অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নতুন রাজা সিনার

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

প্রথম এবং দ্বিতীয় সেটে লড়াই জমাতেই পারলেন না ইয়ানিক সিনার। দাপুটে পারফরম্যান্সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট মাথায় তোলার স্বপ্ন তখন খেলা করতে শুরু করেছে দানিল মেদভেদেভের চোখে-মুখে। তখন কে জানত, ‘অনভিজ্ঞ’ সিনার এভাবে লিখবেন প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য! অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী এবং আগে দুইবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালিস্টকে হারিয়ে পরলেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। অস্ট্রেলীয় ওপেনে হলো ইতিহাস। প্রথম ইটালিয় খেলোয়াড় হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হলেন ইয়ানিক সিনার। নারী-পুরুষ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জেতা প্রথম ইতালিয়ান সিনার। আর টেনিস ইতিহাসে কোনো গ্র্যান্ডস্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইতালির তৃতীয় পুরুষ খেলোয়াড় তিনি। এর আগে নিকোলা পিয়েত্রাঙ্গেলি দুবার ফরাসি ওপেন (১৯৫৯ ও ১৯৬০ সালে) ও আদ্রিয়ানো পানাত্তা একবার ফরাসি ওপেন (১৯৭৫ সালে) জিতেছিলেন। অর্থাৎ ৪৯ বছরের ব্যবধানে কোনো পুরুষ ইতালিয়ান খেলোয়াড় গ্র্যান্ডস্ল্যাম উঁচিয়ে ধরলেন। গত রোববার রড লেভার অ্যারেনায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পুরুষ এককের ফাইনালের ফয়সালা হয়েছে পাঁচ সেটের দীর্ঘ লড়াইয়ে। ৩-৬, ৩-৬, ৬-৪, ৬-৪ ও ৬-৩ গেমে রাশিয়ার ২৭ বছর বয়সি মেদভেদেভকে হারিয়েছেন সিনার। সেমিফাইনালে এই সিনারই হারিয়ে দিয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচকে। অন্যদিকে, আবারও একটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠে হারতে হল রাশিয়ার মেদভেদেভকে। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন মারাট সাফিন। তার পর ২০১৪ সালে স্ট্যান ওয়ারিঙ্কা। এ ছাড়া গত ২০ বছরে রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচ এবং রাফায়েল নাদালের ত্রিমূর্তির বাইরে কেউ এই ট্রফি জিততে পারেননি। সেই তালিকায় নাম লেখালেন সিনার। যেভাবে দু’টি সেট পিছিয়ে থেকেও তিনি ট্রফি জিতলেন তা মন কেড়ে নিয়েছে সকলেরই। ১৯৭৬ সালে শেষবার ইটালির কোনো খেলোয়াড় হিসাবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন আদ্রিয়ানো পানাত্তা। তার পরে সিনার জিতলেন। ফাইনালের আগে গোটা প্রতিযোগিতায় মাত্র একটি সেট হারিয়েছিলেন। সেটি জোকোভিচের কাছেই। ফাইনালে প্রথম দু’টি সেটে পিছিয়ে পড়ার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন সিনারের কোনো আশা নেই। কিন্তু পাঁচ সেটের খেলায় ওস্তাদের মার শেষ রাতেই দিলেন ইটালির সিনার। অন্যদিকে, তৃতীয় বাছাই মেদভেদেভের কাছে আরো একটা খারাপ ফাইনাল গেল। তিনি সেমিফাইনালে দু’টি সেট পিছিয়ে পড়েও জিতেছিলেন। কিন্তু ফাইনালে সুবিধা নিজের দিকে থাকা সত্ত্বেও আটকাতে পারলেন না সিনারকে। ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেও তার মধ্যে পাঁচটিতেই হারলেন তিনি। পাশাপাশি কার্লোস আলকারাজকে টপকে বিশ্বের দু’নম্বর খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগও হারালেন। তিনি প্রথম খেলোয়াড় যিনি দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও হারলেন। ২০২২ সালে রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে একই জিনিস দেখা গিয়েছিল। ম্যাচের শুরু থেকে সিনারকেই অনেক বেশি তরতাজা মনে হচ্ছিল। কেন মাত্র একটি সেট খুইয়ে তিনি ফাইনালে উঠতে পেরেছেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল তার খেলায়। কিন্তু শুরুতে মেদভেদের আক্রমণাত্মক টেনিসের কোনো জবাব ছিল না তার কাছে। তবে শক্তিশালী শট, লম্বা র‌্যালিতে টেক্কা দিচ্ছিলেন বিপক্ষকে। শেষ পর্যন্ত সেটাই বাকি তিনটি সেটে কাজে লাগে। ম্যাচ পয়েন্ট জেতার পরেই র‌্যাকেট ফেলে কোর্টে শুয়ে পড়েন সিনার। দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করতে কিছুক্ষণ পরেই দাঁড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে ছুটে যান দর্শকাসনের দিকে। সেখানেই সিনারের বক্সে বসেছিলেন দুই কোচ সিমোনে ভ্যাগনোজ্জি এবং ড্যারেন কাহিল। সিনার জড়িয়ে ধরেন দু’জনকেই। রড লেভার এরিনায় হাজির থাকা দর্শকেরা তখন হাততালি নিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন নতুন নায়ককে।