‘সংবর্ধনা নয় অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন চাই’

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যা আগে কোনো প্যারা স্পোর্টস কিংবা অ্যাবল শাটলার করে দেখাতে পারেননি; সেটাই করে দেখিয়েছেন দুই প্যারা শাটলার (প্রতিবন্ধী) মোহাম্মদ আলী ইমাম এবং জয়তু ধর। জাপান প্যারা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট-২০২৩ থেকে দুটি ব্রোঞ্জ জিতে সদ্যই ঢাকায় পা রেখেছেন তারা। ইমাম ও জয়তুর পদক জয়ের নেপথ্যের কারিগর বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক এবং এক সময়ের কোর্ট কাঁপানো শাটলার এনায়েত উল্যা খান। মূলত এনায়েত ম্যাজিকেই এত বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছেন তারা। জাপান ছাড়াও চলতি বছর ফক্সেস ইন্দোনেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট থেকেও একটি ব্রোঞ্জ জেতার রেকর্ড গড়েছেন এনায়েতের আরেক শিষ্য ইয়ামিন হোসেন। দুটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং কোচের ভূমিকায় ছিলেন এনায়েত। দেশকে এত বড় সাফল্য এনে দেয়ার পরও কোনো সংবর্ধনা-পুরস্কার চান না তিনি। শুধু চান ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে সাফল্যের স্মরক তুলে দিতে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টন যে এখনো অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন পায়নি সেটার দ্রুত বাস্তবায়ন। এছাড়া আরো অনেক বিষয় নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এনায়েত উল্যা খান। সেসব কথাই তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: জাপান প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনালে প্রথমবার অংশ নিয়ে তাতে দুটি ব্রোঞ্জ জয়। পদক জয়ের অনুভূতি জানতে চাই।

এনায়েত উল্যা খান: এ আসলে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের নয়। এক সময় আমি খেলোয়াড় ছিলাম। এখন কোচ, সংগঠক দুই ভূমিকাতে কাজ করছি। পদক পাওয়া তো অনেক দূরের বিষয়। কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আগে প্লেয়ার বাছাই করা, প্লেয়ারের মেরিট-ডিমেরিটসগুলো খুঁজে সেভাবে তাকে তৈরি করা। কোচ হিসেবে এই কাজগুলো বিরাট চ্যালেঞ্জিং। জাপান প্যারা ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে আমরা মূলত এককে খেলার জন্যই গিয়েছিলাম। পরে ম্যানেজারস মিটিংয়ে গিয়ে মূল কাজটা করি। এককের পাশাপাশি কীভাবে এই টুর্নামেন্টে আমার প্লেয়াররা ডাবলসে কিংবা মিক্সডস ডাবলসে খেলতে পারে সেসব ভাবতে শুরু করি। আপনারা জানেন এই টুর্নামেন্টের জন্য জাপান আমাদের দুজন প্লেয়ারকে সিলেক্ট করে। মোহাম্মদ আলী ইমাম এবং জয়তু ধর। ডাবলসে এক ক্যাটাগরির দুই প্লেয়ারের অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। আমার দুই প্লেয়ারই এসএল-৪ ক্যাটাগরির। আমি তাই কায়দা করে ইমামের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের প্লেয়ার এবং জয়তুর সঙ্গে একজন ভারতীয় প্লেয়ার সেট করে দেই। দুই দেশের প্লেয়ারদের সেট করাটাও ছিল দারুণ কষ্টের। কারণ নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের কোচকে নানানভাবে বুঝিয়ে শেষতক রাজি করিয়েছি। এর পরের ঘটনা তো সবাই জানেন। আমি ভেবেছিলাম একটা পদক হয় তো আসবে, যদি আল্লাহ পাক সহায় হোন। কারণ নিউজিল্যান্ডের প্লেয়ার খুবই ভালোমানের ছিল। প্যারা ব্যাডমিন্টনে ওর ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং ১৩। পরে দেখলাম আমার দুই প্লেয়ারই তাদের সঙ্গীদের নিয়ে সেমিফাইনালে উঠে দেশকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছে। আমার সাংগঠনিক দক্ষতা আর ইমাম-জয়তুর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ আয়োজকরা। ওরা বলেছে তোমরা প্রথমবার অংশ নিয়েই পদক জিতে ফেললে। সত্যিই বলতে একজন কোচ হিসেবে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক যে কোনো সাফল্যের পর যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা কিংবা মন্ত্রী মহোদয় নিজে ডেকে বহু ক্রীড়াবিদকে নানা সময়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, খেলোয়াড়দের সাফল্যকে সম্মান জানিয়েছেন। আপনার দল তো অনেক বড় সাফল্য বয়ে আনল। মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

এনায়েত উল্যা খান: আপনারা জানেন আমাদের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি স্যার একজন খেলাধুলাপ্রিয় মানুষ, খেলা অন্তঃপ্রাণ মানুষ। যে কোনো খেলার উন্নয়নে, খেলোয়াড়দের বিপদে-আপদে সবার আগে মন্ত্রী মহোদয় ছুটে আসেন। এখন উনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশাকরি আমাদের সাফল্যের খবর উনি শুনেছেন। আমাদের পরিকল্পনা আছে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার। আপনারা জানেন প্যারা ব্যাডমিন্টন থেকে এ বছর আরো একটি আন্তর্জাতিক সাফল্য কিন্তু আমি এনেছি। আমার প্লেয়ার ইয়ামিন হোসেন ইন্দোনেশিয়া ফক্সেস ইন্টারন্যাশনাল প্যারা ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। বাংলাদেশের প্যারা খেলোয়াড়দের জন্য এই সাফল্যগুলো খুবই ইতিবাচক দিক। প্যারা ব্যাডমিন্টনে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে অল্প দিনেই তিনটি পদক জিতেছে। যেটা আর কোনো স্পোর্টস ইভেন্ট থেকে আসেনি। রিজিওনাল টুর্নামেন্ট আর জাপানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আসর কিন্তু এক নয়। এটা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বিরাট বড় সাফল্য। যা প্যারা স্পোর্টসে অতীতে ঘটেনি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টন এখনো ফেডারেশন কিংবা অ্যাসোসিয়েশনের মর্যাদা পায়নি। এটার পেছনের কারণ কী?

এনায়েত উল্যা খান: আমাদের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল স্যার কিন্তু স্বাক্ষর করে এরইমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। আমি স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি যতটুকু জানেছি মন্ত্রী মহোদয়ের স্বাক্ষরকৃত সেই ফাইল এখন ক্রীড়া পরিষদে জমা হয়ে আছে। প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় আছে। ফেডারেশন হিসেবে অনানুষ্ঠানিকভাবে এতদিন কাগজে-কলমে থাকলেও এটাকে অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃত দেয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশাকরি আমরা শিগগিরই এর অনুমোদন পেয়ে যাব।