বাংলাদেশের সম্পদ হতে পারে এই রহস্য বোলার

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বছর পাঁচেক আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন নাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এক ম্যাচ খেলেই বিখ্যাত বনে গিয়েছিলেন অফ স্পিনার আলিস আল ইসলাম। বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই যে হ্যাটট্রিক করে বসেছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের এই তরুণ অফ স্পিনার! তার আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক ছিল না কোনো বোলারের। হোক ঘরোয়া, কি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। সেদিন রংপুর রাইডার্সের মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, ফরহাদ রেজাকে সাজঘরে পাঠিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন এই তরুণ। তবে আলিসের ‘কীর্তি’ প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারদের রিপোর্টে। রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটস ম্যাচের আম্পায়াররা সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ আনেন তার বিরুদ্ধে। পরে বোলিংয়ের ভিডিও ফুটেজ দেখে রিভিউ কমিটি আলিসকে জানায়, তার অ্যাকশনে সমস্যা নেই। এরপরও ডানহাতি এই অফ স্পিনার হঠাৎ উধাও দৃশ্যপট থেকে। ক্রিকেটের কোনো খবরে ছিল না আলিসের নাম। কারণ, হাঁটুর চোট তাকে ক্রিকেট থেকে দুরে ঠেলে দিয়েছিল। বিপিএলের দশম আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে খেলছেন এই ডানহাতি অফ স্পিনার। গত শুক্রবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা ২৭ বছর বয়সী এই স্পিনার।

আলিসকে শুধু স্পিনার বললে তাঁর সামর্থ্যরে পুরো ছবিটা পাওয়া যায় না। আলিসের মতো খেলোয়াড়দের ভারতীয় অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন শুধু ‘বোলার’ হিসেবেই আখ্যা দিতে চান। কারণ, তারা বলটাকে শুধু স্পিন করান না। সুইং, এমনকি সিমও করাতে পারেন। অজন্তা মেন্ডিস, সুনীল নারাইন, মহীশ তিকশানারা এ ঘরানার বোলার। জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজাও সম্প্রতি নিজের বোলিং পাল্টে মেন্ডিস বা নারিনদের পথে হাঁটছেন। ক্রিকেটের ভাষায় তাঁরা ‘মিস্ট্রি স্পিনার’, বাংলায় বলতে পারেন রহস্য-স্পিনার। বাংলাদেশে আলিসও সে রকমই একজন। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর মতো বোলাররা কতটা কার্যকরী হতে পারে, তা তো দেখা গেল এদিনই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৫২ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন কুমিল্লা। তাদের ৮ উইকেটে ১৩০ রানের জবাবে ২২ বল বাকি থাকতে স্রফে ৭৮ রানে গুটিয়ে গেছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট। কুমিল্লার জয়ের নায়ক ২৭ বছর বয়সী আলিস। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও ২০১৯ সালে সরাসরি বিপিএল দিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে আলিসের। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে বিপিএলের বাইরে থাকেন তিনি। এবারের আসরেও খেলার কথা ছিল না আলিসের। প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছিলেন অবিক্রিত। কিন্তু সুনিল নারাইনের ব্যস্ততা তাকে সুযোগ করে দেয় কুমিল্লায়। আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার নারাইনের আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির আগে বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা নেই। তাই ড্রাফটের পর ফাঁকা স্থানে আলিসকে নেয় বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। প্রথম ম্যাচে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই দলের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘যেহেতু সুনিল (এখনও) আসেনি, আমাদের যে বোলিং আক্রমণ আছে, তখন আমার মনে হয়েছে যে আমাদের একজন রহস্য বোলার দরকার। যে মাঝের ওভারে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা শুরুতে উইকেট নিয়ে দেবে। তাই আলিসকে নেয়া। এখন সুনিল এলে আমরা অবশ্যই আরেকটু শক্তিশালী হব।’ তিনি যোগ করেছেন, ‘আমাদের দেশে আসলে রহস্য বোলার খুব কম। ছেলেটা অনেক আগে শুরু করেছিল, অনেক ভালো করেছিল। এর মাঝে চাকিংয়ের কারণে অনেক দিন ক্রিকেট থেকে দূরে ছিল। সেজন্য ওর ফেরাটা খুব কঠিন ছিল। আমরা ওর ওপর বিশ্বাস রেখেছি। আমার জন্য একটা সুবিধা হয়েছে, ও যেহেতু আমার কাছে অনুশীলন করে, তাই ওকে কাছ থেকে দেখার সুযোগটা হয়েছে।’ কুমিল্লার কোচ আরও বলেছেন, ‘ওর বলে অনেক বৈচিত্র্য আছে। এই ধরনের বোলার আমরা অনেক দিন ধরে খুঁজছি। দেশে বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার জন্য আমাদের রহস্য বোলার দরকার। যেহেতু আমরা লেগ স্পিনারও ভালো পাচ্ছি না। তাই একজন রহস্য বোলার পেলে দেশের জন্য অনেক লাভ হবে। অবশ্যই তার অনেক বৈচিত্র্য আছে। সে যদি স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারে, আমার মনে হয়, দেশের অনেক বড় সম্পদ হতে পারে।’