টাইম আউটে ‘বিরল’ ইতিহাস গড়লেন ম্যাথিউস

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

ক্রিকেটে আগে কখনও যা ঘটেনি এবার তাই ঘটল। বিরল এক আউটের সাক্ষী হয়ে থাকল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম। নিয়ম থাকলেও এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে আউট কখনো কেউ দেখেনি, এবার সেটিই দেখা গেল। টাইমড আউট হয়ে ইতিহাস গড়লেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস! শ্রীলঙ্কান ইনিংসের ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাদেরা সামারাবিক্রমা যখন সাকিব আল হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন, তার খানিকের মধ্যেই মাঠে প্রবেশ করেন ম্যাথিউস। তবে বল মোকাবিলা করতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে নেন তিনি।

তার আনা হেলমেটে ছিল স্ট্রাপ করা, সেটা বদলাতে লাগলেন। যখন বল মোকাবিলা করতে দেরি, তখনই টাইম আউটের আবেদন করে বসেন সাকিব। ম্যাথিউস তখন তাকে বোঝান হেলমেটে সমস্যা থাকায় দেরি হচ্ছিল। দূর থেকে মনে হচ্ছিল সাকিব এটা মানতে রাজি নন। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে চলে আলোচনা। ফিল্ডিং অধিনায়ক ছাড় না দেয়ায় আম্পায়ার মরিস এরাসমাসকে টাইম আউটের ঘোষণা দিতে হয়। তখন ঘড়িতে স্থানীয় সময় ৩টা ৫৪ মিনিট। দলের ১৩৫ রান ২৪.২ ওভারে চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেট হারাল শ্রীলঙ্কা। আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর হেলমেটটা ছুঁড়ে মারেন ম্যাথিউস। কোচ ক্রিস সিলভারউডে সঙ্গে ডাগআউটে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে।

ড্রেসিংরুমে ফিরে না গিয়ে অনেকটা সময় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ান তিনি। ম্যাথিউসের আউট নিয়ে প্রেসবক্স ও ধারাভাষ্য বক্সে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ মত দেন, স্পিরিটের কথা ভেবে সাকিব নমনীয় হতে পারতেন, দিতে পারতেন ছাড়। কারো মত, আইনের মধ্যে থাকলে স্পিরিটের প্রসঙ্গ আনা অপ্রয়োজনীয়। দক্ষিণ আফ্রিকান সাবেক পেসার ডেল স্টেইন টুইট করে লেখেন- ‘ওয়েল, দ্যট ওয়াজ নট কুল’। অনেকেই তাকে সমর্থন করে বলেন, ‘সাকিবের উচিত ছিল আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়া।’ তবে সিদ্ধান্ত যেমনই হোক, ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ায় সবার মধ্যেই ছিল রোমাঞ্চ। সব সংস্করণ মিলিতে এত শত শত ম্যাচেও যে আউটের দেখা মেলেনি, সেটাই যে দেখা গেল। ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী এমসিসির আইনের ৪০.১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর পরবর্তী ব্যাটসম্যানকে ২ মিনিটের মধ্যে প্রথম বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যথায় ফিল্ডিং দলের আবেদনের ভিত্তিতে তাকে টাইমড আউট দিতে পারবেন আম্পায়ার। আগে এটি ছিল ৩ মিনিট।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে কমিয়ে আনা হয় ২ মিনিটে। ম্যাথিউস সময়মত মাঠে ঢুকলেও বল মোকাবেলার প্রস্তুতিতে নিয়ে নেন বাড়তি সময়। যার সুযোগ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। এদিকে এ ঘটনায় ওয়াকার ইউনিস, রাসেল আরনল্ডরা সাকিবকে পরোক্ষভাবে সমালোচনাই করেছেন। তারা বলেছেন, ‘এ রকম অখেলোয়াড়ীসুলভ আচরণ দেখেননি কখনো।’ এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ সমালোচনা করছেন অনেকে আবার সাকিবের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসাও করেছেন। আইনে টাইমড আউটের বিধান রয়েছে, সাকিব সেটার প্রয়োগ করেছে।

আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যে জিতবে তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সাকিবের এই আবেদনকে অনেকে অত্যন্ত প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। আবার অনেকের দৃষ্টিতে, ম্যাথিউসকে হেলমেটের জন্য ২ মিনিট অতিরিক্ত দিলে কোনো কিছুই হতো না।

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। অনেকে সাকিবকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বলছেন, ‘সাকিব বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটার এটা সেটারই প্রমাণ।’ বাংলাদেশের অনেকেই আবার সাকিবের চরম সমালোচনা করেছেন। এভাবে আউট করে সুবিধা নেয়াকে নিজেদের দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন।