ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন খেলবে বাংলাদেশ

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন খেলবে বাংলাদেশ

বড় স্বপ্ন নিয়ে এবার বিশ্বকাপে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল বাংলাদেশ। আইসিসি সুপার লিগে পয়েন্ট তালিকার তিনে থাকায় সবারই বিশ্বাস ছিল বিশ্বকাপে আগের সব পারফরম্যান্সের চেয়ে এগিয়ে যাবে টাইগাররা। সে অনুযায়ী আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল সাকিব আল হাসানরা। কিন্তু তারপর টানা ছয় ম্যাচে রীতিমতো বিধ্বস্ত। যেন জিততেই ভুলে গিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। অবশেষে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে কাঙ্ক্ষিত জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। গত সোমবার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে আশার পালে একটু হাওয়া লেগেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা উজ্জ্বল হয়েছে কিছুটা। সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়টাও জরুরি। যদিও কাজটি কঠিন। বাজে শুরুর পর অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে সবশেষ ম্যাচে ধ্বংস্তূপ থেকে যেভাবে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, এরপর তারা স্রেফ উড়ছে। সেই দলকে মাটিতে নামাতে প্রয়োজন বিশেষ জোর। এই বাংলাদেশ দলের সেই জোর আছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় না। তবু আশা ছাড়ছেন না দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার। ‘আমরা যত ম্যাচ খেলেছি, সবগুলো ম্যাচেই প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী ছিল। বিশ্বকাপে দুর্বল প্রতিপক্ষ বলতে কেউ নেই। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, সব দলেরই কোনো না কোনো ‘গেম চেঞ্জার’ ছিল। ওভাবে চিন্তা করলে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কোনো ম্যাচ হারার কথা না। কিন্তু শুরুতে তারাও দুই ম্যাচ হেরেছে। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি।’ সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া খুব ভালো ফর্মে আছে। তাদের কিছু গেম চেঞ্জার আছে, ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, মিচ মার্শ- সবাই ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু কোনো দলই অপরাজেয় নয়। নিশ্চিতভাবে আমাদের চেষ্টা থাকবে সেরা খেলাটা খেলার।’ এই লড়াইয়ে বাংলাদেশ অবশ্য একটা জায়গায় পিছিয়ে থাকছে আগে থেকেই।

আঙুলে চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার এই চোট নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছে। যদিও ম্যাচ শেষে তার আঙুলে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে, কিন্তু মাঠে তাকে সেভাবে আঘাত পেতে দেখা যায়নি। পুরোনো চোট মাথাচাড়া দিয়েছে কি না বা চোট নিয়েই তিনি খেলেছেন কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে। তবে দলসূত্রে জানা গেছে, এটি একদমই নতুন চোট। সাকিব উইকেটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দুশমান্থা চামিরার বল ছোবল দেয় তার আঙুলে। তিনি তাৎক্ষণিক বুঝে যান, আঙুলে চিড় ধরেছে। মাঠেই টান দিয়ে স্থানচ্যুত হওয়া হাড় জায়গামতো আনার চেষ্টা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরে ব্যথানাশক নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান। ৬৫ বলে ৮২ রানের ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। ম্যাচ শেষে স্ক্যান করিয়ে ধরা পড়ে চিড়। তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া এনামুল হকের দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার একাদশে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে যথেষ্টই। তবে সাকিবের অভাব যে অপূরণীয়, তা বললেন হাবিবুলও। ‘সাকিবের অভাবটা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি অনুভব হবে। সেটাই স্বাভাবিক। সে অধিনায়ক, সেরা অলরাউন্ডারও। ব্যাটিং বোলিং, দুই বিভাগেই সেরা পারফর্ম করে দলের পক্ষে। ওকে নিশ্চয়ই দল মিস করবে। কিন্তু ইনজুরির ক্ষেত্রে তো কারো হাত নেই। সেটা মেনে নিয়ে আমাদের খেলতে হবে।’ অসুস্থতার কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে খেলতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান। ‘ফ্লু’ থেকে তিনি সেরে ওঠার পথে আছে বলে জানালেন টিম অপারেশন্স ম্যানেজার রাবিদ ইমাম। বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুনের মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল। এই দুটি অনুশীলন সেশন ও একটি ম্যাচ, এরপরই শেষ বিশ্বকাপ অভিযান। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে আলোচনায় গ্লেন মাক্সওয়েল। গত মঙ্গলবার পুনেতে এই অসি ব্যাটারের অবিশ্বাস্য ইনিংস হোটেলে বসে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সবাই দেখেছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯২ রান তাড়ায় ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। প্রায় নিশ্চিত বড় হারের সামনে ছিল অজিরা। ওই অবস্থা থেকে প্যাট কামিন্সকে নিয়ে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস গড়েন ম্যাক্সওয়েল। ১৭০ বলে ২০২ রানের জুটিতে ১৭৯ রানই নেন তিনি। পেশির টান নিয়ে ১২৮ বলে ১০ ছক্কা, ২১ চারে করেন ২০১ রান। দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। বাংলাদেশের বোলাররা কী ম্যাক্সওয়েলকে ‘ভয়’ পাচ্ছেন? টিম ডিরেক্টরের খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘ম্যাকওয়েল ঝড় দলের সবাই দেখেছে। এটা সারা বিশ্বের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণার বিষয়, শুধু বাংলাদেশ না। কত বছরে এরকম হবে আল্লাহই জানেন। ২০০ তো অনেকেই মারবে। কিন্তু এরকম বিপদ থেকে, নিজের এমন চোটের অবস্থা নিয়ে। শেষ দিকে জিততে লাগত ১০৫, এরমধ্যে ১০১ রানই করেছে সে।’ সুজনের আশা ম্যাক্সওয়েলের মনের জোর, শারীরিক সক্ষমতা থেকে প্রেরণা নেবেন তাদের দলের ক্রিকেটাররা, ‘ক্রিকেটে সে সবই সম্ভব এটা বোঝা গেল। এখান থেকে প্রেরণা নিয়ে ছেলেদের আগামী ম্যাচে শুরু করা উচিত, যে ম্যাক্সওয়েল পেরেছে, আমরাও করতে পারি।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত