চলে গেলেন ‘মোহামেডানের জহির ভাই’

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

তার ৮৯তম জন্মদিন গেছে গত শুক্রবার। কিন্তু দিনটি উদযাপনের মতো অবস্থায় ছিলেন না পঞ্চাশের দশকের গুণী ফুটবলার জহিরুল হক। হাসপাতালের বিছানায় অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।

গতকাল শনিবার জন্মদিনের দিন সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন একসময়ে পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলা বাঙালি এই ডিফেন্ডার (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও চার ছেলে-মেয়ে রেখে গেছেন। মিরপুরের বাসার পাশে আনসার ক্যাম্পের পাশে জামে মসজিদে প্রথম এবং মণিপুরিপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে জহিরুল হকের মরদেহ দাফন করা হয়।

জহিরুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে।

পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানের মাঠের তুখোর ফুটবলার ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে হাতেগোনা যে ক’জন ফুটবলার পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলেছিলেন, তাদেরই একজন ছিলেন এই রাইট ব্যাক ফুটবলার। তিনি ঢাকা মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছেন- ১৯৬০ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির কিংবদন্তি ফুটবলারদের একজনও তিনি। মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন পাঁচবার। মোহামেডানের হয়ে দুবার চ্যাম্পিয়ন হন। কবির-আশরাফ-মারী ত্রয়ী যখন মাঠ মাতাচ্ছেন, সাদা-কালোর সেই দলের ডিফেন্স সামলেছেন জহির। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৬ সাল অবধি খেলেছেন মোহামেডানে।

সাতবার লিগ জিতেছেন। অধিনায়কত্ব করেছেন চার থেকে পাঁচ বছর। ১৯৫৪ সালে তেজগাঁও ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাব দিয়ে ঢাকার ফুটবলে তার যাত্রা শুরু।

১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এই ক্লাবে খেলে পরের দুই বছর খেলেন সেন্ট্রাল প্রিন্টিং অ্যান্ড স্টেশনারিতে। পুলিশ দলে খেলেন ১৯৫৯ সালে। পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলেছেন ১৯৫৭-৬০ পর্যন্ত।’৬০ সালে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান দলের অধিনায়ক।

পাকিস্তান জাতীয় দলের জার্সিতে ১৯৬১ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি ম্যাচ খেলেন মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা) সঙ্গে। ১৯৬২ সালে খেলেছেন মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে। ওই বছর জাকার্তা এশিয়ান গেমসে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

১৯৬৪ সালে খেলেছেন চীনের পিকিংয়ে (এখন বেইজিং) দেশটির স্বাধীনতা দিবস টুর্নামেন্টে। ওই টুর্নামেন্টে তিনি ছিলেন পাকিস্তান দলে পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র খেলোয়াড়। ১৯৬৫ সালে রাশিয়ার বাকু ওয়েল মিল দলের বিপক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও করাচিতে খেলেছেন পাকিস্তান জাতীয় দলের জার্সিতে।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ফুটবলের ১৩টি ফাইনাল খেলা ফুটবলার তিনি। চারবার আগা খান গোল্ডকাপে ফাইনাল খেলেছেন। ১৯৬০ সালেই পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন করাচিতে স্বাগতিকদের হারিয়ে। এরপর চট্টগ্রামের হয়ে জিতেছিলেন বিভাগীয় শিরোপা কুমিল্লায় পেশোয়ারকে হারিয়ে।

১৯৬৪ সালে ক্রীড়ালেখক সমিতির বর্ষসেরা ফুটবলার হন। ২০০১ সালে পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। তাকে ‘মোহামেডানের জহির ভাই’ বলেই বেশি ডাকতেন সমকালীন ফুটবলাররা। জহিরুল হকের মৃত্যুতে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।