ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রেকর্ড অষ্টম ব্যালন ডি’অর জিতে আরো উঁচুতে মেসি

রেকর্ড অষ্টম ব্যালন ডি’অর জিতে আরো উঁচুতে মেসি

ইউরোপের সংবাদমাধ্যমগুলো আগাম যে খবর দিয়েছিল। তাতে জোরালো হয়েছিল গুঞ্জন। অবশেষে সেই গুঞ্জনই বাস্তবে রূপ নিল। নিজের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি রঙিন পালক যুক্ত করলেন লিওনেল মেসি। ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের পর অস্টম ব্যালন ডি’অর জয় অনেকাংশেই নিশ্চিত করে ফেলছিলেন এই ফুটবল জাদুকর। সেটার জন্যেই দীর্ঘ প্রায় ১১ মাসের অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত সোনালি বলটি উঠল মেসির হাতে। গত সোমবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের থিয়েটার দ্যু শাতলেতে একটি জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। সাদা শার্টের ওপর কালো কোট ও কালো বো টাই পরে অনুষ্ঠানে যোগ দেন মেসি। তার সঙ্গে ছিলেন তিন ছেলে ও স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। আইভরি কোস্টের কিংবদন্তি ফুটবলার দিদিয়ের দ্রগবার সঙ্গে পুরস্কার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফরাসি সাংবাদিক ও উপস্থাপক স্যান্ডি হেরিবার্ট। বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসির অষ্টম ব্যালন ডি’অর জেতার ঘোষণা দেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম।

এবারের ব্যালন ডি’অরের জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে ২০২২ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সময়কে। এ সময়ে ৪২ গোল ও ২৬ অ্যাসিস্ট করেন মেসি। সাবেক ক্লাব পিএসজির হয়ে লিগ ওয়ানসহ দুটি শিরোপা জেতেন তিনি। তবে তাকে ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছিল বিশ্বকাপ জেতার কারণে। কাতারের মাটিতে গত বছরের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার জার্সিতে পরম আরাধ্য শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন মেসি। পাশাপাশি আসরজুড়ে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি জেতেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। প্রথম ফুটবলার হিসেবে তিনটি ভিন্ন ক্লাবে থাকাকালে ব্যালন ডি’অর জিতলেন মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার (এমএলএস) লিগের ক্লাব মায়ামির হয়ে তো বটেই, ইউরোপের বাইরের কোনো ক্লাবের হয়ে এই পুরস্কার জেতা প্রথম ফুটবলার তিনি। এর আগে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ও ফরাসি ক্লাব পিএসজির হয়ে মোট সাতবার (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২১) ব্যালন ডি’অর বগলদাবা করেন মেসি। অথচ গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইয়ে মনোনয়ন পাওয়া ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেই ছিলেন না মেসি। কারণ ২০২১ সালে বার্সাকে বিদায় বলে পিএসজিতে যাওয়ার পর সেখানে প্রথম মৌসুমে একেবারেই সাদামাটা ছিলেন তিনি। সেই ধাক্কা সামলে এবার তিনি ফিরলেন ও জয় করলেন। চলতি বছর সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা মেলেনি পর্তুগাল ও সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের ফরোয়ার্ড ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর। ব্যালন ডি’অর জয়ের পরিসংখ্যানে মেসির পরেই তার অবস্থান। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পুরস্কার জিতেছেন। ফুটবলারদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার হলো ব্যালন ডি’অর। প্রতি বছর ফুটবল বিষয়ক সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল এই সম্মাননা দিয়ে থাকে। ১৯৫৬ সালে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এবার হলো ৬৭তম ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। কালের পরিক্রমায় এটি পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ পুরস্কারে ছেলেদের বিভাগে পুরস্কারের পাশাপাশি মেয়েদের বিভাগে ব্যালন ডি’অর ফেমিনি পুরস্কার, সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের (অনূর্ধ্ব-২১ বছর) পুরস্কার কোপা ট্রফি, সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ইয়াশিন ট্রফি, কোনো ফুটবলারের মানবিক কাজে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সক্রেতিস পুরস্কার, সেরা গোলদাতার পুরস্কার গার্ড মুলার ট্রফি ও দুই বিভাগে বর্ষসেরা ক্লাবের পুরস্কার দেয়া হয়। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ইয়াসিন ট্রফি জিতেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এমিলিয়ানো মার্তিনেস। সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র সেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কার গার্ড মুলার ট্রফি জিতেছেন গত েেমৗসুমে ৫২ গোল করা আর্লিং হালান্ড। সেরা ক্লাব নির্বাচিত হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। ফ্রান্স ফুটবল ও ক্রীড়া বিষয়ক ফরাসি গণমাধ্যম লেকিপের স্টাফদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল প্রথমে ৩০ জন শীর্ষ ফুটবলারের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ হয়। এরপর সেই তালিকা থেকে ১০০ জন সাংবাদিক নিজেদের পছন্দমতো শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়কে বাছাই করেন। এই সাংবাদিকদের বেছে নেয়া হয় ছেলেদের ফিফা র‍্যাংকিংয়ের সেরা ১০০ দেশ থেকে। বাছাইকৃত পাঁচ জনের তালিকার প্রথমে থাকা ফুটবলার পান ছয় পয়েন্ট। তবে পাঁচ পয়েন্ট কাউকে দেয়া হয় না। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা খেলোয়াড়রা যথাক্রমে পান চার, তিন, দুই ও এক পয়েন্ট। সাংবাদিকদের ভোটের পর মোট পয়েন্টের হিসাবে যিনি প্রথম হন, তার হাতেই ওঠে মর্যাদাপূর্ণ ব্যালন ডি’অর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত