ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ে ফিরবে বাংলাদেশ?

আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ে ফিরবে বাংলাদেশ?

বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে পাড়ি জমানোর আগে আশার ফানুস উড়িয়েছিল বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে আশার পালে হাওয়া লাগিয়েছিল টাইগাররা। তবে বিশ্বকাপের মাঝপথে সেই আশা এখন অনেকটাই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। টানা চার পরাজয়ে দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ঠেকেছে একেবারে তলানিতে। ব্যাট-বল কোথাও নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন না সাকিব আল হাসানরা। ফলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন এখন নিভু নিভু করছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। কলকাতা বাংলাদেশের খুব কাছে। ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামটি এত কাছে, তবু এত দূর বললে ভুল হবে না বাংলাদেশের জন্য। ৩৩ বছর পর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এই মাঠে বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল ১৯৯০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ম্যাচ খেললেও, ওয়ানডে ম্যাচে খেলা হয়নি। দীর্ঘ সময়ে অনেক বদলেছে কলকাতা, বদলেছে বাংলাদেশ দলও। টানা হারের পর এবার বাংলাদেশও নিজেদের বদলাতে আগের ভুল ত্রুটি শুধরে ২২ গজে সেরাটাই দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো করলেও সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি টাইগাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর টানা চার ম্যাচে হারের লজ্জা পায় বাংলাদেশ। এতে পয়েন্ট টেবিলের নীচের দিকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা। অভিজ্ঞতা এবং শক্তির বিচারে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামছে টাইগাররা। চলতি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত একটি করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের ৩৫ রানের জয় ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সমান ২ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে টেবিলের তলানিতে রয়েছে নেদারল্যান্ডস। দশ দলের টুর্নামেন্টে অষ্টমস্থানে আছে বাংলাদেশ। ভিন্ন দু’টি প্রতিপক্ষের কাছে শোচনীয় হারের স্বাদ নিয়ে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। ৮ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ৩৯৯ রানের সংগ্রহের ম্যাচে ৩০৯ রানে হেরে ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় বড় পরাজয়ের স্বাদ পায় নেদারল্যান্ডস। অন্য দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ হেরেছিলো বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর টানা চার হারে বাংলাদেশের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। কাগজে-কলমে দুটি ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে পরিষ্কারভাবে ফেভারিট বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে তারা। এবার নেদারল্যান্ডসকে বধ করার পালা টাইগারদের। তবে এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ম্যাচের আগের দিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘আশা অনুযায়ী তো বোলিং-ব্যাটিং দুটোই হয়নি। আশা করছি যে কালকে আমাদের সেরাটা দিয়ে যেসব জায়গায় ভুল হয়েছে ওগুলোতে উন্নতি করা (সম্ভব)। মূল লক্ষ্য এখন তো জেতার কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের সেরাটা দিয়ে জেতাটা মূল লক্ষ্য। যেসব জায়গায় ভালো হয়নি, সেসব জায়গায় ১০-১৫ শতাংশ উন্নতি করলে হয়তো জেতার সুযোগটা আসবে।’ সবশেষ চার ম্যাচ হারের কারণে ভক্ত-সমর্থকরা মনে করছেন ছিটকে গেছে বাংলাদেশ দল। তবে এখনই আশা ছাড়ছেন না টাইগার পেসার তাসকিন, ‘এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। আরো চার ম্যাচ আছে। পরের ৪ ম্যাচে যদি আমরা জিততে পারি, অনেক কিছুই সম্ভব। কারণ এখানে রানরেটের একটা ব্যাপার আছে এবং কয়েকটি দল আছে যেমন- ইংল্যান্ড হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে। আবার ইংলিশরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হেরেছে। ফলে যদি পরের চার ম্যাচে জিততে পারি তাহলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারে।’ অবশ্য এতসব না ভেবে আপতত ম্যাচ বাই ম্যাচ নিয়েই চিন্তা তাসকিনের, ‘তবে আপাতত আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা করছি। হ্যাঁ, এটা সত্য যে আমরা ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই ভালো করতে পারিনি। কিন্তু এখনো চার ম্যাচ আছে। তাই আমরা সামনে ভালো করার অপেক্ষায় আছি।’ সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য কিছুটা অভিমান নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘যখন খারাপ হয়, তখন আমাদের এই ১৫ জনেরই সব নিতে হয়। ওটা তো আমরা নিচ্ছি আগের মতোই। সব চাপ নিচ্ছি সমস্যা নেই। আবার যখন ভালো হবে, সবাই মিলে উদযাপন করব।’ ২০১১ বিশ্বকাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। সেবার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। সে ম্যাচে ডাচদের ৪৬ দশমিক ২ ওভারে মাত্র ১৬০ রানে অলআউট করে দিয়ে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন বর্তমান দলে থাকা সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতে ৬ উইকেটে হেরেছিলো বাংলাদেশ। এই ম্যাচটি এই ফরম্যাটে দুই দলের তৃতীয় লড়াই। স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাওয়া জয় থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজবে নেদারল্যান্ডস। যেকারণেই আরও একবার অঘটনের জন্ম দিতে চাইবে ডাচরা। নিজেদের সম্মান টিকিয়ে রাখতে ও সমর্থকদের স্বস্তি দিতে বিশ্বকাপে হারের বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজের ভুল-ক্রুটিগুলো শুধরাতে শৈশবের মেন্টর নাজমুল আবেদিন ফাহিমের অধীনে অনুশীলন করতে ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্বকাপে খারাপ সময় পার করা সাকিব। গত বৃহস্পতিবার রাতে কোলকাতায় দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিনি। নিজের পরামর্শদাতার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করার পর, সাকিব এবার ফর্মে ফিরতে পারেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়। তাছাড়া ডাচদের বিপক্ষে ফিরছেন তাসকিন আহমেদ। চোট থেকে সেরে উঠতে এই পেসারকে বিশ্রাম দেয়া হয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে। টিম ম্যানেজমেন্ট আগেই জানিয়েছিল, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচে না থাকলেও বাকি ম্যাচগুলোতে খেলবেন তাসকিন। সে ধারাবাহিকতায় বল হাতে নিজেকে প্রস্তুত বৃহস্পতিবার অনুশীলনে নামেন তিনি। অনুশীলনে তাসকিন বুঝিয়ে দেন ম্যাচে ফিরতে প্রস্তুত তিনি। এখন দেখার বিষয় মাঠে বল হাতে কেমন পারফরম্যান্স দেখান টাইগারদের এই গতি তারকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত