নিউজিল্যান্ডে আরো একটি হার বাংলাদেশের

নিউজিল্যান্ডের বিরূপ কন্ডিশনে বরাবরই টাইগারদের পারফরম্যান্স মিয়মান। তার ওপর দলের সেরা অস্ত্র সাকিব আল হাসান চোটের কারণে অনুপস্থিতি। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের অনুপস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে অফ ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু লাল-সবুজ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ককে পুরোপুরি হতাশ করেছেন অনেক দিন ধরে জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা এই ব্যাটার। স্বাগতিক কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন সৌম্য। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দলকে হতাশ করেছেন তিনি। ৬ ওভার বল করে ৬৩ রান দেন সৌম্য। ব্যাট হাতেও পুষিয়ে দিতে পারেননি। ৪ বল খেলে রানের খাতা খোলা হয়নি তার। অবশ্য এদিন নিজেকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছেন এনামুল হক বিজয়। তাতে অবশ্য ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ দল। রোববার ডানেডিনে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ডিএলএস মেথডে ৪৪ রানে হেরেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। বৃষ্টিতে ৩০ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ২৩৯ রান করেছিল কিউইরা। বৃষ্টি আইনে ২৪৫ রানের জয়ের লক্ষ্য পেয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু নির্ধারিত ওভারে তারা থেমেছে ২০০ রানে। বেশিরভাগ সেরা তারকাকে বিশ্রামে রেখে দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও বাংলাদেশকে সহজেই হারালো ব্ল্যাকক্যাপসরা। সিরিজে এগিয়ে যেতে কিউইদের প্রধান দুই নায়ক ল্যাথাম আর ইয়ং। ৮৪ বলে ১৪ চার, ৪ ছক্কায় ১০৫ রান সঙ্গে অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে ম্যাচ সেরা ইয়ং। অধিনায়ক ল্যথাম ৭৭ বলে ৯ চার, ৩ ছক্কায় ৯২ করে মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেয়ার কাজটা করেন ঠিকঠাক। অ্যাডাম মিলনের সঙ্গে মিলে অনভিজ্ঞ উইলিয়াম ও’রর্কি, জশ ক্লার্কসেন, জ্যাকব ডাফিরা উইকেট তুলেছেন। মাঝের ওভারে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রো এনেছেন ইশ সোধি, রাচিন রবীন্দ্র। স্বাগতিকদের বোলিং আক্রমণ তাই ছিল গোছানো। ওভারপ্রতি ৮ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়ার চ্যালেঞ্জ থাকলেও ছোট মাঠে সেটা একদম নাগালের বাইরে ছিল না। কিন্তু কঠিন চ্যালেঞ্জে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। নিজের দলে ফেরার প্রশ্নবিদ্ধ করে সৌম্য সরকার ফেরেন কোনো রান না করেই। নিউজিল্যান্ডের এসব পিচে শুরুর কয়েক ওভার ছাড়া ব্যাটিং হয় আদর্শ। সৌম্য শুরুর স্যুয়িং সামলাতে পারেননি। অ্যাডাম মিলনের বলে খোঁচা মেরে দেন স্লিপে ক্যাচ। অধিনায়ক শান্ত নেমে পাননি তাল। থিতু হওয়ার আগে রিভার্স সুইপ করে তার বিদায় ইশ সোধির বলে বোল্ড হয়ে। আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয় জ্যাকব ডাফির বলে ৮ রানে জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগাচ্ছিলেন। লিটন দাসের সঙ্গে তার জুটিও কমে উঠেছে মনে হচ্ছিল। কিন্তু থিতু বিজয় ফেরেন জশ ক্লার্কসনের প্রথম উইকেটের শিকার হয়ে। লিটনকে চারে মনে হচ্ছিল, দায়িত্ব নেওয়ার জায়গায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ক্লার্কসনের স্লোয়ার বাউন্সারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ২২ রানে ফিরে আরো একটি সফট ডিসমিসাল যোগ হলো তার। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও বিদায় নেন রিভার্স সুইপের চেষ্টায়। রাচিন রবীন্দ্রের বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ জমা পড়ে তার। তাওহিদ হৃদয় ১ রানেই ফিরতে পারতেন। সোধি এলবিডব্লিউর রিভিউ না নেয়ায় বেঁচে যান। এরপর আফিফ হোসেনের সঙ্গে জুটি জমে উঠে তার। দুজনে মিলে ফের রানের ¯্রােত আনেন বাংলাদেশ ইনিংসে। ৩৮ বল ৫৬ রানের জুটি ভেঙেছেন সোধি। ২৭ বলে ৩৩ করে সহজ ক্যাচে ফেরেন তিনি। ডাফির বলে একই পরিণতি আফিফেরও। বিশ্বকাপের পর দলে ফেরা বাঁহাতি ব্যাটার আউট হন ২৮ বলে ৩৮ রান করে। নিজে কিছু রান করলেও টেল এন্ডারদের নিয়ে জেতার আভাস তৈরি করতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। অথচ টস জিতে প্রত্যাশিতভাবে আগে বোলিং করার সুযোগ মিলেছিল। টস শেষে এক পশলা বৃষ্টির আকাশের নিচে শুরুর সুবিধা কাজেও লাগছিল। প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট তুলে নিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম। নিউজিল্যান্ড ইনিংসে এরপর আরও দুই দফার বৃষ্টি খেলায় করল ছন্দপতন। কিন্তু তাতে যেন ভিত শক্ত হলো ল্যাথামণ্ডইয়ংয়ের। শুরুর ঝাপটা শেষ হতেই ব্যাটিং স্বর্গের ছোট মাঠ হয়ে উঠল তাদের চার-ছয়ের মঞ্চ। মাত্র ৪ স্পেশালিষ্ট বোলার নিয়ে খেলতে নেমে যাওয়া বাংলাদেশের কৌশলও তাদের দিল সুযোগ। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ১৪৫ বলে ১৭১ রান ম্যাচ থেকে যেন ছিটকে দিল বাংলাদেশকে। অধিনায়ক ল্যাথাম সেঞ্চুরির আগে ৭৭ বলে ৯২ করে ফিরলেও ইয়ং থামেন ৮৪ বলে ১০৫ রান করে। ১১৯.৪৮ ও ১২৫ স্ট্রাইকরেট বলে দেয় ওয়ানডে ম্যাচে কতটা আগ্রাসী ছিলেন তারা। নিউজিল্যান্ডের সাত উইকেট পড়লেও তাতে বোলারদের কৃতিত্ব দুটিই। সেগুলো শরিফুলের। মিরাজ ল্যাথামকে আউট করলেও মূলত স্লগ করতে গিয়েই ফেরেন কিউই কাপ্তান। বাকি চারটাই শেষ দিকের রান আউট। বাংলাদেশের হয়ে ৬ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার শরিফুল ইসলাম। এছাড়া ৫ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন মিরাজ। আগামী বুধবার নেলসনে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।