সৌম্য নিজেই নিজেকে ফিরিয়ে এনেছেন

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রথম মেয়াদে কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রিয় শিষ্য ছিলেন সৌম্য সরকার। তিনি চলে যাওয়ার পর সৌম্যর পারফরম্যান্সেও ভাটা পড়ে। যে কারণে জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই ওপেনার। টাইগারদের প্রধান কোচ হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ করতে এসে সৌম্যকে জাতীয় দলের বাইরে দেখে নির্বাচকদের বলেছিলেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে। হাথুরুর খুব ইচ্ছে ছিল, সৌম্যকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলানোর; কিন্তু ওই সময় তার বাজে ফর্মের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে দলে ফেরানো হয় সৌম্যকে। তাকে দলে নেয়ায় উঠেছিল বহু প্রশ্ন। তবে সেসব প্রশ্ন আপাতত চাপা পড়ে গেছে তারর পারফম্যান্সে। নিউজিল্যান্ডের মাঠে রেকর্ডময় সেঞ্চুরি করে একরকম প্রত্যাবর্তনই যেন হয়ে গেছে সৌম্যের। নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেত ১৫১ বলে ১৬৯ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য।

বিদেশের মাঠে বাংলাদেশি ব্যাটারদের সবচেয়ে বড় ওয়ানডে ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের মাঠে এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইনিংস। লিটন দাস (১৭৬) ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের ওয়ানডেতে এত লম্ব ইনিংস নেই। সেটাই শেষ নয়। নেপিয়ারে ঘাসের উইকেটে ছোট ছোট সুইং আর খুব ভালো লেন্থে বল ফেলে ৩ কিউই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে নিজের বোলিং সামর্থ্যরে পরিচয়টাও নতুন করে দিয়েছেন সৌম্য। সব মিলিয়ে নিজের অন্তর্ভুক্তিটাকে যথার্থতার প্রমাণ দিয়েছেন এ বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচকরা খুব খুশি। তবে এই ইনিংসের আগে সৌম্য যে কঠিন পরিস্থিতিতে ছিলেন তা জানেন প্রধান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রবল চাপ সামলে ফেলা ব্যাটারের কাছ থেকে টি-টোয়েন্টিতেও বড় কিছুর আশা তার। ফর্মের বাইরে থাকা সৌম্যকে আবার দলে নেয়ার বিপক্ষে ছিলেন ক্রিকেট অনুরাগি ও ভক্ত-সমর্থকদের বড় অংশ। তাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছেন সৌম্য। এটা কোচ হাথুরুর নৈতিক জয়।

তিনি কী ভাবছেন?

সৌম্যর ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠা কীভাবে দেখছেন টাইগার হেড কোচ? প্রিয় শিষ্য ভালো খেলায় যারপরনাই খুশি হাথুরু এবং বলে দিলেন, তিনি জানতেন অর্থ্যাৎ বিশ্বাস করতেন সৌম্য ভাল খেলবে। সৌম্যর সামর্থের ওপর তার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল সব সময়। তাই মুখে এমন কথা, ‘সে (সৌম্য) যেভাবে পারফর্ম করেছিল, তাতে আমি খুশি। আমি জানতাম সে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার মতো ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখে। আমি যখন এখানে ছিলাম তখন সে এটা করে দেখিয়েছে। আমরা সবাই বলি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট, ফর্ম অনেক কিছুর কারণেই প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে আপনার মাথায় কি চলছে। আপনার মাথা যদি পরিষ্কার থাকে, আপনি যদি আপনার ভূমিকা বুঝতে পারেন, পরিবেশের সঙ্গে কমফোর্টেবল থাকলে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারে।

তার মাথাটা একেবারে পরিষ্কার, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সে পারফর্ম করতে না পারার মতো কোনো কারণ নেই।’ হাথুরু কিছুতেই মানতে রাজি নন যে তিনিই সৌম্যকে ফিরিয়ে এনেছেন।

তার উল্টো দাবি, ‘আমি না ও নিজেই নিজেকেই ফিরিয়েছে। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে এটা সৌম্যর জন্য ছিল যে, হয় মারও না হয় মরো। এটা প্রমাণ করে সে মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী। সে জানতো পুরো দেশ তার বিপক্ষে ছিল। সে যদি ব্যর্থ হতো, তাহলে কি হতো সেটা আমরা জানি না। আমরা যে কাজটা ভালো করেছি সেটা হলো, তাকে বিশ্বাস করেছি, তাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছি এবং পুরো দল তাকে সমর্থন দিয়েছে। তাতে মনে হয়ে সে ফর্ম ফিরে পেয়েছে।’