দিল্লির দুর্গে লাল-সবুজের বিজয় পতাকা উড়বে আজ?

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এম জাফিউল ইসলাম

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অর্জন আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া একমাত্র জয়! এরপর টানা ছয় হারে এরই মধ্যে ১৩তম আসর থেকে বিদায় ঘণ্টা গেছে সাকিব আল হাসানদের। বিদায় নিশ্চিত হলেও অবশিষ্ট দুটি ম্যাচ লাল-সবুজ জার্সিওয়লাদের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। কারণ, এই দুই ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগারদের ভাগ্য। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে খেলার টিকিট পেতে বাকি দুই ম্যাচে জিততেই হবে তাদের। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই আজ দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে উভয় দলকে চোখ রাঙাচ্ছে দিল্লির বিপজ্জনক বায়ুদূষণ। গতদিন দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৪৬৫। দিল্লির আকাশ এখন কালো ধোঁয়ায় ঢাকা। রীতিমতো গ্যাস চেম্বার। সময় যত গড়ায় ধোঁয়ার উৎপাত ততো বাড়ে। মধ্যদুপুরেও সূর্যর দেখা মেলে না। কুয়াশা নয়, আকাশ ঢাকা থাকে ধোঁয়ায়। দূষিত বায়ুতে স্বাভাবিক জীবন এখানে বিপন্ন। দুই দিন হলো এখানকার প্রাইমারি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত শনিবার অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাস্ক পড়ে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। দিল্লির বায়ুদূষণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকায় নিজেদের সুরক্ষিত রেখে ব্যাট-বলে অনুশীলন করলেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। সাকিব মাস্ক পরেই মাঠেই প্রবেশ করেন। ব্যাটিংয়ে শুরুতে নক করেছেন মুখে মাস্ক নিয়ে। শুরুর দশ মিনিটে মাস্ক পরে অনুশীলনে জড়তা কাটছিল না। এরপর মাস্ক ফেলেই চলে পরবর্তী লড়াই। শর্ট বল একে একে খেলছিলেন দারুণ দক্ষতায়। সঙ্গে কভার ড্রাইভ, পুল শটে সাকিব শতভাগ নিবেদনে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশের দলপতি। এই বিশ্বকাপে শর্ট বলেই সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন সাকিব। অথচ ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব একবারও আউট হননি শর্ট বলে। নিজের দুর্বল জায়গাজুড়ে পুরোদমে অনুশীলন করেছেন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। চার পেসার হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব নিবিড় অনুশীলনে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন। ম্যাচের আগের দিন দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধান কোচ বলেন, ‘আমার আসল কাজ শুরু হবে বিশ্বকাপের পরে। আগের সাত মাসে কিছুই করার ছিল না।’ আগের ছয় ম্যাচেই ছিল ব্যর্থতা।

তবে সেসব নিয়ে এখন ভাবতে নারাজ এই কোচ। ভাবনায় শুধুই শ্রীলঙ্কা ম্যাচ, ‘এই মুহূর্তে আমার ভাবনায় শুধু সামনের ম্যাচ। পরের ম্যাচটা আমরা কীভাবে জিততে পারি সেটাই ভাবছি। আমরা সবকিছুই ঠিকঠাক করছি। ট্রেনিং করছি, খেলোয়াড়দের মুড ভালো, তারা সবাই কঠোরভাবে চেষ্টা করছে।

তারা সবাই ভালো করতে চায়। এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যতটা সম্ভব সবাইকে সবদিক থেকে চাপমুক্ত রাখা। সেমিফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা পাওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের। হাথুরু বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সাম্প্রতিক অতীতে বেশকিছু ভাল ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বকাপে দুই দলই একই অবস্থায় আছে। যেহেতু আমরা সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ হারিয়েছি। আমাদের এখন লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেয়া। এই ম্যাচ তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ পর্যন্ত মাত্র একটি জয় পাওয়া বাংলাদেশ এরই মধ্যে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে। তবুও ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইসিসির নিয়ম অনুসারে, আয়োজক পাকিস্তান এবং বিশ্বকাপের শীর্ষ সাত দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। তাই ম্যাচটি জিততেই হবে সাকিবদের। এদিকে চলমান বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ জিতলেও শ্রীলঙ্কার পারফরমেন্সও আহামরি কিছু না।

বিশ্বকাপে দ্বিতীয় এবং ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড এখন লঙ্কানদের। টেস্ট দল হিসেবে বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা থেকে বাংলাদেশের নামও মুছে ফেলে শ্রীলঙ্কা। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের চোট চাপে ফেলেছে শ্রীলঙ্কাকে। চোটে জর্জরিত লঙ্কার দুরাবস্থা, হারের বৃত্ত থেকে বের হতে অনুপ্রাণিত করবে বাংলাদেশকে। তবে বিশ্বকাপে কখনওই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হেরেছে টাইগাররা। গত বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৩ ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। এরমধ্যে শ্রীলঙ্কা ৪২টি এবং বাংলাদেশ ৯টি ম্যাচে জিতেছে। বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ ছিটকে গেলেও সাকিবদের লক্ষ্য শেষ দুই ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণের টিকিট নিশ্চিত করা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি অনেকটাই ডু অর ডাই। দলগতভাবে বাংলাদেশ রয়েছে চরম অফ ফর্মে। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান নেই। বোলারদের পকেটে নেই উইকেট। বিশ্বকাপের মঞ্চে মাঠে নামা আগেই অনেকটা অসহায় আত্মসমর্পণ। কোনো বিভাগেই ভালো করতে না পারায় ব্যর্থতার পাহাড়ে চাপা পড়েছেন ক্রিকেটাররা। এবার ব্যর্থতার কালো মেঘ সরিয়ে টাইগাররা আলোর দেখা পায় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।