ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘বিনোদনদাতা হিসেবে সবাই আমাকে মনে রাখুক’

‘বিনোদনদাতা হিসেবে সবাই আমাকে মনে রাখুক’

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডকে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম পয়া মাঠ হিসেবে গণ্য করা হয়। অজিদের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই ভেন্যু। গতকাল শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্টকে ঘিরে আবেগের ফল্গুধারা বইছিলো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটমহলে। কিংবদন্তি ডেভিড ওয়ার্নার সিরিজ শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চলেছেন তিনি। বছরের শুরুতে একদিনের ক্রিকেট থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন তিনি। এদিন অস্ট্রেলীয় ‘ব্যাগি গ্রিন’ মাথায় চাপিয়ে শেষবারের জন্য মাঠে নামেন তিনি। মাঠের বড় পর্দায় চোখ তখন সবার। সেখানেই ফুটে উঠল ‘আউট।’ সেদিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন ডেভিড ওয়ার্নার। বিদায়ের হাসি! তাকে বিদায় করলেন যিনি, সেই বোলার সাজিদ খানই সবার আগে অভিনন্দন জানালেন। উইকেটে সঙ্গী মার্নাস লাবুশেন গিয়ে তাকে জড়ালেন আলিঙ্গনে। ছুটে গিয়ে হাত মেলালেন ও পিঠ চাপড়ে দিলেন প্রতিপক্ষের আরও অনেকে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গোটা গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে। প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের তুমুল করতালিতে প্রকম্পিত চারপাশ। সেখানে সামিল স্ত্রী, সন্তান, স্বজনরাও। ওয়ার্নার একবার চুলে হাত বুলালেন মাথা নিচু করে। এরপর হেলমেটের সামনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতীকে চুম্বন এঁকে দিলেন। হাঁটতে হাঁটতেই দুহাত প্রসারিত করে এবং ব্যাট উঁচিয়ে সবার অভিনন্দনের জবাব দিলেন। এরপর মাঠ ছেড়ে সিড়ি ভেঙে উঠে গেলেন ড্রেসিং রুমে। সাদা পোশাকে শেষবার! ধারাভাষ্যকক্ষের ইসা গুহ দারুণভাবে তুলে ধরলেন মুহূর্তটিকে, ‘গেম ওভার ফর দা গেম চেঞ্জার।’ ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারের মূল সুরই তো এটা। খেলার মোড় বদলে দিতেন তিনি। ব্যাট হাতে তার ছন্দে থাকা মানেই খেলাটা নতুন ধাপে পৌঁছে যাওয়া, প্রতিপক্ষের বোলিং ও মনোবল বিধ্বস্ত হওয়া। সেই ব্যাট আর ঝড়ে উত্তাল হবে না সাদা পোশাকে। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসেও দারুণ সব স্ট্রোক খেলে ওয়ানডের গতিতে ফিফটি ছুঁয়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বিদায়বেলা রাঙালেন ওয়ার্নার। ম্যাচ জিতে পাকিস্তানকে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করল অস্ট্রেলিয়া। সবকিছুই হলো তার ঘরের মাঠে নিজ শহরের দর্শকদের সামনে। ঝলমলে বিদায় তো একেই বলে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পদচারণা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। সেবার তার দলে ডাক পাওয়াটাই তোলপাড় তুলেছিল বেশ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই তখনও তার পা পড়েনি! লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ততদিনে ১০টি করে। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার ঘটনা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে বিরল। কেন তাকে আলাদা চোখে দেখছিলেন নির্বাচকরা, সেটি তিনি বুঝিয়ে দেন অভিষেকেই। মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠে মাখায় এনটিনি, জ্যাক ক্যালিস, ডেল স্টেইনদের গুঁড়িয়ে ৪৩ বলে ৮৯ রানের ইনিংস উপহার দেন অভিষেকেই! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাস দুয়েক পরই। তবে তখনও পর্যন্ত তাকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটারই মনে করা হতো। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। সেই তিনি পরে আলো ছড়ালেন সাদা পোশাকেও। ক্যারিয়ারের শুরুতে সব সংস্করণেই তিনি ছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। পরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে তুলে আনা হয় তাকে। সেখানে দ্বিতীয় ম্যাচেই ১২২ বলে ১৬৫ রানের ইনিংস উপহার দেন। সেটি দেখে টি-টোয়েন্টিতেও ওপেনিংয়ে নামানো হয়। এখানে তৃতীয় ম্যাচে করেন ৩৫ বলে ৬৫। ব্যস, তার পরিচয় হয়ে যায় ওপেনার। তিন সংস্করণেই ওপেনার। আগ্রাসী ওপেনার। সেই পথ ধরেই ২০১১ সালের ডিসেম্বরে তার টেস্ট অভিষেক নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথম টেস্টে ভালো কিছু করতে না পারলেও পরের ম্যাচেই উপহার দেন সেঞ্চুরি। পঞ্চম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে পার্থে খেলেন ১৫৯ বলে ১৮০ রানের ইনিংস। টেস্টেও জায়গা আপন করে নেন। ক্রমেই হয়ে ওঠেন তিন সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার ভরসা। ব্যাটিংয়ের দর্শন সব সংস্করণেই একই- আক্রমণ। নিজের মতো খেলেই তিনি ছাপ রাখেন প্রবলভাবে। প্রতিটি সংস্করণেই সফল আধুনিক ব্যাটসম্যানদের ছোট্ট তালিকায় নিজের নাম লেখান। ২৬ সেঞ্চুরিতে ৮ হাজার ৭৮৬ রান নিয়ে তিনি শেষ করলেন টেস্ট ক্যারিয়ার। টেস্ট ক্রিকেটেও যিনি পসরা মেলে ধরতেন বিনোদনের। বিদায়বেলায় তিনি নিজেও তা বললেন। লোকে কীভাবে মনে রাখবে তাকে? শেষ টেস্ট শেষে এই প্রশ্নে ওয়ার্নার বললেন, ‘রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী খেলার ধরন দিয়ে লোকের মুখে হাসি ফুটিয়েছি। আমি চাই রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদাতা হিসেবে সবাই আমাকে মনে রাখুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশা কারি যে পথে আমি খেলে এসেছি, সন্তানরাও সে পথেই আমাকে অনুসরণ করুক। সাদা বল থেকে লাল বলের ক্রিকেট, এটাই আমাদের খেলার চূড়ান্ত পর্যায়। তাই আমি টেস্ট ক্রিকেটের জন্যও তাদের পরিশ্রমী দেখতে চাই, কারণ এটিও অন্য ফরম্যাটের মতো সমান আনন্দদায়ক।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত