‘এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন’

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করা বাংলাদেশ পরের চার ম্যাচ হেরে এমনিতেই ব্যাকফুটে ছিল। তবে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু সেই আশাও হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছে ডাচরা। টেস্ট স্ট্যাটাস না পাওয়া দলটির কাছেই লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। গত শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে কমলা জার্সির উৎসবের মাঝে নীল বেদনায় পুড়েছে বাংলাদেশ দল। আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশ নেদারল্যান্ডসের কাছে ৮৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা দল। ২৩০ রানের লক্ষ্যে নেমে মাত্র ১৪২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। বিশাল হারের বোঝা চাপিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আসেন চরম বিষাদগ্রস্ত চেহারায়। পথ হারা নাবিক যেমন গন্তব্য খুঁজে পান না ঠিক তেমনই লাগছিল বাংলাদেশ অধিনায়ককে। আলো ঝলমলে রুমেও আঁধার তার ভুবন। হারানোর ক্ষত মুখে লেগে আছে। শরীরে জড়তা। কথায় নেই তেজ। পাল্টা প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালাতে প্রায়ই দেখা যায় তাকে। এদিন তা হারিয়ে একাকার। এদিন কেবলই আত্মসমর্পণের দিন। মাঠের ক্রিকেটের পর সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। বিমূঢ় সাকিবের ভুবন ঘোরলাগা অমানিশায়। যেখান থেকে উত্তরণের পথ কী জানা নেই তারও। অকপটে তাই স্বীকার করতেও দ্বিধা করেন না সাকিব। ‘সত্যি বলতে, এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। যেহেতু তিন ম্যাচ আছে। সুযোগ এখনো আছে আমাদের কাছে (কিছু ম্যাচ জেতার), তবে খুবই কঠিন। কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা ছাড়া আমাদের এখন কিছু করার নেই। আজকের দিনটা আমরা যদি ভুলে যেতে পারি এবং সামনের ম্যাচগুলোর জন্য মনোযোগ দিতে পারি ভালোভাবে, খুবই কঠিন এই জিনিসটা করা। যে পরিস্থিতির ভেতরে এখন আমরা আছি সেখান থেকে কামব্যাক করা কঠিন।’ ১৯৯৯ বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। ওই বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে মিলেছিল দুই জয়। তবে তখনকার বাস্তবতায় সেটা ছিল স্মরণীয় বিশ্বকাপ। ২০০৩ বিশ্বকাপে সবগুলো ম্যাচেই হারে বাংলাদেশ। হেরেছিল কেনিয়া, কানাডার মতো দলের বিপক্ষেও। ২০০৭ থেকে এরপরের সবগুলো বিশ্বকাপে তিনটা করে ম্যাচ জেতে দল। বড় মঞ্চে কখনো তিনটার বেশি ম্যাচ জিততে না পারায় বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স আহামরি না বলে বিশ্বকাপের আগে বলেছিলেন সাকিব। তবে এবারের পারফরম্যান্স আগের চেয়েও নাজুক হতে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন হলে তা স্বীকার করে নেন সাকিব, ‘নির্দ্বিধায় বলতে পারেন (সবচেয়ে বাজে)। আমি দ্বিমত করব না।’ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হার নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে শতভাগ একমত (প্রচণ্ড বাজে ফিল্ডিং)। কান্ট ডিনাই দ্যাট। আমরা ফিল্ডিংয়ে স্লপি ছিলাম। দুর্দান্ত বোলিং করেছি। আমরা যেভাবে ব্যাটিং করতে পারি সেভাবে আমরা পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটিং করতে পারিনি। এটা বিগ কনসার্ন। আজ সেরকমই একটি দিন ছিল। যেখানে আমরা নিজেরাই ডাচদের ২ পয়েন্ট দিয়েছি। খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে সমস্যার সমাধান করা। হজম করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এগুলো ক্রিকেটে হতে পারে। তবে তারা যেভাবে বোলিং করেছে তাদের ক্রেডিট দেয়া উচিত। তারা খুব শৃঙ্খল ছিল। আমরা খুব বাজে শট খেলেছি।’ ঢাকা থেকে কলকাতা। সাকিব আল হাসানের কান ঝালাপালা দর্শকদের ‘ভুয়া-ভুয়া’ দুয়োধ্বনি শুনতে শুনতে। ঢাকায় তিন দিনের অনুশীলন করতে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন মিরপুরের ইনডোর থেকে বের হওয়ার সময় দর্শকরা তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া-ভুয়া’ বলতে থাকেন। গত শনিবার ইডেনে সেই একই চিত্র। সাকিব আউট হয়ে ফেরার সময় ইডেনের গ্যালারি ফেটে পড়ে সাকিবকে উদ্দেশ্য করে দেয়া দুয়োধ্বনিতে। বাংলাদেশের অধিনায়ক দর্শকদের এমন আচরণ হতাশাজনক বলছেন। তবে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় এই দুয়োধ্বনি তারা ডিজার্ভ করেন বলেই মন্তব্য করেছেন সাকিব। ‘হতাশাজনক (দর্শকদের প্রতিক্রিয়া)। তারা আসলে প্রত্যাশাও করে ভালো কিছু। স্বাভাবিকভাবে সেটা না হলে তাদেরও অধিকার আছে তাদের মতো করে বলার। তাদের ক্ষেত্রে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি মনে করি যেভাবে আমরা খেলেছি এটা আমরা ডিজার্ভ করি।’