সেই যুবাদের হাত ধরেই এবার এশিয়া জয়

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

যুবারদের হাত ধরেই প্রথমবার বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের তিন বছরের ব্যবধানে এবার এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল সেই যুবারাই। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি সাক্ষী হলেন লাল-সবুজের যুবাদের নতুন কীর্তির। বিজয় দিবসের ঠিক একদিন পর দুবাই থেকে ভেসে এলো দেশের ক্রিকেটের গৌরবমাখা অনন্য অর্জনের খবর। স্বপ্নটা জোরালো হয় সেমিফাইনালের পরপরই।

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়াকাপে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা ভারতকে হারিয়ে দেয় তারা। সেই স্বপ্নটা আরো চওড়া হয় আরেক সেমিফাইনালে পাকিস্তানের হারে। কিছুটা দুর্বল প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পায় ফাইনালে। যাদের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বেও মিলেছিল বড় জয়। সেই স্বপ্ন সত্যি করে আমিরাতকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। দুর্দান্ত এই জয়ে বাংলাদেশের যুবাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার দুবাইতে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮২ রান করে যুব টাইগাররা। জবাবে ১৫১ বল বাকি থাকতে মাত্র ৮৭ রানে গুটিয়ে যায় আমিরাত। বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়ক ছিলেন দারুণ ছন্দে থাকা ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি। করেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে জ্বলে ওঠে চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আরিফুল ইসলামের ব্যাটও। দুইজনই পেয়েছেন ফিফটি। তাতে আমিরাতকে বড় লক্ষ্যই ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। এরপর বল হাতে তিন পেসার মারুফ মৃধা, রহনত দৌল্লা বর্ষণ ও ইকবাল হোসেন ইমনের তোপে একশ রানও করতে পারেননি স্বাগতিকরা। এশিয়াকাপে এর আগের ৯ আসরের আটটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এর মধ্যে একবার পাকিস্তানের সঙ্গে শিরোপা ভাগাভাগি করে তারা। অপর একটিতে চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তান। অন্যদিকে এই আসরে আটবার খেললেও তেমন কোনো সাফল্য ছিল না বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ সাফল্য বলতে গেলে ২০১৯ সালে ফাইনাল খেলা। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে ৫ রানে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাদের। ২৮৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে এদিন শুরু থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করেন বাংলাদেশের পেসাররা। এদিনও শুরুতে গর্জে ওঠেন আরিফ।

আমিরাতের দুই ওপেনারকেই ছাঁটাই করেন এই পেসার। এরপর মঞ্চে আসেন বর্ষণ। মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে টানা তিনটি উইকেট তুলে নেন তিনি। ফলে ৫০ রানের আগেই আমিরাতের অর্ধেক ব্যাটার সাজঘরে। এরপর ইমনও তুলে নেন দুটি উইকেট। তখন বাংলাদেশের জয় ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু বাংলাদেশের অপেক্ষা বাড়াতে থাকেন ধ্রুব পারাশার। এক প্রান্ত আগলে রেখে যুব টাইগারদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে থাকেন এই ব্যাটার। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেও অপর প্রান্তে ঠিকই উইকেট তুলে নিতে থাকেন যুব টাইগাররা। স্পিনার শেখ পারভেজ জীবন ২টি উইকেট তুলে লেজ ছাঁটাইয়ের কাজ করেন। আরিফও বোলিংয়ে ফিরে তুলে নেন নিজের তৃতীয় শিকার। তাতে বিশাল জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতের স্রেফ দুই ব্যাটার ছুঁতে পেরেছেন ২ অঙ্ক। ৪০ বলে দুটি চারের সাহায্যে ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ধ্রুব। এছাড়া ১১ রান করেছেন আকশাত রায়। বাংলাদেশের হয়ে ৭ ওভার বল করে ২৯ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন আরিফ। ৬ ওভার বল করেন ২৬ রানের বিনিময়ে তিনটি শিকার বর্ষণেরও। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন ইমন ও জীবন। এর আগে এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৩ রানেই ওপেনার জিশান আলমকে হারায় বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় উইকেটে চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন আরেক ওপেনার শিবলি। ১২৫ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন এ দুই ব্যাটার। এরপর রিজওয়ান ফিরে গেলে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে ৮৬ রানের আরো একটি দারুণ জুটি গড়েন শিবলি।

তাতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে নামা শিবলি টিকে ছিলেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল আগে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। একপ্রান্ত আগলে রেখে তার ব্যাট থেকে আসে ১২৯ রান। ১৪৯ বল মোকাবিলায় তিনি ১২ চারের সঙ্গে মারেন ১ ছক্কা। এর আগে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। দুটি ফিফটিও করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তিনি এবারের আসর শেষ করেছেন পাঁচ ম্যাচে ৩৭৮ রান নিয়ে। তার ধারেকাছে নেই আর কেউ।

এখন পর্যন্ত ২৫০ রানও আসেনি আর কোনো ব্যাটারের কাছ থেকে। ৭৮ বলে হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছানো শিবলি ৩ অঙ্কে পৌঁছান ১২৯ বলে। ৭১ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬০ রান করেন রিজওয়ান। আরিফুলের ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৫০ রানের আগ্রাসী ইনিংস। শেষদিকে অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি খেলেন ১১ বলে ২১ রানের ক্যামিও। আমিরাতের হয়ে আয়মান আহমেদ ৪ উইকেট নেন ৫২ রানে। যার তিনটিই তিনি শিকার করেন বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ ওভারে। ওমিদ রেহমান ৪১ রানে পান ২টি উইকেট।