ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুঃসময় তাড়িয়ে নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনালেন শান্ত

দুঃসময় তাড়িয়ে নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনালেন শান্ত

পৃথিবীতে যত মানুষ সফল হয়েছেন, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জীবনের কোনো না কোনো সময় তাদের কোনো না কোনো বড় বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। বারবার আছাড় খেয়েই তো মানুষ হাঁটতে শেখে। তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নাজমুল হোসেন শান্ত। কয়েক মাস আগেও যিনি সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার স্বীকার হয়েছেন। মূলত অব ফর্ম ও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে না পারায় তাকে বিভিন্ন সময়ে ট্রল ও সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হতে হয়েছে। এখন সেই শান্তই বাংলাদেশের টপ অর্ডারের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক। এই ব্যাটারের দিন বদলাতে শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসর থেকেই। তিনি সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন নিজের ব্যাট দিয়েই। গেল বিপিএল দিয়ে শুধু তিনি ফর্মেই ফেরেননি, বরং হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা! এটি যেন ছিল সমালোচকদের মুখে মোক্ষম চপেটাঘাত! দিনের পর দিন খারাপ পারফম্যান্সের পরও নির্বাচক প্যানেল শান্ততে যে আস্থা রেখেছিলেন, সেটির পরিপূর্ণ প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন ২০২৩ সালে এসেই! বিপিএল এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। এ বছর এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪৮৯ রান! ২০২২ সালে যেখানে ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ৬২.৫৬, সেখানে এ বছর তার স্ট্রাইকরেট ৮৬.৯২! ভঙ্গুর অবস্থা থেকে হঠাৎ করে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে উঠলেন, সে গল্পই শান্ত শুনিয়েছেন ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের বিশেষ সাক্ষাৎকারে। ২০২২ সালের পর ১৭ ওয়ানডেতে শান্তর ২ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটির সাফল্য প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, প্র্যাকটিসে সময় দিয়েছি প্রচুর, সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে দুর্বলতার নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। বিশেষ করে শট সিলেকশন থেকে শুরু করে স্কিল ডেভেলপমেন্টে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তিনি মানসিকভাবে পিছিয়ে ছিলেন এবং সেই জায়গাটায় উন্নতির জন্য বিশেষভাবে কাজ করেছেন বলেও জানান। ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজের ব্যর্থতার পর এ নিয়েও কাজ করেছেন বলে জানান শান্ত। বলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর দুর্বলতাকে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করেছি এবং একই ভুল যেন বারবার না হয় সেদিকে নজর দিয়েছি। খেলার ধরন বদলানো প্রসঙ্গে শান্ত জানান, আগে ব্যাটিং এ নামলে তার একই ধরনের প্যাটার্নে ব্যাট করতে হতো ফলে ব্যাট থেকে রান আসত না। কিন্তু এখন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার পর তার ব্যাটিংয়ে শট সিলেকশনে অপশন বেড়েছে। সেই সঙ্গে উইকেটের আচরণ বুঝে ব্যাটিং করার স্কিল তিনি উন্নতি করেছেন বলে খেলার ধরনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা কি না একটি পজেটিভ দিক। বেশ কয়েকটা ফিফটি করার পর সেটিকে সেঞ্চুরিতে পূর্ণ না করায় কোচ কিংবা টিম ম্যানেজম্যান্টের আক্ষেপ ছিল, কারণ শান্তর থেকে এখন টিম ম্যানেজমেন্ট বড় স্কোর আশা করে। এ ব্যাপারটিকে শান্ত উৎসাহ হিসেবে নিচ্ছেন। অবশ্য দলের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধটাও তিনি বুঝতে শিখছেন, যা কি না বাংলাদেশের জন্যই ভালো দিক। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে, এ প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমি যেটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করি সেটা হলো আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে কারণ প্রতিটি খেলাই হবে তীব্র প্রতিযোগিতার এবং সেখানে প্রতিটি দলই জিততে চাইবে। এটা একটা চাপ এবং চাপ সামলে পারফর্ম করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। এছাড়া ব্যাটারা উইকেটের গতিবিধি বুঝে ব্যাটিং করতে পারলে এ চ্যালেঞ্জ সহজেই উৎরানো যাবে।’ এবারের বিশ্বকাপে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছ থেকে অনেক কিছুই আশা করছে দেশবাসী। কারণ, শান্তর ব্যাট জ্বলে উঠলেই ব্যাটিং অর্ডারের দুশ্চিতা দূর হবে বাংলাদেশের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত