কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকত থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকত পর্যন্ত স্রোতধারার নাম-‘বাংলা চ্যানেল’। ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের এ বাংলা চ্যানেলটি ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছান আব্দুল ইলা। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে পাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্র সৈকত থেকে এ সাঁতার শুরু হয়। যেখানে অংশ নিয়েছিলেন ৪৩ জন সাঁতারু। এরমধ্যে দুজন নারী ছিলেন। দুই নারীর মধ্যে একজন ভারতীয়। ওই নারী সাঁতারুর নাম রচনা শর্মা ও বাংলাদেশি নারী সাঁতারুর নাম এমএসটি শোহাগী আক্তার। শেষ পর্যন্ত তিনজন তাদের সাঁতার শেষ করতে না পারলেও অপর ৪০ জন শেষ করেছেন। এরমধ্যে দুই নারী ভারতের রচনা শর্মা ৫ ঘণ্টা এবং শোহাগী আক্তার ৪ ঘণ্টা ২৬ মিনিটে চ্যানেলটি পাড়ি দিয়েছেন। এবারের সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা। ১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২৩’ এর প্রধান সমন্বয়ক ও ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অংশ গ্রহণকারীর মধ্যে ফজলুল কবির সিনা, আব্দুল্লাহ আল সাবিত, মাহমুদুর রহমান বনি সাঁতার শেষ করতে পারেননি। অন্যদের মধ্যে যথাক্রমে সাইফুল ইসলাম রাসেল ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, এমডি ইলিয়াস হোসেন ৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট, সুমন বালা ৪ ঘণ্টা ১১ মিনিট, মো. মনিরুজ্জামান ৪ ঘণ্টা ১৩ মিনিট, মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট, সালাহ উদ্দিন ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট, আবাদুল ইসলাম ৪ ঘণ্টা ১৭ মিনিট, এমএসটি শোহাগী আক্তার ৪ ঘণ্টা ২৬ মিনিট, মো. কামাল হোসেন ৪ ঘণ্টা ২৭ মিনিট, এমডি আব্দুল মতিন ৪ ঘণ্টা ২৭ মিনিট, মাহাদী হাসান সায়েম ৪ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট, এমডি মইজ উদ্দিন মেরাজ ৪ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, এমডি মাহমুদুল হাসান ৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট, এমডি ফারুক হোসেন ৪ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট, এমডি নাসির উদ্দিন ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, শেখ মাহবুব উর রহমান ৪ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট, এমডি জামিল হোসেন ৪ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট, এমডি নাদিম মাহমুদ ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিট, আতিকুল ইসলাম ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট, জয়তু দাস ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট, উজ্জাল চৌধুরী ৪ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট, রচনা শর্মা (ভারতীয়) ৫ ঘণ্টা, শরভ শমাদ্দার ৫ ঘণ্টা ২ মিনিট, এমডি গোলাম হাফিজ ৫ ঘণ্টা ৫ মিনিট, আল্লামা দিদার ৫ ঘণ্টা ৭ মিনিট, হুমায়েদ ইছাহাক মুন ৫ ঘণ্টা ৭ মিনিট, জাফর সাদাক ৫ ঘণ্টা ৭ মিনিট, এমডি জিহাদ হুসেন ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিট, মো. নাজমুজ সাকিব শিমুম ৫ ঘণ্টা ২৩ মিনিট, হাসান ইমাম ৫ ঘণ্টা ২৪ মিনিট, লিপটন সরকার ৫ ঘণ্টা ২৬ মিনিট, মুরাদ হোসেন ৫ ঘণ্টা ২৬ মিনিট, এমডি আবুল্লাহ আল রোমান ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, সবুজ কুমার বর্মন ৫ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট, আব্দুল ইলা ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, এস এম শারিয়ার মাহমুদ ৫ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট, ফরিদ আহমেদ খান ৫ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট, এমডি মুশা আহমেদ ৫ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট, মোহাম্মদ তামিম পারভেজ ৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট এবং এমডি ফজলে রাব্বি চৌধুরী ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের সময় চ্যানেলটি পাড়ি দেন। এ সাঁতার উদ্বোধন করেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী। ভারতীয় সাঁতারু রচনা ভাটিয়া শর্মা জানান, তিনি ভারতের TRICLUB GURGAON -এর একজন সাঁতারু ও ট্রায়াথলন কোচ। তিনি এই বছর ফিনল্যান্ডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসহ চার বারের আয়রনম্যান ৭০, ৩ ফিনিশার। তিনি তার ৫০তম জন্মদিনে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ইংলিশ চ্যানেলে সাঁতার কাটতে প্রস্তুত হচ্ছেন। কয়েক বছর আগে যখন থেকে তিনি বাংলা চ্যানেল সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, তখন থেকে তিনি এটি সাঁতার কাটানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোভিড এটি ঘটতে বাধা দেয়। তিনি এখানে এসে রোমাঞ্চিত এবং তাদের সমর্থনের জন্য আয়োজক ও শোরোজ অ্যাডভেঞ্চারদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তিনি আরও আশা করেন, ভবিষ্যতে ভারত থেকে সাঁতারুরা অংশগ্রহণ করবে। টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, আসলে এই সাঁতার প্রতিযোগিতা প্রশংসার দাবিদার। ইংলিশ চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলা চ্যানেল ও বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করছে। প্রতিবছর কোনো না কোনো বিদেশি এই চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছেন। আগামীতে উপজেলা প্রশাসনের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে এই চ্যানেল সাঁতারে। বঙ্গোপসাগরে দূরপাল্লার সাঁতারের উপযোগী ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলেন লিপটন সরকার, ফজলুল কবির সিনা ও সালমান সাইদ।