ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রথাভাঙা বোলিংয়ে জাতীয় দলের ভাবনায় আলিসও

প্রথাভাঙা বোলিংয়ে জাতীয় দলের ভাবনায় আলিসও

ডেলিভারি অ্যাকশনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত হাত কোমরের পেছনেই লুকিয়ে রাখতে অভ্যস্ত এক স্পিনারের বলে নানা রকম কারিকুরিও আছে। বিপিএলের দশম আসরের বেশ কিছু ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর দল পাওয়া আলিস আল ইসলাম সেসব দিয়ে নজরও কাড়তে পেরেছেন বেশ। গত রাতে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে নামার আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে পাঁচ ম্যাচে ৭ উইকেট পাওয়া এই স্পিনারের অভিনবত্ব নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পর নির্বাচক হাবিবুল বাশারও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন, ‘আলিস কিন্তু অফস্পিনার নয়।

অফস্পিন খুব বেশি সে করেই না। অফস্পিন না করে যা যা করেন, তাতে আলিসের মধ্যে বৈচিত্র্যময় এক স্পিনারকেই যেন খুঁজে পেয়েছেন নির্বাচক ও জাতীয় দলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ভাবনায়ও ঢুকে পড়েছেন বোলিং চাতুরীতে ব্যাটারদের ধন্দে ফেলে যেতে থাকা স্পিনার। তাঁকে বিবেচনায় রাখার কথা স্বীকার করলেন হাবিবুলও। কেন, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলছিলেন, ‘এটি বলতে পারি যে সে আমাদের বিবেচনায় আছে। কারণ আর সবার চেয়ে সে তো একটু ভিন্ন। ইন্টারেস্টিং আর কি! এ রকম তো আমাদের নেই।’

তাই বলে হাবিবুলরা এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাচ্ছেন না। বিপিএলে এখন পর্যন্ত যতটুকুই আলিসকে দেখেছেন, আরো দেখার আছে তাঁদের। তারা দেখেছেন এক কন্ডিশনের আলিসকে। এখন আরেক কন্ডিশনেও এই স্পিনারের কার্যকারিতা দেখে নিতে চান। আসরের শুরু থেকে রোদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না তেমন।

তবে এখন আবহাওয়া বদলাচ্ছে। শীতও যেমন কমে আসছে, তেমনি রোদের দেখাও মিলছে। পরিবর্তিত কন্ডিশনে আলিস কেমন করেন, তা-ও দেখে নিতে চাওয়া হাবিবুল বলছিলেন, ‘এত দিন তো সফট উইকেটে খেলা হয়েছে। এখন উইকেট ধীরে ধীরে শুকাচ্ছে। বাতাসের সহায়তাও একটু কমবে, কমে যাচ্ছে ময়েশ্চারও। এখন কেমন করে, দেখা যাক।’

গত রাতে ৪ ওভারে ২৯ রান খরচায় ঢাকার ওপেনার চতুরঙ্গ ডি সিলভার উইকেট তুলে নেয়া আলিসের বিপিএল অভিষেক হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন ঢাকা ডায়নামাইটসের এই স্পিনার। তবে সেই ম্যাচেই তার ‘দুসরা’র অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগও জানিয়েছিল রংপুর। হাত না ভেঙে এটি করা যায় না বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ রকম ডেলিভারি এখন একরকম নিষিদ্ধই। চোট-আঘাত মিলিয়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকা আলিসও তাই ফিরে আসার সময় বৈচিত্র্য নিয়েই ফিরতে চেয়েছেন। সেসবের সফল প্রয়োগ তাকে নির্বাচকদের দৃষ্টিসীমায়ও নিয়ে এসেছে ভালোভাবেই। এবার একটু দেরিতে বিপিএল খেলতে শুরু করেও হাবিবুলদের চোখে এভাবেই আলাদা হয়ে উঠেছেন আলিস, ‘ও ফ্লোটার করে (বাতাসে একটু বেশি সময় ভেসে থাকে বল, যে কারণে ব্যাটারদের লেন্থ পড়তে একটু সমস্যা হয়)। এই ডেলিভারিটা বেরিয়ে যায়। আরেকটি করে সোজা। অফস্পিন সে কম করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডানহাতি ব্যাটারের জন্য ওর বল টার্ন করে বেরিয়ে যায়।’

স্থানীয় আরেক স্পিনারকেও অবশ্য এভাবে বল বের করে নিতে দেখেছেন হাবিবুল, ‘(সিলেট স্ট্রাইকার্সের) শেষ ম্যাচে নাঈম হাসানও কিছু বল ও রকমভাবে ছেড়েছে। বেশ ভালোই টার্ন করে বেরিয়ে গেছে।’ এ রকম ডেলিভারিতে আলিসকে দক্ষ হয়ে উঠতে দেখে হাবিবুলের মনে পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কার রহস্য স্পিনার মাহিশ থিকশানার কথাও, ‘এ রকম ডেলিভারি আসলে থিকশানা শুরু করেছিল। এখন তো দুসরা করা যায় না বলে সবাই সিম আপ ডেলিভারি করার চেষ্টা করে, যেটি টার্ন করে বেরিয়ে যায়। আলিসকেও তাই আপনি রহস্য স্পিনার বলতে পারেন, যে কিনা প্রথাগত অফস্পিনার নয়।’ প্রথাভাঙা বোলিংই তার জন্য খুলে দিতে পারে জাতীয় দলের দরজাও!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত