অস্ট্রেলিয়ার হেক্সা নাকি ভারতের তৃতীয় শিরোপা

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

দেড় মাসব্যাপী আইসিসি ওয়ানডে ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ এখন শেষের অপেক্ষায়। সেজে উঠেছে সমাপনী মঞ্চ। দুই শিবিরেই উন্মাদনা তুঙ্গে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। তৃতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলবে ভারত? নাকি ষষ্ঠবার বিশ্বজয়ের তকমা পাবে অস্ট্রেলিয়া? তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। একদিকে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি-মোহাম্মদ শামিরা। অন্যদিকে খারাপ শুরু করেও ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরেছে অজি ব্রিগেড। তবে শেষ হাসি কারা হাসে তা দেখতে ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। দর্শক ধারণক্ষমতায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যুতে আজ বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, এদিন গ্যালারি পুরোটাই যে ঠাসা থাকবে ভারতীয় সমর্থকে। হইহুল্লোড়ে তারা মাতিয়ে রাখবে স্বাগতিকদের। বিশাল এই সমর্থকগোষ্ঠীকে চুপ করিয়ে দেয়ার মজাটা নিতে চায় অস্ট্রেলিয়া। তবে সেটি খুব একটা সহজ হবে না। কারণ ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের পর তৃতীয় শিরোপা জয়ের পথে টানা ১০ ম্যাচে দাপটের সঙ্গে জয়ী হয়েছে ভারত। ঘরের মাঠে সুবিধাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে ফাইনালে অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই তারা খেলতে নামছে। ক্রিকেট পাগল দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আর কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে পারেনি। যে কারণেই কালকের ফাইনালটি অন্যরকম এক আমেজ এনে দিয়েছে ভারতীয়দের সামনে। কিন্তু প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াও ছেড়ে দেবার দল নয়। প্রথম দুই ম্যাচে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করার পর অস্ট্রেলিয়াকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রেকর্ড অষ্টম বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলতে আসা দলটির মধ্যে ভিন্ন কিছু যে অবশ্যই রয়েছে, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত। ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার টিভি চ্যানেল ইন্ডিয়াতে বলেছেন, ‘এটা একটি অবিশ্বাস্য ম্যাচ হতে চলেছে। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে খেলাটা মোটেই সহজ নয়। এই দলটি জানে অসম্ভব পরিস্থিতি থেকে কিভাবে ফিরে আসতে হয়। তারা জানে ফাইনালে কীভাবে খেলতে হয় এবং জিততে হয়। সে কারনেই আমি বিশ্বাস করি ভারতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কিন্তু একই সাথে রোহিত শর্মার দলের ওপরও আমার পূর্ণ আস্থা আছে।’ চার সপ্তাহ আগে গ্রুপ পর্বে চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত। প্যাট কামিন্সের দল মাত্র ১৯৯ রানে অল আউট হয়। লক্ষ্মৌতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানে পরাজিত হওয়ার পর কলকাতায় গত বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে প্রোটিয়াদের ৩ উইকেটে পরাজিত করে প্রতিশোধ নিয়েছে কামিন্সরা। আরেক সেমিফাইনালে বিরাট কোহলির ওয়ানডেতে রেকর্ড ৫০তম সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডকে মুম্বাইয়ে ৭০ রানে পরাজিত করে ভারত। এই মুহূর্তে তিনটি সেঞ্চুরিসহ ৭১১ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কোহলি। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে ৫৫০ রান নিয়ে তালিকার পরের অবস্থানে রয়েছেন রোহিত। এবারের আসরে রোহিতের অধিনায়কত্ব দারুন প্রশংসিত হয়েছে। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেন রোহিতকে ‘প্রকৃত নায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন। মোহাম্মদ সামি ২৩ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। কিউইদের বিপক্ষে ৫৭ রানে ৭ উইকেট নিয়ে সামি রেকর্ড গড়েছেন। আসরের প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পরাজয়ের পর অস্ট্রেলিয়া নিজেদের লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে। টানা সাত গ্রুপ ম্যাচে জয়ী অস্ট্রেলিয়ারর জন্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল স্বপ্ন পূরণের ম্যাচ। ৭ উইকেটে ৯১ রান সংগ্রহ করা অস্ট্রেলিয়া যখন পরাজয়ের ক্ষণ গুনছিল তখন ত্রাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২০১ রানের অভাবনীয় এক ইনিংস খেলে তিনি সবার মন জয় করেন। ২২ উইকেট পাওয়া অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনর অ্যাডাম জাম্পার সঙ্গে পেসার মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজেলউড সঠিক সময়ে নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন। ১২ ওভারের মধ্যে সেমিফাইনালে প্রোটিয়াদের ২৪ রানে ৪ উইকেট দখল করেন স্টার্ক ও হ্যাজেলউড। ৩৪ রানে স্টার্ক তিনটি ও ১২ রানে হ্যাজেলউড নিয়েছেন ২ উইকেট। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০০৩ সালে জোহানেসবার্গে ১২৫ রানে জয়ী হয়েছিল টিম অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে এ বছর এনিয়ে দুই দলের অষ্টম ম্যাচ হতে যাচ্ছে। হ্যাজেলউড বলেন, ‘এ বছর আমরা তাদের সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি। যে কারণে দলটি আমাদের কাছে পরিচিত। একই কথা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ভারত অবশ্যই ভালো দল। পুরো টুর্নামেন্টে তারা সেটার প্রমাণ দিয়েছে। তাদের দলে সত্যিকার অর্থে কোনো দুর্বলতা নেই। ফাইনাল ম্যাচটির জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।’ ভারতীয় টপ অর্ডার সম্পর্কে হ্যাজেলউড বলেন, ‘আশা করছি আগের ম্যাচের মতো আমরা আবারো শুরুতেই উইকেট তুলে নিতে পারব। যে কারণে ভারতের রান বেশিদূর এগোতে পারেনি।’ ফাইনাল ম্যাচ সামনে রেখে সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তাই অপরিচিত কন্ডিশনের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের দর্শকদের চাপ থাকবে অস্ট্রেলিয়ার ওপর। সম্ভাব্য বিরুদ্ধ পরিস্থিতি আন্দাজ করতে সমস্যা হচ্ছে না কামিন্সের। তবে কঠিন এই চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করে ভারতীয় সমর্থকদের চুপ করানোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া।