ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ ধর্মশালায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের সামনে বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড

আজ ধর্মশালায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের সামনে বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড

মাঠের বাইরের কিছু বিতর্ককে সঙ্গী করেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে খেলতে ভারতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে টাইগাররা। ৯২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের এই জয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ শিবির। জয়ের সেই ধারা পরের ম্যাচেও অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এমন লক্ষ্য নিয়েই আজ সকাল ১১টায় ধর্মশালায় নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটে বিধ্বস্ত হয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। নিশ্চিতভাবেই তারা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে পারফরমেন্স আশানুরূপ নয়। তবে ছেড়ে কথা বলবে না টাইগাররা। ধর্মশালার মন্থর ও নিচু উইকেটে ইংল্যান্ডের হতাশাজনক অতীত রেকর্ডও বাংলাদেশের জয়ের আশাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ধর্মশালা স্টেডিয়ামটির আউটফিল্ড নিয়ে খানিকটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। তবে আউটফিল্ড নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ বলেন, ‘আমরা কোনো কিছুতে ফিল্ডারদের সীমাবদ্ধতার ভেতর আনতে চাচ্ছি না। কারণ সীমা বেঁধে দিলে তারা তাদের শতভাগ দেবে না। আমি নিশ্চিত তারা আগের ম্যাচে ভালো করেছে। তাই এমন আউটফিল্ড থেকে আমরা চাচ্ছি তারা যেন নিজের সেরাটা দেয়।’ শ্রীলঙ্কান এই সাবেক স্পিন লিজেন্ট আরো যোগ করেন ‘আমি মনে করি আইসিসি এটা (আউটফিল্ড) নিয়ে খুব পরিশ্রম করেছে।

তাই এক্ষেত্রে, যেহেতু এটি স্টান্ডার্ড বজায় রেখেছে, তাই তারা (আইসিসি) আন্তর্জাতিক ওয়ানডে আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে। সুতরাং, আমি এই আউটফিল্ড নিয়ে খুশি।’ অপরদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে কিছুটা হলেও চাপে আছে ইংল্যান্ড। এমন বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড কি আরো ভয়ংকর রূপে দেখা যেতে পারে? সেটা সময় বল দিবে, তবে নিশ্চিতভাবে অমন হারের পর ইংলিশরা বাড়তি চাপে থাকবে নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশের বিপক্ষেই ২০১৫ সালে হারের পর তাদের ওয়ানডে ক্রিকেটে যে বিপ্লবের শুরু হয়েছিল, তার সর্বাধিনায়ক ছিলেন ইয়ন মরগান। সাবেক এই অধিনায়ক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর বলেছেন, ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিলেন না। আর জো রুট বলেছেন, ‘সামনে আর চেক ড্রাইভে আউট হতে দেখবেন না, মারলে পুরোদমে।’ ইংলিশ ড্রেসিংরুমে যা আবহ, বাংলাদেশের বিপক্ষে যথেষ্ট আগ্রাসী ইংল্যান্ডেরই দেখা মিলবে। তবে তা মোকাবিলা করতে বলা যায় প্রস্তুতই আছে বাংলাদেশ। গেল ম্যাচে সাকিব-মিরাজ মিলে আফগানদের গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। আর বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা তো এখন পেস বোলাররাই।

২০২২ সাল থেকে গড়ের হিসাবে বাংলাদেশের পেস বোলাররা সেরা তিনে অবস্থান করছেন। তবে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জন্য ধীরে ধীরে বড়সড় দুশ্চিন্তায় পরিণত হচ্ছেন লিটন দাস, যাকে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভাবে দল। ফর্মহীনতায় ভোগা লিটন বিশ্বকাপের শুরুও করেছেন মলিনভাবে, ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এবছরে তার ব্যাটিং গড় ২৩.৪০। বাংলাদেশের ব্যাটারদের হাই-পেসে অনভ্যস্ততার দরুন অস্বস্তি আছে যথেষ্ট।

