ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এশিয়া জয়ের পর বিশ্বসেরায় চোখ বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমার

এশিয়া জয়ের পর বিশ্বসেরায়  চোখ বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমার

পেশাদার বক্সিংয়ে পা রাখার পর থেকেই দারুণ ছন্দে আছেন বাংলাদেশের তারকা বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। একের পর এক সাফল্যে রাঙিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। এশিয়ার সেরা বক্সার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। প্রথমবারের মতো এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের সুপার লাইটওয়েট ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপে বেল্ট জিতেছেন বাংলাদেশের পেশাদার বক্সিংয়ের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন সুর কৃষ্ণ। গত রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রো-বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২.০ ফাইট নাইটে নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদকে হারিয়ে এই শিরোপা জিতেন রাঙামাটির ছেলে সুর। সুপার লাইট ওয়েটে বেল্ট জেতার আগে আরো ৪টি বড় আন্তর্জাতিক এবং একটি দেশীয় পেশাদার ম্যাচে দারুণভাবে জিতেছেন সুর কৃষ্ণ। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এগিয়ে চলেছেন তরতরিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম বক্সার হিসেবে বেল্ট জয় করা সুরের সামনে এটি ধরে রাখাও বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ, তিন মাস অন্তর বেল্টের লড়াই হয়। সেখানে বিশ্বের অন্য বক্সাররা তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁয়ে দিয়ে ফাইটের আমন্ত্রণ জানালে এবং সেই ফাইটে জিততে পারলে সুরের বেল্ট অক্ষত থাকবে; হেরে গেলে সেটি চলে যাবে অন্যের দখলে। তবে এসব নিয়ে আপাতত কোনো ভাবনা নেই সুরের। আপাতত কিছুদিন নিজেকে মেইনটেইনে ব্যস্ত রাখবেন। এ ব্যাপারে সুর কৃষ্ণ বলেন, ‘পেশাদার বক্সিংয়ে লড়াইটা এত সহজ নয়। আট রাউন্ড ফাইট করা শরীরের জন্য বিরাট এক ধকল। এর জন্য আপনাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনে থাকতে হবে। আমি যে এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের সুপার লাইটওয়েট ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী হলাম এখানে খেলার আগে থাইল্যান্ডে ১৮ দিন ছিলাম। সেখানকার নামি কোচের কাছে অনুশীলন করেছি।’ সুর কৃষ্ণ বরাবরই লড়াকু মানসিকতার একজন বক্সার। সেই বিকেএসপি থেকেই নিজেকে মেইনটেইন করে একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়াতেও দারুণ মেধাবী তিনি। কোটা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

এক বছরের চুক্তিতে বিকাশের ব্র্যান্ড এনডোর্সার হয়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতেই এই চুক্তি শেষ হবে। সুর কৃষ্ণ’র ভাবনা জুড়ে এখন কেবলই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়ার সেরা হয়েছেন। এবার বিশ্বসেরা হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান। এ ব্যাপারে সুর কৃষ্ণ বলেন, ‘২০২৪ সালের শেষ কিংবা ২০২৫ সালের শুরুতে আমি নিজেকে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে নিয়ে যেতে চাই। এর জন্য যত ত্যাগ-পরিশ্রম করতে হয় আমি করব। আমি দেখিয়ে দিতে চাই বক্সিংয়েও ক্যারিয়ার সুন্দর হয়। মিলিয়ন ডলার কামানো যায়। কারণ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পা রাখলেই আপনার হাতে চলে আসবে মিলিয়ন ডলার। টাকাটা জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজন। তবে সম্মানটা আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখে। আমি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাই।’ ছোট বেলায় সুর হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার, তবে হয়ে গেলেন দেশ সেরা পেশাদার বক্সার। ২০০৭ সালে বিকেএসপিতে ভর্তির সময় ফুটবলে জায়গা না পেয়ে অনেক খারাপ লেগেছিল সুরের। দেশের ফুটবলে যে অর্থ ও গ্ল্যামার, তা তাকে সেই বয়সেই বেশ টানত। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় বক্সিংয়ে যেতে হয়েছে।

মন খারাপ হলেও আস্তে আস্তে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রথম পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তো টানা ছয়টি ম্যাচ জিতে এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনে আলাদা করে নিজের নাম তুলে ধরেছেন। সুর কৃঞ্চ জানিয়েছেন, ফুটবলার না হতে পেরে এখন আর মনের মধ্যে কোনো আফসোস নেই, শুরুতে অনেকটাই ছিল। হয়তো ফুটবলার হতে পারলে অর্থ ও যশ অনেক থাকতে পারতো। তবে এখন বক্সিংয়ে এসে নিজের আলাদা জগত হয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক স্তরে ভালো করছি। দেশের নাম উজ্জ্বল হচ্ছে। সামনে অনেক দূর যাওয়ার সুযোগ আছে। তাই পেছনে ফিরে তাকাই না। রাঙামাটি শহর থেকে নৌপথে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে সুর কৃষ্ণ বাড়ি জোড়াছুড়ি যেতে হয়। নৌকাই নাকি যাওয়ার একমাত্র পথ। সেই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে সুর কৃষ্ণ এখন বাংলাদেশের বক্সিংয়ের আলোচিত নাম। তার পরিবারের কেউ বক্সিং করেননি। সুরের স্বপ্ন আকাশের মতো বিশাল। সেই স্বপ্নের ডালপালা এখন মেলে ধরতে পেরেছেন। সামনে নিশ্চয়ই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেই আশা বুকের মাঝে লালন করে এগিয়ে চলেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত