ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং বিতর্ক, সৈয়দ রাসেলের প্রশ্ন

ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং বিতর্ক, সৈয়দ রাসেলের প্রশ্ন

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। প্রিমিয়ার লিগে একই আম্পায়ারকে দিয়ে একটি বিশেষ দলের খেলা পরিচালনা করার অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের অবস্থা আরো খারাপ। তৃতীয় বিভাগে ম্যাচ না খেলেও ফল হওয়ার ‘কীর্তি’ আছে! বিতর্কিত আম্পায়ারিং বিব্রত করছে দেশের ক্রিকেটকে। এ সমস্যা দূর করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগেও চলছে বিতর্কিত এবং নিম্নমানের আম্পায়ারিং। বিশেষ একটি দলকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন আম্পায়াররা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক ফুটেজে উঠে এসেছে নিম্নমানের আম্পায়ারিংয়ের এমন চিত্র। ঘরোয়া ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে চলছে আলোচনা। জাতীয় দলের এক সময়ের নিয়মিত মুখ সৈয়দ রাসেল তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ডে তুলে ধরেছেন এর নমুনা।

প্রশ্ন তুলেছেন এসব আম্পায়ারিং এর মান নিয়ে। লক্ষ্যণীয়, জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড়ে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম বিভাগের দলকে যেন বিশেষ সুবিধা দিতে মরিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত আম্পায়াররা। মাঠে তাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষুব্ধ ক্রিকেটাররা। তবে কোড অব কন্ডাক্টের কারণে নিরুপায় তারাও। চট্টগ্রাম এবং খুলনা বিভাগের ম্যাচের চিত্র। আল-আমিন হোসেনের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন চৌধুরী ইয়াসির আলী রাব্বি। সংগ্রহীত ভিডিও ফুটেজেই স্পষ্ট মাটিতে পড়ার আগেই নিয়ম অনুযায়ী বৈধ ক্যাচ নিয়েছেন ফিল্ডার। খুলনা বিভাগ উইকেট পাওয়ার উল্লাসে মত্ত। তবে স্ট্রাইকে থাকা ইয়াসির রাব্বি নিজের অবস্থানে অনড়। আম্পায়ারও কোনো সংকেত দিলেন না আউটের। একই ম্যাচের আরেক চিত্র। নাহিদুল ইসলামের বলে শর্টে ক্যাচ। খুলনার খেলোয়াড়রা যখন উল্লাসে মত্ত, তখন চট্টগ্রামের নাইম নিজের হাত দিয়ে ইশারা করছেন বল ক্রিজে ড্রপ খেয়ে ফিল্ডারের কাছে গিয়েছে। এবারেও আম্পায়ার সায় দিলেন চট্টগ্রামের পক্ষে। আরো একবার ক্ষুব্ধ খুলনার ক্রিকেটাররা। দ্বিতীয় ফুটেজে চলছে চট্টগ্রাম এবং বরিশাল বিভাগের খেলা। স্ট্রাইকে সেই নাইম। বোলার সালমানের সোজা বল সরাসরি আঘাত করে নাইমের প্যাডে। নিশ্চিত এলবিডব্লিউ-এর উল্লাস বরিশালের খেলোয়াড়দের মধ্যে। তবে আম্পায়ার অনড়।

অনড় ব্যাটার নাইমও। বরিশালের খেলোয়াড়রা ক্ষুব্ধ হলেও ক্রিকেটের শেখানো বুলি ‘আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত’ মেনেই চলতে হচ্ছে তাদের। এর আগে মোহামেডানের জার্সিতে স্ট্যাম্পে লাথি মেরে কিংবা স্ট্যাম্প উপড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটের বড় তারকা সাকিব আল হাসান। তাকে সেসময় বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। সেবার বেশ বড় রকমের ঝড় সইতে হয়েছিল দেশের আম্পায়ারদের। যদিও তাতে সামগ্রিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে এমন প্রতিবাদ সম্ভব ছিল শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটার বলেই। স্থানীয় পর্যায়ের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন শুধু নিজের বৃহত্তর ক্রিকেটিং ক্যারিয়ারের কথা ভেবে। তবে এমন আম্পায়ারিং দেশের ক্রিকেটকেই যে পিছিয়ে দিচ্ছে, তাতে যেন নজর নেই কারোরই। জাতীয় দলের সাবেক পেসার সৈয়দ রাসেল এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি বর্তমানে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন খুলনার হয়ে। রাসেল গত শনিবার আম্পায়ারদের নিয়ে প্রথমে দুটি ভিডিও প্রকাশ করেন।

সেখানেই জানান ক্ষোভের কথা। এরপর রোববার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমার দলের বিপক্ষে নয়, সব দলের বিপক্ষেই সিদ্ধান্ত গেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে পক্ষ-বিপক্ষ চাই না, চাই সঠিক আম্পায়ারিং। এই তর্ক-বিতর্ক একদিনে শেষ হবে না, তারাও মানুষ। এর জন্য প্রযুক্তি দরকার, ম্যাচ ব্রডকাস্টিংয়ের আওতায় আনতে হবে।

যখন ব্রডকাস্ট থাকবে, তখন ডিসিশনগুলো সবাই মানতে বাধ্য হবে। আসলে এটা সবসময় হয়, ফেসবুকে পোস্ট দেয়া শুধু ক্ষোভ থেকেই।’ রাসেলের দাবি- পরিচর্যা আগায় নয়, গোড়ায় করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতি আগের জায়গাতেই আটকে আছে বলে মত সাবেক এই পেসারের, ‘অনেক সময় এরকম ঘটনা ইচ্ছাকৃত কেউ করে না। তবে যারা ভুক্তভোগী তাদের এমন কিছুই মনে হবে। এরপর কিছু বলা বা প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে ম্যাচ শেষে ফাইন করা হয় এবং পয়েন্ট কাটে। এর একটা সমাধান হওয়া উচিত।

আমরা আগের জায়গাতে পড়ে আছি। উন্নতি করতে চাই, তবে সেই উন্নতি করতে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হয়, আগায় না। আমরা আগেও ৮ উইকেটে হারতাম, এখনো সেভাবেই হারি।’ কোচদের এমন হতাশার বক্তব্যের পর বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জবাবে তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখে বিসিবি অনুসন্ধান করবে বলে জানান। মিঠু বলেন, ‘আম্পায়ারদের যে ভুল হচ্ছে সেটা নিয়ে তারা মতামত দিতেই পারে। ভুল তো হতেই পারে, এখন কথা হচ্ছে এটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে কি না। এখনকার চেয়ে ৩-৪ বছর আগে আরো খারাপ অবস্থা ছিল, কনফিডেন্স লেভেলও ভালো ছিল না আম্পায়ারদের। এখন প্রথম কথা হচ্ছে যদি এমন কিছু পাই তাহলে এনামুল হক মনি বা সেলিম সাহেদদের দিয়ে অনুসন্ধান করাব।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত