স্পোর্টসম্যান স্পিরিট এবং বাংলাদেশ অধিনায়কের ভূমিকা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ক্রিকেট খেলা একেবারে শৈশব হতে উপভোগ করছি এবং প্রতিটি বল, রান ও আউট নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা এবং সমালোচনা অদ্যাবধি করে আসছি। গত ৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের খেলা ইতিহাস হয়ে গেল একটি আউটকে ঘিরে। আমাদের স্মার্ট ক্যাপটেন বিশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দেরীতে (২ মিনিট) ক্রিজে ব্যাটিং এ আসার জন্য ক্রিকেট বিধি ৪০.১.১ এর প্রয়োগ করে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার ম্যাথিউসকে টাইমড আউট এর আবেদন করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এ আপিলের বিষয়ে আমাদের দলীয় অধিনায়ক সিরিয়াস কি না, তা দুইবার আম্পায়ার জিজ্ঞেসও করেন।

এর মানে আম্পায়ারও সন্দিহান ছিলেন এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আউট আমাদের অধিনায়ক চান কি না? আমরা জিতেছি এবং সবাই খুশিও! এ ভেবে, জাগ বাবা! চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ তো সৃষ্টি হল। পাশাপাশি ২ পয়েন্ট পেয়ে, পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম অবস্থানে উঠে আসা সম্ভব হলো। আমরা সব সময় দেখেছি, বোলার এন্ডে যে ব্যাটার থাকে (নন-স্ট্রাইকার), বোলিং করার আগে (বল ডেলিভারির পূর্বে) সে ক্রিজ থেকে বেড়িয়ে গেলেও বোলার তাকে আউট না করে সতর্ক করেন। সতর্ক না করে এ ধরনের আউটকে ক্রিকেটীয় ভাষায় মানকাড আউট বলা হয়। মানকাড আউট এবং টাইমড আউট উভয়ই নিন্দনীয় আউট হিসেবে বিবেচিত। কারণ এ ধরনের আউট স্পোর্টসম্যান স্পিরিট এর সঙ্গে যায় না। স্পোর্টসম্যান স্পিরিট এর বহির্ভূত বিধায় এ ধরনের আউটের জন্য কোন খেলোয়ার অদ্যাবধি আপিল করেনি (সাকিবীয় ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত)। ক্রিকেটীয় বিধিতে তা বৈধ হলেও তা কালো বিধি বিবেচনায় প্রয়োগ করা হয় না। আমাদের সাবেক ক্রিকেটার যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে টি স্পোর্টস এবং অন্যান্য টিভি চ্যানেলে মতামত ব্যক্ত করেন তাদের কথা শুনে মনে হল জয়ের জন্য সব কিছুই জায়েজ তা যেভাবে আসুক না কেন। আমাদের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞগণ জয়ের স্বার্থে অধিনায়ক সাকিবের এ আচরণ নায়কোচিত, স্মার্ট এবং ক্রিকেটীয় হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। এ ছাড়া পাকিস্থানের সাবেক অধিনায়ক এবং আইকোনিক উইকেট কিপার মঈন খান সাকিবকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন- এমন পরিস্থিতিতে তিনিও এ ধরনের পদক্ষেপ নিতেন। পাকিস্তানের লিজেন্ড ক্রিকেটার ওয়াসীম আকরাম বিপরীত মন্তব্য দিয়ে উল্লেখ করেন এ ধরনের আউটের বিষয়ে কোনো সতীর্থ তাকে উৎসাহিত করলে তাকে উচিত শিক্ষা দিতেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন টুইটারে উল্লেখ করেছেন, এটা ভালো হয়নি। ভারতীয় প্রাক্তন অধিনায়ক ও সাবেক ওপেনার টুইটে বলেছেন ‘দিল্লীতে আজ যা ঘটেছে আবশ্যিকভাবে তা চরম খারাপ ছিল’। সার্বিকভাবে প্রাক্তন ক্রিকেট লিজেন্ডদের নিকট টাইমড আউট নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্পিরিট অব দ্য গেম বহির্ভূত এবং অনভিপ্রেত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অনেকে বলেছেন ক্রিকেটীয় আইনে আছে ফলে তা ব্যবহার করা যেতেই পারে এবং এর যথাযথ ব্যবহার করে আমাদের অধিনায়ক চৌকস এবং চতুরতার স্বাক্ষর রেখেছে এবং বাংলাদেশের জয়ে প্রশংসনীয় অবদান রেখে ম্যাচ সেরাও হয়েছে। তাদের জন্য বলি দেশের সংবিধান, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন দপ্তর এবং সংস্থার চাকরি প্রবিধানমালাসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিধিতে কতিপয় কালো আইন থাকে যা দুর্জনরা বিশেষ অসৎ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করে। ফলে যা সার্বিক পরিবেশকে কলুষিত করে, সে ধরনের আইনের আশ্রয় নেয়া মোটেই স্মার্টনেস এর লক্ষণ নয়- মর্মে আমি মনে করি। আমাদের সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎ সাহস থাকতে হবে। যেটা সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, সেটাকে প্রযোজ্য কালো আইনের মাধ্যমে হাসিল করে ক্ষণিকের জন্য আনন্দ পাওয়া সম্ভব তবে এর মাধ্যমে কখনই টেকসই আনন্দ পাওয়া সম্ভব নয়। ম্যানস ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২৩ এর ৬ নভেম্বর ২০২৩ সালের ম্যাচটি ইতিহাসের অংশ হল এবং ক্রিকেটীয় পান্ডিত্ব এবং বিশ্লেষকরা ম্যাচটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আরো পর্যালোচনা এবং হিসাব নিকাশ করবেন। কিন্তু এ ধরনের আচরণ না করেও ওই দিন আমরা জিততে পারতাম, যে জয়টায় আনন্দ পেতাম বহুগুণ! আমি সবসময় স্পোর্টসম্যান স্পিরিট এ বিশ্বাসী এবং স্পোর্টসের সার্বিক সৌন্দর্যের স্বার্থে তা হওয়া বাঞ্ছনীয়ও।

লেখক : আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন