তিন সংস্করণে অধিনায়ক সাকিবকে পছন্দ বিসিবি’র

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে অধিনায়ক আগেই ছিলেন সাকিব আল হাসান। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন তামিম ইকবাল। তারপর সাকিব আল হাসানের কাঁধেই ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব তুলে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ফলে তিন সংস্করণে টাইগারদের দলনেতা হন এই অলরাউন্ডার। তবে বিশ্বকাপে সব ম্যাচে দলের নেতৃত্ব দেয়া তো দূরের কথা খেলতেও পারেননি তিনি।

সাকিব চোট পাওয়ায় কয়েক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর দেশে ফিরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজেও অধিনায়ক ছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে তো বটেই টি-টোয়েন্টি সংস্করণেও অধিনায়ক থাকবেন এই তরুণ। তাতে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন হয়তো শান্তকেই দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়ক হিসেবে ভাবছে বিসিবি। তবে এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। সাকিব চোট থেকে ফিরলেও তাকেই তিন সংস্করণের অধিনায়ক হিসেবে দেখা যাবে বলে জানান তিনি।

আপাতত ক্রিকেট মাঠে না থাকলেও সাকিব নেমে পড়েছেন রাজনীতির ময়দানে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লিগের হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে লড়াই করবেন তিনি। গত মার্চে ৩৬ পেরিয়েছে তার বয়স। সব মিলিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন এখন উঠছে নিয়মিতই। ধোঁয়াশার কিছুটা অবশ্য দূর করেছেন সাকিব। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাতীয় দলে বেশি সময় দিতে সামনের দিনগুলোতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পরিকল্পনা আছে তার। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে চাওয়ার কারণে সাকিবকে জাতীয় দলের সিরিজে পাওয়া নিয়ে নানাসময়ে টানাপড়েনে থাকতে হয়েছে বিসিবিকে। সেই সাকিবের ভাবনার পরিবর্তনকে বোর্ডও সাদরে আলিঙ্গন করে নিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই স্বস্তির কথাই বললেন জালাল ইউনুস। ‘ওর (সাকিব) কথা মিডিয়াতে দেখেছি। এটা আনন্দের ব্যাপার। এখন সে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে দেশের ক্রিকেটের ওপর বেশি মনোযোগ দেবে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা স্বস্তির খবর। আমরা চাই, যতগুলো সংস্করণ আছে, সে যেন আমাদের দেশের জন্য খেলুক। এটা আমাদের কামনা।’ আগেই দুই সংস্করণের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। গত অগাস্টে তামিম ইকবাল ওয়ানডের দায়িত্ব ছাড়ার পর এই সংস্করণেও দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ছুটি ও চোটসহ নানা পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে জাতীয় দলে সাম্প্রতিক সময়ে তেমন নিয়মিত নন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের আগে টি স্পোর্টসে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এই টুর্নামেন্ট শেষে একদিনও আর অধিনায়কের দায়িত্বে থাকবেন না তিনি। তবে সাকিবকে নিয়ে বিসিবির ভাবনার পরিবর্তন আসেনি, সেটিই আরেকবার নিশ্চিত করলেন জালাল ইউনুস। বরং সামনেও লম্বা সময় তিনি নেতৃত্বের ভার বয়ে নেবেন বলেই আশা করে বোর্ড।

‘এখানে আসলে (অধিনায়কত্ব নিয়ে) নতুন করে ভাবনার কিছু আসে না। সে (সাকিব) এখনো আমাদের অধিনায়ক। এখন আমরা শান্তকে দায়িত্ব দিয়েছি। শান্তকে আমরা বলেছি যে, সামনের দুইটা সিরিজ আছে, যেটা নিউজিল্যান্ড সিরিজ, সেজন্য তাকে অধিনায়কত্ব দিয়েছি।’ ইতিপূর্বে সাকিব আল হাসান দীর্ঘ সময়ের জন্য দলের নেতৃত্ব চেয়েছিলেন। বিসিবির এই পরিচালক বলেন, ‘সাকিবকে একটা লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়কত্ব দেয়া হয়েছে। এখনো সেসব সংস্করণের অধিনায়ক। সাকিব ফিরলে আমরা ধরে নিচ্ছি সে-ই অধিনায়ক। এখন সামনে সে অধিনায়ক থাকবে কী থাকবে না, এরকম কোনো প্রশ্ন উঠেনি। সে জানে সে এখনও অধিনায়ক। আমরাও তাকে চাই। এরই মধ্যে তাকে সেই দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি।’ প্রাথমিকভাবে সাকিবের সহ-অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল লিটন কুমার দাসকে। বিশ্বকাপের ঠিক আগে সাকিবের অনুপস্থিতিতে তার নেতৃত্বে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে লিটনকেও বিশ্রাম দেয়া হলে অধিনায়কত্ব পান শান্ত এরপর বিশ্বকাপে শান্তকেই আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সহ-অধিনায়ক করা হয়, যা থেকে বার্তা মেলে, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য হয়তো শান্তর কথাই ভাবছে বোর্ড। এবার নিউজিল্যান্ড সফরে শান্তর ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। বিসিবি পরিচালক জালালের ধারণা, সাকিব-পরবর্তী সময়ে এই দুজনকেই দেখা যাবে বাংলাদেশের নেতৃত্বে। ‘একটা সময় তো আসবে যে, সাকিব আর খেলবে না। হয়তো কোনো সংস্করণ থেকে সরে যাবে। তখন আমাদের হাতে অধিনায়ক হওয়ার মতো শান্ত-মিরাজ আছে। আমাদের (বোর্ডের) কাছে মনে হয়, বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সামর্থ্য দুজনেরই আছে।’