মার্ক উড তাই বিশাল হুমকি। আদিল রশিদ যদিও ফর্মে নেই, তবে লেগ স্পিনটাও বাংলাদেশকে দেখেশুনে সামলাতে হবে। আফগানরা বোলারদের পরীক্ষা নিতে পারেনি ওভাবে, ইংলিশদের বিপক্ষে একই কম্বিনেশনে কি দল নামাবে বাংলাদেশ, সে ভাবনাও থাকবে। পাঁচ জেনুইন বোলারের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পার্ট-টাইম অফ স্পিন, নাকি রিয়াদের জায়গায় বাড়তি স্পিনার হিসেবে শেখ মেহেদী হাসান কিংবা নাসুম আহমেদকে খেলানো। বোলিংয়ে বাড়তি অপশন নাকি ব্যাটিংয়ে গভীরতা ধরে রাখা, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, নির্ভর করবে পিচের উপর। কিন্তু ধর্মশালার পিচ থেকেও আদতে বেশি আলোচনা হচ্ছে আউটফিল্ড নিয়ে। ধর্মশালার অনিন্দ্যসুন্দর স্টেডিয়াম সবারই চোখ জুড়িয়ে দেয়।

কিন্তু সেখানের আউটফিল্ড উল্টো চিন্তারই কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটারদের জন্য। আফগানিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচে মুজিব উর রহমানের হাঁটু আটকে গিয়েছিল বাউন্ডারিতে ফিল্ডিংয়ের সময়। ধর্মশালার আউটফিল্ড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটারদের জন্য। এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তুমুলভাবে। গ্রাউন্ডসম্যানদের কাজ করতেও দেখা গেছে তা নিয়ে অবশ্য। গতকাল সোমবার দুপুরে ধর্মশালায় অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। অনুশীলনে আসার আগে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান উইকেট দেখছিলেন।

পাশেই ছিলেন দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। আইপিএলে কাজ করার সুবাদে এই মাঠে নিয়মিত আসা হয় শ্রীরামের। কন্ডিশন অন্য সবার চেয়ে একটু বেশি জানা তার। তাই তাকেই নিয়ে সেন্টার উইকেটে সময় কাটিয়েছেন হাথুরুসিংহে ও সাকিব। বলার অপেক্ষা রাখে না ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশ কেমন হতে পারে সেই আলোচনাও হয়ে গেছে সেখানে। কিন্তু সেসবের কিছুই জানেন না স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন এই শ্রীলঙ্কান কোচ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজ ভালো করায় হেরাথ স্বভাবতই খুশি। ইংল্যান্ড বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু তাদের শুরুটা হয়েছে একদম বাজে। নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরেছে স্রেফ বাজেভাবে। পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ড খানিকটা চাপে।

এই সুযোগটা নিতে চায় বাংলাদেশ। সেটাও জানালেন হেরাথ, ‘আমরা এই মাঠে একটা ম্যাচ খেলেছি। কন্ডিশনের সঙ্গে কিছুটা মানিয়ে নিতে পেরেছি। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও শুরুটা ভালো করেছিলাম। আমরা সেখানে থেকেই ইতিবাচক মানসিকতা ও একই অ্যাপ্রোচ নিয়ে মাঠে নামতে পারি।’ আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে আটকে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছেন দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজ। দুইজনই পেয়েছেন তিনটি করে উইকেট। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছিল ৫ বোলার নিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত বোলার ছাড়া মাঠে টিকে থাকা কঠিন। এজন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ বোলার নিয়ে খেলার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে লোয়ার অর্ডারে মাহমুদউল্লাহকে বসিয়ে নাসুম কিংবা মাহেদীকে নিতে পারে দল। এমন পরিকল্পনাই করছে বাংলাদেশ। বিষয়টি টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অনুশীলনের চিত্রও একই কথা বলছে। ধর্মশালায় শেষ প্রস্তুতিতে নাসুম ও মাহেদীকে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং করতে দেখা গেছে। স্পিনাররা দলকে জেতাতে বড় ভূমিকা রাখায় বেশি খুশি হেরাথ, ‘মনে করিয়ে দিতে চাই স্পিনাররা শুধু ভালো খেলছেই না, তারা উইকেট পড়তে পেরে সেভাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝে বোলিং করছে।’ এদিকে ইংল্যান্ড ধর্মশালায় এসেছে বড়সড় ‘ধাক্কা’ খেয়ে। এবার বাংলাদেশ কি পারবে তাদের সেই ধাক্কার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে? ইংল্যান্ড যতই বিশ্ব ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করুক, আগত বিপদ সম্পর্কে ভালোই অবগত আছেন তারা। ২০১৫ বিশ্বকাপ, তার আগে ২০১১ বিশ্বকাপ, বাংলাদেশের কাছে যে হারতে হয়েছিল তাদের। সামর্থ্যরে সবটুকু ঢেলে দিতে পারলে লেখা হয়েই যেতে পারে আরেকটি ইংলিশবধের গল্প।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত