গাজায় হামলা বন্ধ ও মানবিক সাহায্যের আহ্বান সালাহ’র

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। গাজায় ইসরাইলি সেনাদের হামলায় অন্তত সাড়ে ৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ১২ হাজার। গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে এত দিন কোনো কথা না বলায় সমালোচিত হচ্ছিলেন আরব বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ মোহামেদ সালাহ। অবশেষে নিরবতা ভেঙে মুখ খুললেন মিসরীয় ফুটবল তারকা। অনতিবিলম্বে গাজায় ইসরাইলের বর্বর হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানুষ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আছে জানিয়ে অবিলম্বে সেখানে মানবিক সহায়তাসামগ্রী পৌঁছানোর পথ সুগম করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায় অবরুদ্ধ গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তার অনুমতি দেয়ার জোর দাবি জানান এই লিভারপুল ফরোয়ার্ড। ভিডিও বার্তায় তিনি ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় সহিংসতার এক সপ্তাহ পার হলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার নিজ দেশ মিশরের নীরব থাকার তীব্র সমালোচনাও করেন সালাহ। তিনি বলেন, ‘এমন কথা বলা সব সময় সহজ নয়। এখানে অনেক বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে। সব জীবনই পবিত্র এবং প্রত্যেকের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।’ লিভারপুল ফরোয়ার্ড আরো বলেন, ‘গণহত্যা বন্ধ করা দরকার; পরিবারগুলোকে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে। এখন এটি পরিষ্কার যে, অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্যের অনুমতি দিতে হবে। সেখানকার মানুষ ভয়ানক অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ গত মঙ্গলবার গাজার অভ্যন্তরে একটি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ইসরাইলি হামলার ঘটনার সমালোচনায় সালাহ বলেন, ‘হাসপাতালের দৃশ্যগুলো ছিল ভয়ঙ্কর। গাজার জনগণের জরুরিভাবে খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ প্রয়োজন। আমি বিশ্ব নেতাদের নিরীহ আত্মাদের আরো হত্যা প্রতিরোধে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। মানবতা অবশ্যই জয়ী হবে।’ ইসরাইলের অমানবিক হামলার তীব্রতা কতটা মারাত্মক ছিল, তা গত এক সপ্তাহের মৃতের সংখ্যা বিবেচনা করলেই আঁচ করা যায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩ হাজার ৪৭৮ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ১২ হাজার ৬৫ জন। এরপর গাজায় যেন কোনো ধরনের মানবিক সাহায্য পৌঁছানো না যায় সেজন্য উপত্যকাটিকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইল-হামাস যুদ্ধকে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে থেকে বিরত রাখতে ইসরাইলে জরুরি সফর করেছেন। পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, বাইডেনের অনুরোধের পর মিশর থেকে গাজায় সীমিত মানবিক সহায়তার অনুমতি দেয়া হবে। এদিকে, বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট কমাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য মিসরকে রাজি করিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি জানান, মিসর ও গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে রাজি হয়েছে মিসর। শুক্রবারের মধ্যেই এই ক্রসিং দিয়ে ত্রাণসামগ্রীবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাইডেন। ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের সহায়তার জন্য মার্কিন তহবিল থেকে ১০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হবে বলেও জানান তিনি। উত্তর সিনাইয়ের রেড ক্রিসেন্টের প্রধান খালিদ জায়েদ জানিয়েছেন, ইসরাইলের হামলায় রাফাহ ক্রসিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা মেরামতের পরই এই সাহায্য পৌঁছানো হবে। দুই শতাধিক ট্রাক এবং প্রায় ৩ হাজার টন ত্রাণসামগ্রী রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে অবস্থান করছে। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি আল-আরাবিয়া টিভিকে বলেছেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হবে। বিদেশি ও দ্বৈত নাগরিকদের চলে যেতে দেয়া হবে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাফাহ ক্রসিং মেরামত ও স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ড গাজায় বসবাস করে প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। এই ভূখণ্ডের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার সহায়তার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। ইসরাইল ছাড়া গাজার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে কেবল মিশরের। রাফাহ ক্রসিং নামের সেই সীমান্তপথ দিয়েই গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণ ও সহায়তাসামগ্রী পাঠানো হয়।