আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩

‘কে জানে ৪-৫টি ম্যাচ আমরা জিততেও পারি’

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপের দেশ ভারতে পাড়ি জমিয়েছে সাকিব আল হাসানরা। প্রত্যাশা অনুযায়ী আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। তবে টাইগারদের পরের তিন ম্যাচের গল্প শুধুই হতাশার। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং সবশেষ আয়োজক ভারতের কাছে রীতিমত ধরাশয়ী হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। টানা তৃতীয় হারে এলোমেলো টিম টাইগার্স। মাঠের পারফরম্যান্সে এলোমেলো হলেও এখনো স্বপ্ন দেখেই যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ভারতের বিপক্ষে নেতৃত্ব দেয়া নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করেন, বাকি ম্যাচগুলোতেও জয় সম্ভব। গত বৃহস্পতিবার চোটাক্রান্ত সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন শান্ত। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি তার। পুনেতে ব্যাটিংয়ের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত উইকেটে আগে ব্যাট করে কেবল ২৫৬ রানে আটকে যায় বাংলাদেশ। এরপর বিরাট কোহলির অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেট ও ৫১ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে ভারত। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের পর স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষেও লড়াই জমাতে পারেনি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের আরেকটি বিবর্ণ প্রদর্শনীতে হতাশা বাড়ে। অথচ দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস মিলে দলকে দিয়েছিলেন অভূতপূর্ব সূচনা। রেকর্ড উদ্বোধনী জুটিতে তারা আনেন ৯৩ রান। তবে এরপর শুরু হওয়া ছন্দপতনে প্রতিপক্ষকে ফেলা যায়নি চ্যালেঞ্জের মুখে। এই ধরনের উইকেটে ভারতের মতো দলের বিপক্ষে প্রয়োজন বড় ইনিংস। সেখানেই ব্যর্থ দুজনই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম হাফ সেঞ্চুরিকে ৫১ রানের বেশি এগিয়ে নিতে পারেননি তানজিদ। লিটন বেশ নিয়ন্ত্রিত খেললেও দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতোই শট খেলে আউট হন ৬৬ রানে। শান্তর আক্ষেপ এখানেই। ওপেনারদের অন্তত একজন বড় ইনিংস খেললেও চিত্রটা ভিন্ন হতে পারত বলে মনে করেন এই ম্যাচের অধিনায়ক। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা শান্ত নানা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘প্রস্তুতি খুবই ভালো ছিল, সত্যি বলতে। আমরা যে জায়গায় ভুগছিলাম, সেটি ভালো হয়েছে। ওপেনিং ভালো হয়েছে। তবে আমি মনে করি, যে দুজন ব্যাটসম্যান সেট ছিল, তাদের আরো লম্বা করা উচিত ছিল। কারণ উইকেট এমন ছিল যে ওখান থেকে একটা ব্যাটসম্যান যদি ১২০-১৩০ রানের ইনিংস খেলত, তাহলে হয়তো শেষের দিকে ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ হতো।’ হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরি বা বড় কোনো ইনিংসে রূপ দিতে না পারার সমস্যা অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য নতুন কিছু নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরেই এই ধারা বহমান। এই দলেও তা চলছে এবং এবারেও বিশ্বকাপেও সেই প্রবাহ আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন যখন ৭৬ রানে আউট হলেন, ম্যাচের তখন স্রেফ ২১ ওভার চলে। সেদিন মুশফিকুর রহিম ৫১ রানে বিদায় নেয়ার সময় ইনিংসের বাকি আরো ১৯ ওভার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিক ৬৬ রানে আউট হলেন ৩৬তম ওভারে। ওই ম্যাচে সাকিব আল হাসান ৪০ রান করে ফেরেন বাজে শট খেলে, মেহেদী হাসান মিরাজ থমকে যান ৩০ রানে। মোটামুটি রান পেলেই ব্যাটসম্যানরা আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন, এই অপবাদ অনেক বছর ধরেই সঙ্গী বাংলাদেশের। ভারপ্রপ্ত অধিনায়ক অবশ্য তা স্বীকার করলেন না। ‘আমাদের দলের কোনো ব্যাটসম্যানই ৭০-৮০-১০০ রানে খুশি নয়। কোচিং স্টাফরাও খুশি নন। যদি না ওটা দলের কাজে লাগে। প্রতিটি ব্যাটসম্যানই তা জানে এবং আমি নিশ্চিত যে তানজিদ, লিটনরাও খুশি নয়। কারণ বড় বড় দলের ব্যাটসম্যানরা ১২০, ১৩০ এমনকি ১৫০ রানের ইনিংস খেলেন। সবাই চিন্তিত ও সবাই এটা নিয়ে কাজও করে।’ চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে শান্তর নিজের পারফরম্যান্সও। এই বছর দলের সফলতম ব্যাটসম্যান তিনি। বিশ্বকাপেও শুরু করেছিলেন সেই ছন্দের রেশ নিয়েই। প্রথম ম্যাচে আফগানিন্তানের বিপক্ষে দলের জয়ে করেন অপরাজিত ফিফটি। কিন্তু পরের তিন ম্যাচে আর রান নেই! এখানে অবশ্য কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তিনি নিজেকেও। ‘প্রতিটি ব্যাটসম্যানেরই দায়িত্ব দলের জন্য রান করা। আমি যে পজিশনে ব্যাট করি, অবশ্যই তা গুরুত্বপূর্ণ। তিন নম্বর পজিশনই এমন। তবে চলে গেছে যা, দুই-দিনটি ম্যাচ, চলেই গেছে। সামনের ম্যাচে মনোযোগ দেয়াই গুরুত্বপূর্ণ।’ পরের ম্যাচগুলোতে দলের চাওয়াটাও জানিয়ে দিলেন শান্ত। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারার পর মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, ‘পরের ৬ ম্যাচের ৬টিও জিততে পারি।’

সেই ৬ ম্যাচের একটি চলে গেছে পরাজয়ের বিষাদ উপহার দিয়ে। এবার শান্ত বললেন পরের ৫ ম্যাচের কথা। ‘পরের ম্যাচ যখন খেলতে নামব, অবশ্যই জেতার জন্যই খেলব। আমার মনে হয়, আমরা আমাদের সেরাটা, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের সেরাটা করতে পারিনি। আশা করি সামনের ম্যাচগুলিতে ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে এবং এখনো আমার কাছে মনে হয়, অনেক কিছু করার বাকি আছে।’ মোস্তাফিজের ওই মন্তব্য পরিমার্জন করে এবার শান্ত জানান তার ভাবনা, ‘যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো একটি ম্যাচ ভালো খেলা। একটা ভালো ম্যাচ দলের মোমেন্টাম বদলে দেবে। এখনও পাঁচটি ম্যাচ বাকি। কে জানে... এখান থেকে চার-পাঁচটি ম্যাচ আমরা জিততেও পারি। প্রতিটি ম্যাচই জেতার চেষ্টা করব। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পরের ম্যাচে আমরা কতটা ভালো খেলতে পারি এবং কীভাবে জিততে পারি।’ আগামী মঙ্গলবার নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ।