগুলো ভিডিও অ্যানালিস্টের মাধ্যমে শোধরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফেডারেশনের আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না। সাঈদ ভাই, রানা ভাই সবাই চেষ্টা করেছিলেন বাইরের কোনো দলের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজন করার। সেটা হয়নি। তবে গেমস শুরুর যেহেতু তিন থেকে চার দিন আগে আমরা হ্যাংজুতে যাচ্ছি; সেখানে গিয়েও যদি বাইরের কোনো টিমের সঙ্গে খেলতে পারি তাহলে সেটাও আমাদের জন্য ভালো হবে।

প্রশ্ন : এশিয়াড একটা বড় মঞ্চ। গতবার আপনি দলে ছিলেন। আপনাদের দল ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিল, যা এশিয়ান গেমসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ হকি টিমের সর্বোচ্চ ভালো ফল। এবারো আপনি দলে আছেন এবং অধিনায়ক। পূর্বের রেজাল্ট কি আপনাদের বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করবে নাকি অনুপ্রেরণা জোগাবে?

রোমান সরকার : দলকে একটা ভালো রেজাল্ট এনে দিতে হবে- এই চাপ তো সেব খেলাতেই কম বেশি থাকে। যেহেতু আমরা গতবার ছয় নম্বরে অবস্থানে ছিলাম। সেই অবস্থানকে ধরে রেখে সামনে আরো কীভাবে এগুনো যায় সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে।

প্রশ্ন : আড়াই মাসের ট্রেনিংয়ের পর ৪০ জন থেকে চূড়ান্ত স্কোয়াডে ১৮ জনকে বেছে নেয়া হয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে আপনি আপনার দলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

রোমান সরকার : একটা টিম যখন গঠিত হয়ে গেছে সেটাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। কোচ, ম্যানেজমেন্ট সবাই মিলে দলটা গঠন করেছেন।

আমাদের কাজ মাঠে খেলে সেরাটা বের করে নিয়ে আসা। সেই লক্ষ্যই থাকবে। আর অধিনায়ক হিসেবে যদি বলি তাহলে বলব ম্যানেজমেন্ট তাদের সেরা চেষ্টাটাই করেছেন দল নির্বাচনে। আশাকরি দলের সবাই মিলে একটা ভালো ফল এনে দিতে পারব।

প্রশ্ন : এশিয়ান গেমসে ব্যক্তি রোমানের লক্ষ্যটা কী থাকবে?

রোমান সরকার : আপনার জানেন হকি দলগত খেলা। তারপরও যদি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কথা বলেন আমি একজন মিডফিল্ডার।

আমি চেষ্টা করব মাঝমাঠে বলটা ঠিকঠাক রাখা। ফরোয়ার্ডদের বল জোগানের কাজটা ঠিক মতো করা। দল যখন সাফল্য পাবে এটা আমার ব্যক্তিগত খাতাতেও যোগ হবে। দলের সাফল্য মানে খেলোয়াড়দের সাফল্য।

প্রশ্ন : আপনি দলে মাঝ বয়সি খেলোয়াড়দের একজন। টিমে জিমি, শিতুল, মিলন, মিমো, রেজাউল বাবুর মতো সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা রয়েছেন।

তরুণদের মধ্যে বিপ্লব, আরশাদ, হুজাইফা, নয়ন, মেহেদি, শুভরা রয়েছেন। দলে সিনিয়র-জুনিয়রদের তালমেলটা কেমন? অধিনায়ক হিসেবে সবার কাছ থেকে কী সমান সহযোগিতা পাচ্ছেন?

রোমান সরকার : চূড়ান্ত দল কিংবা দলের বাইরে থাকা সকল খেলোয়াড়ের সঙ্গেই আমরা সম্পর্কটা চমৎকার। ক্যাম্পে আমার রুমমেট শিতুল ভাই, মেহেদীদের সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক। সবাই আমার কথা শোনেন; আমাকে পূর্ণ সাপোর্ট করেন। আমিও সবার কাছ থেকে পরামর্শ নেই। কোন জিনিসটা করলে ভালো হবে, কোন জিনিসটা খারাপ হবে। এভাবেই ক্যাম্প চলছে। গেমসেও আশাকরি এর ব্যত্যয় হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত