ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল টাইগাররা। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধরাশয়ী হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। বলতে গেলে এই ম্যাচে ইংলিশদের কাছে পাত্তাই পায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে আজ চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ দল। আফগানদের বিপক্ষে ছয় উইকেটের জয় দিয়ে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ।

তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা। অন্যদিকে নিজেদের দুই ম্যাচেই জয়ের স্বাদ পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮২ বল বাকি রেখে ৯ উইকেটের জয় পায় কিউইরা। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৯৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় ব্ল্যাক ক্যাপসরা। এখন পর্যন্ত হওয়া দুই ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন স্পিনাররা। টাইগারদের স্পিন ভেল্কিতে ১৫৬ রানে অলআউট হয়েছিল নবী-রশিদরা। ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা তো রীতিমতো বাংলাদেশের পেসারদের কচুকাটা করেছে। একমাত্র অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছাড়া আর কোনো স্পিনারই ইংলিশদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি ব্যর্থই ছিলো বাংলাদেশের টপ অর্ডার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৭ রানে ২ উইকেট হারালেও সমস্যায় ফেলেনি টাইগারদের।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশি ব্যাটাররা ফর্মে ফিরবেন ধারণা করা হলেও সেটি হয়নি। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ৩৬৪ করে ইংল্যান্ড। জবাবে ৪৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। আর সেখানেই ম্যাচের ভাগ্যনির্ধারিত হয়ে যায়। তবে অফ ফর্মে থাকা লিটন দাস এদিন ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তানজিদ হাসান তামিম নতুন হওয়া সঙ্গত কারণেই প্রত্যাশাটা লিটনের ওপড়ই বেশি। নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দেবেন লিটন এমনটাই আশা করছে বাংলাদেশ শিবির।

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেই শুরু করবে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল সাকিব আল হাসানরা, যা ছিল ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে কিউইদের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ৪১ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের জয় ৩০টিতে, বাংলাদেশের ১০টিতে। বাকি একটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। সাম্প্রতিক রেকর্ড এবং বর্তমান ফর্মের কারণে বিশ্বকাপের ম্যাচে স্পষ্টভাবেই ফেভারিট নিউজিল্যান্ড। ১৯৯৯ যাত্রা শুরুর পর ২০১১ আসর ছাড়া বিশ্বকাপের সব আসরেই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দেখা হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে পাঁচবারের দেখায় সবগুলোতেই হেরেছে টাইগাররা। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। জীবন পেয়ে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন উইলিয়ামসন। ইনজুরির কারণে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি উইলিয়ামসন।

আজ দলকে নেতৃত্ব দেয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে উইলিয়ামসনের। যদিও ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ফেভারিট। তারপরও চেন্নাইয়ে গরম এবং স্পিন সহায়ক উইকেট থাকায় ম্যাচ জয়ের কিছুটা আত্মবিশ্বাসী থাকবে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর নিজ দলকে ভেঙ্গে না পড়ার আহ্বান জানানো বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিশ্বাস বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে যেকোন কিছুই হতে পারে। সাকিব বলেন, ‘এটি একটি বড় টুর্নামেন্ট।

আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং সামনে আমাদের কিছু কঠিন ম্যাচ আসছে। আমাদের ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা যেসব ইতিবাচক কাজ করছি সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরিবর্তে স্পিনার মাহেদী হাসানকে একাদশে নিয়েছিলো বাংলাদেশ। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করলেও ব্যয়বহুল ছিলেন মাহেদী। চেন্নাইয়ের উইকেট যদি স্পিন সহায়ক হয়, তাহলে বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকেও খেলাতে পারে বাংলাদেশ।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই মাঠে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট বাংলাদেশের একজন স্পিনারের! ৩ ম্যাচ খেলে এখানে ৮ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ রফিক। এতেই তিনি সেরা। খুব বেশি ওয়ানডে ম্যাচ আসলে এখানে হয় না। এটি ভারতের শীর্ষ টেস্ট ভেন্যুগুলোর একটি। আইপিএলের প্রচুর ম্যাচ তো হয়ই। আইপিএলে বছরের পর বছর ধোনিও তার স্পিনারদের এই মাঠে দারুণ চাতুর্যে ব্যবহার করে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতেছেন।

উইকেটে স্পিন ধরলে এবং দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজদেরও এখানে কার্যকর না হওয়ার কারণ নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ এই মাঠে একবারই খেলেছে। ১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় সেই টুর্নামেন্টের স্মৃতি অবশ্য সুখকর নয় মোটেও। কেনিয়ার কাছে সেই ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে খেলা দুজন এবার আছেন ভারতে বিশ্বকাপ অভিযানে। একজন এসেছেন ধারাভাষ্য দিতে- আতহার আলি খান। আরেকজন দলের সঙ্গেই আছেন, তবে টিম ডিরেক্টরের ভূমিকায়- খালেদ মাহমুদ। এদিকে প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও টিম ম্যানেজমেন্ট ওপেনার তানজিদকে আরো একবার সুযোগ দেয়ার পক্ষে বলে মনে হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত