ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জয় দিয়ে শুরু হারে শেষ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ

জয় দিয়ে শুরু হারে শেষ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ

তামিম ইকবাল ইস্যুতে গড়ে উঠা বিতর্কের মাঝেই সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানরা। প্রত্যাশা মতোই জয় দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। আর লাল সবুজের প্রতিনিধিদের মিশনটা শেষ হলো হার দিয়ে। নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হারল টাইগাররা। বাংলাদেশের করা ৩০৬ রান ৩২ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৯ ম্যাচের মাত্র দুটিতে জিতে এবারের আসর শেষ করল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় বাদে বাকি সবকটিতে হারল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। জয় সংখ্যার বিচারে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ কাটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দেয়া ৩০৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে কখনোই পেরেশানিতে পড়তে হয়নি অজিদের। পুনের বাইশ গজ ছিল সাড়ে তিনশো তাড়া করেও জেতার মতন পিচ। তাতে ৩০৬ রান নিয়ে লড়াইয়ের বাস্তবতা ছিল না, হয়ওনি। তৃতীয় ওভারে ট্রেভিস হেড তাসকিন আহমেদের বলে প্লেইড অন হয়েছেন বটে। তবে তাতে কোনো প্রভাব ছিল না ম্যাচের। ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে দারুণ জুটিতে বাকি সময় বাংলাদেশের বোলারদের একদম ধারহীন করে দেন মার্শ। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে ১২০ রান। ফিফটি করে ওয়ার্নার মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ দিলেও মার্শের চওড়া ব্যাট ছুটতে থাকে অবিচল। স্টিভেন স্মিথকে অ্যাঙ্করিংয়ে রেখে উড়তে থাকেন তিনি। ৮৭ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক। পরে আরো হাত খুলে মারা শুরু করেন ডানহাতি ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ১৩২ বলে ১৭৭ রান করে। মার্শকে অপর প্রান্তে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন স্টিভেন স্মিথ। ৬৪ বলে অপরাজিত ৬৩ রান করে মাঠ ছেড়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। চতুর্থ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ১৭৫ রানের জুটিতে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে যায় ম্যাচের ফল। শরীরী ভাষায় নেতিয়ে পড়া বাংলাদেশ বাকিটা সময় বল করে গেছে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার জন্য। বিশ্বকাপের সমীকরণের হিসেবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার এই ম্যাচটার গুরুত্ব ছিল শূন্য। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কারণে শান্ত-মুশফিকদের জন্য ম্যাচটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেরা আটের সমীকরণ আগেই সহজ করে রেখেছিল বাংলাদেশ। এদিন অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হতো। তা করতে পারেনি লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে ৮ উইকেটের হারের পরও টাইগারদের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পথ খোলা আছে। আজ ভারতের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস হারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। গতকাল শনিবার পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। টস হেরে আগে ব্যাটিং পেলেও উপযুক্ত কাজ করার আগেই বাংলাদেশের হয়ে যায় গড়বড়। দুই ওপেনার লিটন দাস আর তানজিদ হাসান তামিম এই মাঠে ভারতের বিপক্ষেও পেয়েছিলেন ভালো শুরু। ইতিবাচক মানসিকতায় খেলছিলেন দুজনেই। ৬৯ বলে ৭৬ তোলার পর তাদের জুটি ভাঙে তানজিদের আউটে। ৩৪ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন বাঁহাতি তরুণ। পার করেন বেশ সাদামাটা আসর। লিটনের কাছে দলের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। রয়েসয়ে খেলে দলকে এদিনও ভরসা দিচ্ছিলেন। তবে ম্যাচ অ্যাওয়ার্নেসের ঘাটতি আবারো প্রকট করেছেন তিনি। ঠিক ৩৬ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে যেভাবে সফট ডিসমিসাল হয়েছেন তাতে তার মাইন্ডফ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ৯ ম্যাচে ২৮৪ রান করে আসর শেষ করলেন লিটন। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এতে অবশ্য পরিষ্কার গোটা দলের দুর্দশা। মুশফিকুর রহিম স্রেফ এক ইনিংসই ভালো খেলেছিলেন বিশ্বকাপে। শেষ ম্যাচটাও তার গেল বাজে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এদিনও ছড়াচ্ছিলেন দ্যুতি। টুর্নামেন্টে দলের সেরা ব্যাটার থিতু হয়ে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যদিও মারনাশ লাবুশানের দারুণ ফিল্ডিংয়ে ৩২ রানেই রান আউটে থামাতে হয় বিশ্বকাপে তার শেষ ইনিংস। লাবুশানের দারুণ থ্রোয়ে এর আগে থামতে হয় থিতু হওয়া আরেক ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তকেও। থিতু ব্যাটারদের অসমাপ্ত কাজ একা সমাপ্ত করতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। ৭৯ বলে ৭৪ রান সংখ্যা বলবে ভালো খেলেছেন তিনি। তবে ম্যাচ পরিস্থিতির দাবি ছিল আরো বেশি, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার দক্ষতা দেখাতে পারেননি হৃদয়। যদিও এই ইনিংসের আগে ভুলে যাওয়ার মতোই এক বিশ্বকাপ কাটছিল তার। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ টেল এন্ডারদের নিয়ে পার করান তিনশো। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ৩০৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো তিনশোর্ধ্ব সংগ্রহ, মনে হচ্ছিল অন্ততপক্ষে লড়াই করতে পারবে টাইগাররা। কিন্তু অবিশ্বাস্য কোনো স্পেল আসেনি বাংলাদেশের বোলারদের কাছ থেকে। এক মিচেল মার্শই যেন হারিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। তার ১৭৭ রানের হার না মানা ইনিংসে ৩০৭ রানের লক্ষ্যও অনায়াসে টপকে গেল অস্ট্রেলিয়া। ফলে হতাশায় মোড়া এক বিশ্বকাপ মিশন শেষ হলো বাংলাদেশের। ভরাডুবির বিশ্বকাপে শুধু দুটি জয় পেয়েছে লাল সবুজ দল। আসর শেষ করেছে আটে থেকে। রান রেটে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল?্যান্ডসের চেয়ে এগিয়ে তারা। তবে চ?্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হয়নি এখনও। প্রাথমিক পর্বের শেষ ম?্যাচে ভারতের বিপক্ষে ডাচরা হারলেই বাংলাদেশ খেলবে চ?্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। আর নেদারল?্যান্ডস জিতলে নবম স্থানে নেমে যাবে বাংলাদেশ। তাতে ভেসে যাবে চ?্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত