এবার নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খরা কাটবে বাংলাদেশের?

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

গত ১৬ বছরে মাত্র দুই জয়। তাও ভালো আস্তে আস্তে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খরা কাটতে শুরু করেছে। তাসমান সাগর পাড়ের দেশটিতে জয়ের স্বাদ পেতে শুরু করেছে টাইগাররা। প্রথমে সাদা পোশাক, পরে ৫০ ওভারের রঙিন পোশাকে অধরা জয় ধরা দিয়েছে। এবার দেশটিতে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ কুড়ি ওভারের ক্রিকেট রাঙানোর পালা। এবারের সফরে সেই প্রত্যাশা পুরণ হতে পারে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে একটা সময়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ৩২ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের দাপটে স্রেফ অসহায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন জয়সূর্য্যরে দেখা মিলে। সেদিন কাকডাকা ভোরে শত রঙের ছড়াছড়ি হয়; হাজার প্রজাপতির উড়াউড়ি হয়! বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন আসে চুপিসারে। দিনের আলো ফোঁটার আগেই মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশ হারায় নিউজিল্যান্ডকে। সেটাও সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। জয়ের সেই আনন্দ আগুনের স্ফূলিঙ্গ হয়ে ভেসে বেড়ায় ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রাণের মনের আয়নায়। তাসমান পাড়ের দেশটিতে প্রথম জয়ে আত্মবিশ্বাসের রেণু ছড়িয়ে পড়ে অন্য ফরম্যাটেও। ওয়ানডেতে ১৮ ম্যাচ পর বাংলাদেশ প্রথম জয়ের মুখ দেখে এবারের সফরের তৃতীয় ম্যাচে। নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৯৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৯ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয়। সেই আনন্দের রেশ এখনও বিরাজ করছে গোটা দল। দলবল নিয়ে শান্ত-লিটন-মিরাজরা গতকাল ছুটে গেছেন ওয়াইমারামা বিচে। টিম হোটেল ‘সিনিক হোটেল টে পানিয়া’ থেকে যা ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে। আজ বড়দিনে দলের জন্য রাখা হয়েছিল অফিসিয়াল ডিনার। দলের ক্রিকেটাররা সবাই একসঙ্গে হয়ে ডিনার করেছেন। বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। স্বাগতিকদের বিপক্ষে তাদের মাটিতে নয় ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সবকটিতেই হেরেছে। টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টির দুর্গও বাংলাদেশ ভাঙতে পারবে বলে বিশ্বাস দলের। ওয়ানডে খেলা চার ক্রিকেটার এরই মধ্যে বাংলাদেশে ফিরেছেন। মুশফিকুর রহিম, তানজিদ হাসান তামিম, রাকিবুল হাসান ও এনামুল হক বিজয়। টি-টোয়েন্টি দলের রনি তালুকদার, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, মাহেদী হাসানরা অনেক আগে দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভালো সময় পেয়েছেন তারা। এবার কেবল মাঠে নেমে নিজেদের মেলে ধরার পালা। এ বছর আট টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে খেলা সবকটি ম্যাচের মধ্যে কেবল একটি ম্যাচ হেরেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। যেখানে আফগানিস্তানকে এবং ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তিও রয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে হারিয়ে জয়ের বৃত্ত ভরাট করতে পারলে অনন্য এক অর্জন যুক্ত হবে বাংলাদেশের সাফল্যের খাতায়। এদিকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। ২০ দলের এই আসর হতে যাচ্ছে আইসিসির সবচেয়ে বড় মহাযজ্ঞ। যেখানে র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার বিবেচনায় বাংলাদেশও খেলার সুযোগ পাচ্ছে। যদিও এখনো সূচি ঠিক হয়নি। তবে বাংলাদেশকে বরাবরের মতো এবারও প্রথম পর্বে খেলতে হবে। বাছাইকৃত দলগুলোকে নিয়ে হবে প্রথম পর্ব। সেখান থেকে সুপার টেন। গতবার সেরা আট দলে থাকতে পারলে বাংলাদেশও সরাসরি প্রথম পর্বে খেলার সুযোগ পেত। সাকিবরা সেই সুযোগ লুফে নিতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বরারই বাংলাদেশের জন্য বিরাট দীর্ঘশ্বাস। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা না থাকায় ক্রিকেটের ছোট্ট সংস্করণের বড় আসরে কখনো ভালো অবস্থায় যেতে পারেনি বাংলাদেশ। র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় ছাড়া বড় কোনো সাফল্য আসেনি বিশ্বকাপের মঞ্চে। এবার হবে তো? প্রশ্নটা সময়ের কাছেই তোলা থাক। আপাতত প্রস্তুতি নিয়েই কথা বলা যাক। বিশ্বকাপের বাকি নেই ছয় মাস। দল এখন নিউজিল্যান্ড সফরে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে এই নিউজিল্যান্ড সফর দিয়েই। বিশ্বকাপের আগে এফটিপি অনুযায়ী ১১ টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি, মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি এবং এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচটি। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি ছাড়া বাকি দুটি ঘরের মাঠে। বিশ্বকাপের আগে এই ১১ ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বের এবং দল গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন, ‘বলতে গেলে বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডে তিনটি টি-টোয়েন্টির পর আমাদের দল লম্বা সময় পর আবার টি-টোয়েন্টি খেলবে। ওখানের কন্ডিশনে ওদেরকে হারাতে পারলে আমরা এই ফরম্যাটেও ভালো বুস্টআপ পাবো। প্রস্তুতির ভালো সুযোগ এটি।’ হাবিবুল মনে করিয়ে দিলেন সামনে বিপিএলও আছে, ‘বিপিএল প্রতি মৌসুমে একজন দুজন করে খেলোয়াড় সামনে আসে। গতবার যেমন তাওহীদ হৃদয় বিপিএলে সবার নজর কেড়ে সামনে আসলো। এখন দুই ফরম্যাটে খেলছে। বিপিএল আমাদের জন্য বিরাট একটা প্ল্যাটফর্ম। এখানে ভালো করতে পারলে অবশ্যই সুযোগ আসবে। রনি তালুকদারও কিন্তু বিপিএলে রান করে জাতীয় দলে ফিরেছে। সে এখন নিউজিল্যান্ডে আছে। বিপিএলে ভালো করলে অবশ্যই সুযোগ মিলবে।’